লাইফস্টাইল

শিশু যখন অবাধ্য

ঝুমকি বসু : বাবা-মায়েরা মাঝে মাঝে বুঝে উঠতে পারেন না তাদের শিশু সন্তানেরা কেন মুখে মুখে তর্ক করে, কেনইবা শান্ত থেকে ক্রমশ অবাধ্য হয়ে ওঠে। সঠিক কারণ বুঝতে না পারার কারণে অবিভাবকেরা শিশুদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, যার ফলে হিতে বিপরীত হয়। শিশু আরো জেদি, অবাধ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু শিশুর এমন আচরণ থেকে তাকে শোধরানোর উপায় কী?  প্রকৃতিগতভাবেই শিশুদের সাধারণত দুধরনের মানসিকতা দেখা যায়। কিছু শিশু থাকে যারা বাবা-মায়ের ওপর খুব নির্ভরশীল। বাবা-মা যা বলেন, তারা তাই মেনে চলে। সোজা বাংলায় এদের বলা হয় বাধ্য ছেলেমেয়ে। কিন্তু কিছু কিছু শিশুর নিজস্বতা থাকে, সব কিছুতেই নিজের মতামত থাকে। আর তারা তাদের সেই মত ব্যক্ত করতে চায়। নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে চায়। এই স্বাধীনতায় যখন বাবা-মা হস্তক্ষেপ করেন তখনই তারা খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায়। ওরা ভাবতে শুরু করে ওদের কেউ বুঝতে পারছে না, ভালোবাসছে না। তারা হয়ে ওঠে জেদি। কীভাবে এমন পরিস্থিতি সামলাবেন সে সম্পর্কে রইল কিছু পরামর্শ- * শিশু যখন মুখে মুখে তর্ক করছে, কিছুতেই কথা শুনছে না : এক্ষেত্রে অবিভাবকদের বুঝতে হবে শিশু বড় হচ্ছে তার চারপাশের পৃথিবী দেখতে দেখতেই। তার মনেও হাজারো জিনিস জানতে চাওয়া, নানা আবেগ-অনুভুতি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো সে এখনো তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ঠিকমতো প্রয়োগ করতে শেখেনি। এক্ষেত্রে যুক্তি দিয়ে তার আবেগ-অনুভুতির প্রয়োগ শেখান। * শিশু কিছুতেই পড়তে চায় না : এমন অভিযোগ থেকে অনেক বাবা-মা শেষপর্যন্ত শিশুর গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করেন না। শিশুর গায়ে হাত তোলা কখনো তার জিদ সংশোধনের পদ্ধতি নয়। এতে জিদ আরো বেড়ে যায়। তাকে বোঝাতে হবে সে যদি লেখাপড়া না করে তাহলে তাকে আর ওর স্কুলে পড়তে দেবে না। অন্য স্কুলেও তাকে ভর্তি করবে না। সে তার স্কুলের বন্ধুদেরও হারাবে। এসব কথা বলে তার পড়ার আগ্রহ তৈরি করুন।  * শিশু সারাক্ষণ টিভি দেখছে ও বাজে কথা বলতে শিখছে : শিশুকে নিষেধ করতে গেলেই সে তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। কিন্তু টিভি দেখে এমন এমন বাজে কথা বলছে যাতে অন্যদের সামনে অপ্রস্তুত হয়ে যেতে হচ্ছে। একটা কথা মাথায় রাখবেন, টিভি দেখে যেসব খারাপ কথা বলতে শিখেছে, সে কিন্তু সেসব কথার মানে না বুঝেই বলছে। এক্ষেত্রে ওকে বোঝান ও যে কথাটা বলছে সেটা টিভির নেতিবাচক লোকটার বলা কথা। টিভিতেও যেমন নেতিবাচক লোকটাকে সবাই ঘৃণা করে, ও সেসব কথা বললে ওকেও সবাই ঘৃণা করবে। * শিশু রেগে গিয়ে তুই-তোকারি করছে : এমন অভিযোগের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, এই তুই-তোকারি ব্যাপারটা কিন্তু ওরা বাবা-মা কিংবা আশেপাশের পরিবেশ থেকেই রপ্ত করে। অনেক সময় দেখা যায় শিশু হয়তো বাবা-মাকে আদর করে তুই সম্বোধন করছে, তখন তুই সম্বোধন শুনে তারা হাসছেন। কিন্তু যখনই রেগে গিয়ে শিশু তুই বলছে তখনই তারা তা মানতে পারছেন না। বড়দের ব্যবহারিক এই অসামঞ্জস্য শিশুর মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। যার থেকেই তারা অভব্য, অবাধ্য হয়ে পড়ে। তাই এমন বিপরীত ব্যবহার শিশুর সঙ্গে করবেন না। * শিশু কাজের লোকের সঙ্গে বাজে আচরণ করছে : কাজের লোকের কাছ থেকেও অনেক কর্মরত দম্পতি অভিযোগ পেয়ে থাকেন, শিশু কাজের লোকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এসব ক্ষেত্রে শুধু কাজের লোকের কথা শুনেই কিন্তু শিশুকে অযথা বকাবকি করা ঠিক নয়। শিশুর থেকেও জানতে হবে কেন সে এমন আচরণ করছে। তার কথা না শুনেই তাকে বকাঝকা করলে তার রাগ-অভিমানগুলো বাড়তে থাকবে এবং সে আরো অবাধ্য হয়ে উঠবে। * অন্যের জিনিস দেখে সেটা কিনে দেওয়ার বায়না করে : অনেক শিশুই এমনটি করে থাকে। শিশু যখন বায়না করে তখন তাকে মুখের ওপর কিনে দেব না বলবেন না। কারণ ওরা সবসময় নিজের ইচ্ছার স্বীকৃতি পেতে চায়। ওকে বুঝিয়ে বলুন, ওকে পরে কিনে দেবেন। দেখবেন, দুদিন বাদেই ও ভুলে গেছে ওর আবদার। শিশু একটা মাটির তাল। তাকে যেভাবে গড়বেন, সে ঠিক সেই আকারই ধারণ করবে। আর তাকে সেভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব, কর্তব্য বাবা-মায়ের। শিশুকে শিশুর মতো করে বুঝুন। তার মতো করে মিশুন। তার আবেগ-অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন। তখন দেখবেন কোনো সমস্যাই আর কঠিন থাকবে না। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ জানুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ