লাইফস্টাইল

ঢাকায় নতুনদের পদে পদে বিড়ম্বনা

খালেদ সাইফুল্লাহ : সাফিন আহমেদ, ঢাকায় এসেছেন একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। মগবাজার থেকে যাবেন গুলশান। ইতিপূর্বে তার ঢাকায় আসার অভিজ্ঞতা নেই। গুগল ম্যাপে পথের দূরত্ব দেখে ভাবলেন যেতে হয়তো ৪৫ মিনিটের বেশি লাগবে না। তবুও নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পূর্বেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন। কিন্তু তার চাকরির স্বপ্ন পথেই জলাঞ্জলি দিতে হলো জ্যামের কারণে। ঢাকা শহরে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন জীবনের নানা প্রয়োজনে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মানুষ। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন এই নগরীতে বাড়ছে আগত মানুষের সংখ্যা। এদের মধ্যে কেউ আসছেন পড়ালেখার উদ্দেশ্যে, কেউ চাকরির সন্ধানে, কেউ চিকিৎসা পেতে, আবার অনেকেই আসছেন কাজ খুঁজতে। তবে সাফিন আহমেদের মতো যারা ঢাকায় নতুন তাদের কিছু সাধারণ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। শাহনাজ সম্পা পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে। এক বছর আগে তিনি প্রথম ঢাকায় এসেছিলেন ভর্তি কোচিং করতে। ছিলেন ফার্মগেটের একটি ছাত্রী হোস্টেলে। কিন্তু হোস্টেলের পানি ও খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। উপরন্তু ছারপোকার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে ১৫ দিনের মাথায় তাকে ঢাকা ছাড়তে হয়। এমন অভিজ্ঞতা ঢাকা শহরের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। কিন্তু সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেই তাদের এই শহরে টিকে থাকতে হয়। পরিস্থিতি মেনে নেওয়া ছাড়া করার থাকে না কিছু। ‘আমি যখন প্রথম ঢাকা আসি তখন ঢাকার পথ-ঘাট, অলিগলি কিছুই চিনি না। সামান্য একটু পথ যাওয়ার জন্যও রিকশায় উঠতে হয়েছে। এভাবে শুরুর দিকে হাজার হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে শুধু রিকশা ভাড়া দিতে গিয়ে।’ বলছিলেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রহমান গাজী। ঢাকা শহরে নতুন আগন্তুকদের মধ্যে পথ না-চেনা একটা বড় সমস্যা। প্রায়ই বিভিন্ন জনকে দেখা যায় এক স্থানে যেতে গিয়ে উল্টা পথে অন্য কোথাও পৌঁছে গেছেন। পথ চিনতে তারা সাহায্য নেন ট্রাফিক পুলিশ, পথচারী কিংবা দোকানীদের কাছ থেকে। আবার যাকে তাকে জিজ্ঞেসও করতে পারেন না। লোকমুখে শোনা নির্দেশনায় প্রায়ই ভুল ঠিকানায় চলে যান তারা। ফলে সময়, শ্রম এবং অর্থ সবকিছুরই অপচয় হয়। এক্ষেত্রে শহরের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত পথনির্দেশকের প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ভুল করে চলে গেছেন আজিমপুর। তারপর সেখানকার লোকজনের নির্দেশনায় শাহবাগ পর্যন্ত আসতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এমন অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন বয়োঃবৃদ্ধ জব্বার বিশ্বাস। আবাসন সমস্যাও নতুনদের কাছে অন্যতম সমস্যা। ঢাকাতে এসেই থাকার জায়গা খুঁজে পেতে খানিকটা বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। টু-লেট দেখে ফোন দেওয়া এবং একের পর এক বাসা দেখে পছন্দ করাটা বেশ কঠিন হয় অনভিজ্ঞদের জন্য। নারীদের জন্য এটি আরো বেশি কঠিন। ঢাকা শহরে নারীদের জন্য মেসের সংখ্যা খুবই কম। ফলে ছাত্রী বা কর্মজীবি মহিলাদের অনেকেই থাকেন সাবলেট বাসায়। এসব জায়গাতে তাদের থাকতে হয় হাজারো প্রতিবন্ধকতা আর নিয়মের বেড়াজালে। শুরুর দিকে বাড়িওয়ালার স্ব-প্রবর্তিত নিয়ম মেনে চলতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠেন তারা। ব্যাচেলর তরুণদের তো বাসা ভাড়া পাওয়াই সমস্যা। এমন অসংখ্য সমস্যা মোকাবেলা করে প্রতিদিন মানুষ ছুটে চলেছে গন্তব্যের পথে। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে ব্যস্ত সবাই। জীবন জীবিকার তাগিদে এই শহরে মানুষের সংগ্রাম চলছে অবিরত। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জুন ২০১৮/ফিরোজ/তারা