লাইফস্টাইল

শিশু রাতভর কাঁদে, কী করবেন এসময়?

আহমেদ শরীফ : শিশুদের কান্না থামানো বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যারা নতুন বাবা-মা হয়েছেন, তাদের জন্য এ এক কঠিন পরিস্থিতি। নবজাতকরা রাতের বেলা যখন গলা ছেড়ে কান্না শুরু করে তখন তাকে সামলানো সত্যি কঠিন। নবজাতকরা সাধারণত বেশি ঘুমায়। যদি দিনের বেলায় আপনার শিশু বেশি ঘুমায়, তাহলে রাতে সে জেগে থাকবে। এরই মাঝে কান্না জুড়ে দিতে পারে সে। শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কিছু কারণে রাতে অবিরত কান্না করে নবজাতক। এক্ষেত্রে তিন মাস পর্যন্ত রাতে কান্না করতে পারে শিশু। অনেক শিশু ছয় মাস পর্যন্ত রাতে জেগে থাকে, কান্না করে। আর শিশুরা যেহেতু কথা বলতে পারে না, তাই কান্নার মাধ্যমেই নিজের সমস্যার বার্তা দেয় তারা। মূলত যেসব কারণে শিশুরা এভাবে কাঁদে, তা জানার পাশাপাশি সে সময় কী করা উচিত জানি চলুন- * ক্ষুধার কারণে : প্রতি ঘন্টা পর পর নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানো জরুরি। তার পাকস্থলী যেহেতু ছোট, তাই নিয়মিত বিরতিতে তাকে দুধ পান করাতে হয়। বেশিরভাগ শিশু রাতে ক্ষুধার কারণেই কাঁদে। যা করবেন : ঘড়ি দেখে শিশুকে দুধ পান করানো জরুরি। হয়তো কয়েক ঘন্টা ধরে ঘুমিয়ে থাকার কারণে ক্ষুধা পেয়েছে তার। সে কারণে সে কেঁদে জানাচ্ছে তার খিদে লেগেছে। * ক্ষুধা-গ্যাস-কান্না চক্র : ক্ষুধার কারণে কেঁদে উঠা শিশু প্রচন্ড ক্ষুধার্ত থাকে বলে দুধ পানের সময় বাতাসও পেটে নেয় অনেক। এতে করে তার পেটে গ্যাস তৈরি হয়। এতে করে শিশুর মাঝে ক্ষুধা-গ্যাস-কান্না এমন এক চক্র তৈরি হয়। যা করবেন : আপনার শিশু অতিমাত্রায় ক্ষুধার্ত হওয়ার আগেই তাকে দুধ পান করান। ক্ষুধার কারণে শিশু কান্নার আগে ঠোঁট চেটে, নিজের হাত কামড়ে ক্ষুধা মেটানোর চেষ্টা করে। এ রকম কিছু দেখলেই তাকে দুধ পান করান দ্রুত। শিশুকে দুধ পান করানোর সময় তার পিঠে হালকা চাপড় দেয়া, একইভাবে দুধ পানের পর পিঠ চাপড়ালে শিশুর পেটে গ্যাস কমে তার কান্না বন্ধ হবে। * শরীর খারাপ  হলে : শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেহেতু খুব কম থাকে তাই সে দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে কারণে শিশু অসুস্থ হলে নিয়মিত স্বরের চেয়ে ভিন্ন স্বরে কান্না করে। তা হতে পারে অনেক উঁচু স্বরে বা নিচু স্বরে কান্না। যা করবেন : আপনার শিশুকে আপনি সবচেয়ে ভালো বুঝবেন। তাই  বিষয়টা ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে। শিশুর অসুস্থতা টের পেলে দ্রুত তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। অন্যান্য কারণ : নবজাতকরা সাধারণত পেটে গ্যাস হলে তীব্র ব্যথা অনুভব করে। একে কোলিক বা শূল বেদনা বলে। সে কারণে শিশুরা অনেক কান্না করে। তবে এছাড়াও আরো কিছু কারণে রাতে কান্না করতে পারে শিশু। যেমন- * শিশুর পরা ডায়াপার বা কাপড় ভিজে গেলে, সে কান্না করে আপনাকে জানিয়ে দেবে যে তার ওই ভেজা ডায়াপার/কাপড় পাল্টানো হোক। * শিশুর আঙুল কোনো কাপড়, কম্বল বা কাঁথার সঙ্গে আটকে থাকলে সে কান্না করতে পারে। * আপনার শিশু অতিরিক্ত গরম ও ঠান্ডা সহ্য করতে না পারলে কান্না করবে। * টিকা দেয়ার পর অথবা ঠান্ডা লাগা, কানে ইনফেকশন সহ কোনো অসুস্থতার কারণেও শিশু রাতে অনবরত কাঁদে। * হয়তো আপনার বাসায় প্রচুর মানুষ এসেছে। তারা একে একে শিশুকে কোলে তুলে নিয়েছে, এরকম পরিস্থিতিতে শিশু অভ্যস্ত নয় বলে সে কান্না করতে পারে। যা করবেন : শিশু প্রস্রাব-পায়খানা করার পরই তার ডায়াপার দ্রুত পাল্টে ফেলতে হবে। শিশুকে অতিরিক্ত জামা কাপড় পরালে যেহেতু সে গরম সহ্য করতে পারে না, তাই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কাপড় না পরানোই ভালো। যে রুমে শিশু থাকে, সে রুমটি বেশি ঠান্ডা বা বেশি গরম যেন না হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্তত ৪০ শতাংশ নবজাতক কোলিক বা পেটে ব্যথা জনিত সমস্যায় ভোগে। শিশুর কান্না দ্রুত বন্ধ করতে শিশু বিশেষজ্ঞরা শব্দ সৃষ্টিকারী সাদা রঙের কোনো মেশিন, যেমন- ফ্যান বা হেয়ার ড্রায়ারের দিকে তার মনোযোগ আকর্ষণের কথাও বলেন। তথ্যসূত্র: এনফ্যামিল, বেবি সেন্টার রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ ডিসেম্বর ২০১৮/ফিরোজ