লাইফস্টাইল

সফল মানুষদের ১৬ অভ্যাস (প্রথম পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল : বেশিরভাগ সফলতার সঙ্গে যে বিষয়টি জড়িত তা হলো নিয়মানুবর্তিতা। সফল হতে হলে সঠিক কোনো কাজ বারবার করতে হয়, তা যতই কঠিন হোক না কেন। আপনার সফলতার সহায়ক হতে পারে কিছু আনুষঙ্গিক বিষয়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা শরীর চর্চার কথা বলতে পারি। এ অভ্যাসটি উচ্চ সফল মানুষদেরকে প্রাণবন্ত, সৃজনশীল ও মনোযোগী করেছে বলে তারা স্বীকার করেছেন। নিয়মিত শরীর চর্চা নিয়মানুবর্তিতার পথে নিয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় বা অভ্যাসও সঠিক ট্র্যাকে থাকতে অনুপ্রেরণা যোগায়। সফল মানুষদের ১৬ অভ্যাস নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব। * এক্সট্রিম স্পোর্টসের মাধ্যমে স্ট্রেস দূর করেন ‘আমি সময়কে তিনভাগে বন্টন করি। প্রথমত আমি অ্যাড্রিনালিন স্পোর্ট করি, অথবা উপরের দিকে সাইকেল চালাই কিংবা অ্যাথলেটিক স্কিং করি। এসব কাজে অপ্রত্যাশিত বিপত্তি সামলাতে মনোযোগ ও দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। এ কাজগুলো মানসিক চাপ (স্ট্রেস) দূর করে ও শারীরিক ট্রেনিংয়ের সুফল দেয়। আমার দ্বিতীয় শখ হলো কার্ডিও, রাস্তায় সাইকেল চালাই অথবা পর্বতে আরোহণ করি। এটি প্রায় ধ্যানের মতো- শরীর জানে কি করতে হবে এবং মনের দুশ্চিন্তাগুলোকে গভীর শ্বাস, শিথিলতা ও বিশুদ্ধ আনন্দ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যায়। সবশেষ আমি রেইকি ইয়োগা (এক ধরনের যোগব্যায়াম) চর্চা করি, এর উদ্দেশ্য হলো নিজেকে দক্ষ করে তোলা। সম্প্রতি ভারত ভ্রমণে গিয়ে আমি এ যোগব্যায়ামে অণুপ্রাণিত হই। এ সকল কার্যক্রম স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করে আমাকে সফল হওয়ার জন্য প্রস্তুত করে ও কাজের মান বৃদ্ধি করে।’ - ভেলেরিয়ানো অ্যান্থনিয়লি, নামকরা হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লুনগার্নো কালেকশনের সিইও * দিনের পরিকল্পনা করেন ‘আমি আমার দৈনন্দিন রুটিনে খুব আসক্ত। আমি দিনের প্রত্যেকটা মুহূর্তকে গুরুত্ব দিই, আমি চেষ্টা করি যে আমার ব্যয়কৃত সময়গুলো যেন আমাকে উন্নয়নের পথে রাখে। আমি অপ্রয়োজনীয় ই-মেইলের উত্তর দিতে চাই না কিংবা বিষণ্ন ভাব নিয়ে বসে থাকতে চাই না। আমি শুধুমাত্র মিটিংয়ের জন্যই শিডিউল করি না, প্রজেক্ট বা প্রকল্প নিয়ে কাজ করি, অপ্রয়োজনীয় ই-মেইল মুছে ফেলি, চিন্তা করি ও মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করি। যতই কাজ থাকুক না কেন, আমার সন্তানদের কথাও মাথায় রাখি। কোন সময়ে কি করা উচিত তার নির্দেশক হলো আমার পরিকল্পনা।’ - নিকোলে স্মিথ, ভেকেশন ফটোগ্রাফারদের গ্লোবাল মার্কেটপ্লেস ফ্লাইটোগ্রাফারের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও * ১০ মিনিটের ধ্যানে দিন শুরু করেন ‘প্রতি সকালে এককাপ কফি নিয়ে আমি হাঁটি, তারপর আমার কোলাহলমুক্ত লিভিং রুমে ১০ মিনিট ধ্যান করি। আমি লক্ষ্য নিয়ে দিন শুরু করতে পছন্দ করি, ধ্যান লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করে আমার ব্যবসা, ব্যক্তিগত জীবন, স্বাস্থ্য ও সম্পর্ককে সমৃদ্ধ করে। মন হলো একটি শক্তিশালী যন্ত্র, যখন আপনি সীমিত লক্ষ্যের ওপর মনের শক্তির প্রভাব খাটাবেন তখন বিস্ময়কর কিছু ঘটতে শুরু করবে। মাইকেল জর্ডান বলেছিলেন, ‘যদি আপনি বড় কিছু অর্জন করতে চান, তাহলে আগে অবশ্যই নিজের মনকে বিশ্বাস করাতে হবে যে এটা আপনার দ্বারা সম্ভব।’ কিছু মেধাবী ও অনুপ্রেরণাদায়ক লোকের সঙ্গে আমার প্রিয় কাজ করতে পারছি বলে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি ও স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি।’ - জে রবার্টস, নামকরা হসপিটালিটি ও টেক কোম্পানি ডমিও’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও * পাঠ করতে ভুলেন না ‘আমি রহস্য বইয়ের দারুণ ভক্ত। শৈশব থেকেই রহস্যোপন্যাস ও রহস্যময় ঘটনার প্রতি আমার ঝোঁক ছিল। বর্তমানে আমি ঐতিহাসিক জীবনী ও নিত্যদিনকার রাজনৈতিক খবরাখবরও পড়ি। রহস্যোপন্যাস বা রহস্যজনক ঘটনা পাঠে নতুন বা অপরিচিত পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা অর্জিত হয়, ঐতিহাসিক পুস্তক পাঠে ইতিহাসের বিভিন্ন দিক বা ঘটনা জানতে পারি এবং রাজনৈতিক কলাম আমাকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করে।’ - জিন চার্লস পেরিনো, বিজনেস-ক্লাস বুটিক এয়ারলাইন লা কম্পাগনি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিসিও * কোলাহল থেকে দূরে থাকেন ‘আজকের বিশ্বের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো জীবনের সমস্ত কোলাহল থেকে নিজেকে দূরে রাখা। কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে আমি কোলাহল-গোপনকারী হেডফোন ব্যবহার করি এবং লিরিকযুক্ত মিউজিক শুনি না। কোলাহল থেকে মুক্ত হলে আমার মনোযোগ বেড়ে যায় এবং আরো বেশি করিৎকর্মা হয়ে উঠি।’ - প্যাট্রিক ভর্মিটাগ, ইন্টার‍্যাক্টিভ ম্যাপিং টেকনোলজি ও ডাটা ভিজুয়্যালাইজেশন সফটওয়্যার কোম্পানি এনগ্রেইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা * দিনের প্রধান করণীয় ঠিক করতে সকালে একাকী সময় কাটান ‘দিনে কোন কাজটিকে প্রাধান্য দেব তা ঠিক করতে আমি সবসময় সকালে একাকী সময় কাটাই, যেমন- কুকুরের সঙ্গে হাঁটা অথবা একাকী সকালের নাস্তা করা। এর ফলে দিনের প্রধান করণীয় নির্ধারণ করা সহজ হয়। আমি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সুবিধাকে প্রাধান্য দিই না, আমার দলের কথাও বিবেচনায় রাখি, একারণে আমি আশ্বস্ত হতে পারি যে আমাদের কাজ ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন হবে। অফিসে এসে দলের প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করি, এমনটা করলে তারা উচ্চমাত্রার উদ্দীপনা নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। এটিকে ব্যবসার মধ্যে মনে করি না, ব্যবসার ওপরে স্থান দিই। কর্মীদেরকে যথাযথ প্রণোদনা সবসময় আমার সফলতার চাবিকাঠি, তাদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা আমার প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বমানের বানিয়েছে।’ - জিম স্কট, হেম্প সিবিডি এক্সট্রাক্ট কোম্পানি রিসেপট্রা ন্যাচারালসের সভাপতি ও সিইও * মানসিক প্রশান্তির জন্য কিছু পড়েন ‘আমার দিনকে সর্বোচ্চ ফলপ্রসূ করতে আমি সকালে ভারাসাম্যপূর্ণ ব্রেকফাস্ট করি ও কাজের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন কিছু পড়ি। এটি আমার মনকে প্রশান্ত করতে সাহায্য করে। যখন আমি কাজের উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়ি, তখন নিজেকে উদ্দীপ্ত আবিষ্কার করি।’ - কার্লা ফ্রিদে, পেমেন্ট অটোমেশন সফটওয়্যার কোম্পানি এনভয়েসপে’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও * অফিসে আসা-যাওয়ার সময়টার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেন ‘আমি পরিকল্পনা বা চিন্তার মাধ্যমে অফিসে আসা-যাওয়ার সময়টাকে সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করি। মনকে প্রসারিত করতে অথবা ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্যা ঝেড়ে ফেলতে আমি সপ্তাহের কিছুদিন জগিং বা সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাই। গবেষণায় পাওয়া গেছে, এক্সারসাইজ স্মৃতিশক্তি বা জ্ঞানার্জনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমি লক্ষ্য করেছি যে, এক্সারসাইজ সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনায় সাহায্য করে। প্রায়সময় অফিসে আসা-যাওয়ার পথে যে ধারণাগুলো মাথায় আসে তা কোম্পানির অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারে।’ - লিসা শিল্ডস, ক্লাউড ন্যাটিভ এপিআই অর্চেস্ট্রেশন প্ল্যাটফর্ম এফআই ডটস্পানের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। (আগামী পর্বে সমাপ্য) তথ্যসূত্র : আইএনসি পড়ুন : *

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ