লাইফস্টাইল

সৎ বাবা-মাকে যে কথাগুলো বলবেন না

সৎ বাবা-মা সন্তানের প্রতি যত ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করুন না কেন, কিছু লোক সুযোগ পেলেই অশোভনীয় কথা শুনিয়ে দেন। কেবলমাত্র বাইরের লোক নয়, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও তারা কটু কথা শুনে থাকেন। কিন্তু একটি সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে আমাদের অবান্তর বা অসংযত কথা না বলার চেষ্টা করতে হবে। সৎ বাবা-মাকে বলা উচিত নয় এমন ১২টি কথা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব।

* এই সম্পর্ক চুক্তি ছাড়া কিছু নয়

প্রকৃতিগতভাবে সৎ বাবা-মা চাপে থাকেন। এ সময় সন্তান হিসেবে আপনার অসংযত কথা তার মানসিক অবস্থা আরো খারাপ করে দিতে পারে। সৎ বাবা-মাকে যা বলবেন না, তার একটি নমুনা হলো: ‘মা/বাবার অধিকার দেখাতে আসবেন না। আপনি জানেন যে এ সম্পর্ক একটা চুক্তি ছাড়া কিছুই নয়। আমাকে আমার মতো চলতে দিন। আমার ব্যাপারে নাক গলাবেন না। আপনার সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্ক নেই। আপনার সুখ-দুঃখের কথা অথবা সমস্যাও আমাকে জানানোর প্রয়োজন নেই। আমি আমার আমার মতো বাঁচি, আপনি আপনার মতো বাঁচেন।’ 

* সৎ ছেলেমেয়েকে নিজের সন্তানের মতো দেখা উচিত

অনেক সৎ মা-বাবা সৎ ছেলেমেয়ে ও নিজের সন্তানের মধ্যে পার্থক্য করেন না। কিন্তু তারপরও তাদের লোকজনের কাছ থেকে বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয়। যেমন- সৎ ছেলেমেয়েকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসা উচিত। এ ধরনের কথা সৎ মা-বাবাকে এটা ইঙ্গিত দেয় যে তিনি তার সৎ ছেলেমেয়ের প্রতি আন্তরিক নন অথবা তিনি নিজের সন্তান ও সৎ ছেলেমেয়ের মধ্যে বৈষম্য করেন। আপনার এ ধরনের কথা বিশুদ্ধ মনের মানুষটিকে দোষারোপ করার শামিল। ফলে তিনি অপরাধবোধে ভুগতে পারেন। আপনাকে মনে রাখতে হবে, জোর করে কারো মনে সৎ সন্তানের প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। একজন লোক তার সৎ সন্তানকে পছন্দ নাও করতে পারেন, বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করার কিছু নেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ধীরে ধীরে সৎ বাবা-মা ও সৎ সন্তানের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠছে। একটি ঘনিষ্ঠ ও অর্থবোধক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগে।

* আপনাকে পারিবারিক ফটোগ্রাফে চাই না

নিউ ইয়র্ক সিটির অধিবাসী লিসা লক্ষ্য করেছেন, তার নিজের কন্যা সৎ বাবাকে (লিসার বর্তমান স্বামী) ফ্যামিলি ফটোগ্রাফে রাখতে চাইছে না। এ ধরনের স্টেটমেন্ট কেবলমাত্র ছোটদের কাছ থেকে নয়, পরিবারের বড় সদস্যদের কাছ থেকেও আসতে পারে। এটি সৎ বাবা-মাকে থার্ড হুইল ফিলিং বা পরিবারে নিজেকে অবাঞ্ছিত ভাবার অনুভূতি দেয়। এ অনুভূতি থেকে মনে কষ্টের ডালপালা ছড়িয়ে পড়ে। সৎ বাবা-মাকে পারিবারিক ফটোগ্রাফে রাখতে না চাওয়ার মানে হলো পরিবারে এমন একজন রয়েছে যার সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক নেই। এ ধরনের মন্তব্য করবেন না। সৎ মা-বাবাকেও পারিবারিক ছবিতে রাখুন এবং মন বড় করতে চেষ্টা করুন।

* আপনার পাঁচটা সন্তান রয়েছে, চারটি নয়

যদি কারো চারটি ঔরসজাত সন্তান এবং একটি সৎ সন্তান থাকে, তাহলে তাকে এটা বলবেন না যে- তার পাঁচটা সন্তান রয়েছে। কারণ বিষয়টি অনেকেই সহজভাবে নিতে পারেন না। পূর্বের ফ্যামিলি ডাইনামিকের প্রতি সম্মান রেখে এ ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকা উচিত। এমনভাবে কথা বলবেন না যেখানে মনে হতে পারে যে সৎ সন্তানকে সৎ বাবা-মার জৈবিক ছেলেমেয়ে হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। এর পরিবর্তে এভাবে বলুন: আপনার চারটি সন্তান রয়েছে এবং আপনার স্বামীর একটা, তাই না?

* আপনি আসল মা-বাবা নন

সৎ সন্তানের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একজন সৎ মা-বাবা শেষ পর্যন্ত আবেগ কমিয়ে ফেলেন।কিন্তু বিষয়টি লক্ষ্য করে তাকে কটুক্তি করা উচিত নয়। তাকে কখনও বলা উচিত নয়- আপনি তো আর আসল মা-বাবা নন। এ ধরনের শব্দগুচ্ছ তার মনকে আহত করতে পারে। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রেও এ ধরনের কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন- আপনি কোনো সৎ মায়ের পরিচয় দিতে গেলে এটা বলবেন না যে, তিনি অমুক ছেলেমেয়ের সৎ মা। বরং বলুন, তিনি আপনার বন্ধুর স্ত্রী। এটি হলো সত্য ও শোভনীয় মন্তব্য যা বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না অথবা মনে কষ্ট দেবে না।

* আমার মেয়ের সঙ্গে অশ্লীল কিছু করার চেষ্টা করবে না

এটা অস্বাভাবিক নয় যে, নতুন সৎ বাবা বা মা প্রথম প্রথম সৎ ছেলেমেয়ের প্রতি একটু বাড়তি আবেগ দেখান। কিন্তু উভয়ের মধ্যকার সম্পর্ক মজবুত করার জন্য শুরুতেই অতি আবেগে তাড়িত হবেন না। সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য সৎ মা-বাবাকে একটু ধীরগতিতে এগুতে হবে। সৎ সন্তানের জেন্ডার ও ইমোশনের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ অনেক নারী তার জৈবিক কন্যার প্রতি বর্তমান স্বামীর স্নেহ-ভালোবাসাকে ভালো চোখে দেখেন না। তারা এমনটাও বলতে পারেন যে, আমার মেয়ের সঙ্গে অসভ্যতা করার চেষ্টা করবে না। কিন্তু অনেক ফ্যামিলি থেরাপিস্ট এমন কথা না বলার পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ অন্যের মনে কি আছে তা আপনি জানেন না। সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও সৎ পরিবারের সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে দুই থেকে চার বছর সময় লাগে।

(আগামী পর্বে  সমাপ্য

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন : ঢাকা/ফিরোজ