লাইফস্টাইল

১০০ বছর বাঁচতে যা করবেন (শেষ পর্ব)

শতবছর বাঁচতে কে না চায়? কিন্তু চাইলেই তো আর হবে না, ইচ্ছে পূরণের জন্য সে অনুসারে কাজ করাও চাই। শতবর্ষী ক্লাবে ঢুকতে আপনাকে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের ওপর থাকতে হবে, কারণ অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসে বিভিন্ন মারাত্মক রোগের উদ্ভব হতে পারে, যেমন- ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ও অন্যান্য। এসব রোগ জীবনের আয়ু কমিয়ে দিতে পারে অথবা অকালে প্রাণ হারানোর কারণ হতে পারে। শতবর্ষী ক্লাবে পৌঁছার জন্য কিছু সাধারণ নিয়মকানুন নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

সঠিক ফ্যাট খান : জীবনের আয়ু বৃদ্ধি করার অন্যতম উপায় হলো ডায়েট থেকে অস্বাস্থ্যকর ট্রানস ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট কমিয়ে ফেলা। একটি সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, আপনার ডায়েটে ২ শতাংশ ট্রানস ফ্যাটের বৃদ্ধি অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ১৬ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে আপনার ডায়েটে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের ৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ৮ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। এসব ধমনী-প্রতিবন্ধক ফ্যাটের পরিমাণ কমিয়ে স্বাস্থ্যকর পলি ও মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট খেলে সেঞ্চুরি ক্লাবে পৌঁছার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

ডায়েটে বাদাম রাখুন : সেঞ্চুরি ক্লাবে ঢোকার আরেকটি উপায় হলো প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম খাওয়া। ১২০,০০০ প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব লোক প্রতিদিন বাদাম খেয়েছিল পরবর্তী ৩০ বছরে তাদের মধ্যে মৃত্যুহার যারা প্রতিদিন বাদাম খাননি তাদের তুলনায় ২০ শতাংশ কম ছিল। বাদামে উচ্চ পরিমাণে ফ্যাট রয়েছে, কিন্তু দুশ্চিন্তা করবেন না, অধিকাংশ ফ্যাটই হলো স্বাস্থ্যকর আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এছাড়া বাদামে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন ও ফাইবারও রয়েছে। কোলেস্টেরল ও ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যেও আপনার ডায়েটে বাদাম অন্তর্ভুক্তির কথা বিবেচনা করতে পারেন।

ঘনিষ্ঠ বন্ধু বানান : হ্যাঁ, পারিবারিক বন্ধন গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বয়স্ককালে ভালো বন্ধু আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আবেগীয় ঘটনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে পিতামাতা, ভাইবোন ও সন্তান-সন্ততির চেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা বেশি কাজে আসতে পারে। ভালো বন্ধু বিপদ বা সমস্যায় গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে উপকার করে থাকেন। তারা বয়স্ককালের একাকীত্ব দূর করে মনকে প্রফুল্ল রাখতে পারে- একজন মানুষের মন উদ্দীপ্ত থাকলে তার ইমিউন সিস্টেম সহজে ভেঙে পড়ে না। মজবুত বন্ধুত্বের সঙ্গে তুলনামূলক ভালো স্বাস্থ্য ও অধিক সুখের যোগসূত্র রয়েছে- এদের উভয়টাই ১০০ বছরে পা রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রতিদিন হাঁটুন : যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের সরকার জনসাধারণকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মডারেট ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পরামর্শ দিচ্ছে। একটি মডারেট ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি হলো হাঁটা। এ ধরনের পরিমিত শারীরিক সক্রিয়তা আপনার অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে ফেলবে। এমনকি আপনি নিয়মিত ভারী বা শ্রমসাধ্য ব্যায়াম করলেও বিশেষজ্ঞরা পরিমিত শারীরিক সক্রিয়তার সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন, যেমন- হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে দোকানে/বাজারে যাওয়া, ঘর পরিষ্কার করা ও বাগানের পরিচর্যা করা। এসবকিছু আপনাকে সেঞ্চুরি ক্লাবের সদস্য বানাতে সাহায্য করতে পারে।

* সামাজিক যোগাযোগ করুন : কেবলমাত্র বন্ধুবান্ধব থাকাই যথেষ্ট নয়, আয়ুবর্ধক উপকারিতা পেতে হলে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও করতে হবে। কিন্তু এর মানে শুধুমাত্র এটা নয় যে ফেসবুকে তাদের ছবিতে লাইক দেবেন অথবা কমেন্ট করবেন, সরাসরি দেখাসাক্ষাতও করতে হবে। যেসব লোকেরা শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখেন তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি সেসব লোকের তুলনায় ৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে যারা এ ধরনের সম্পর্কে জড়িত থাকেন না।

বাগান করুন : বাগান করা হলো আরেকটি কার্যক্রম যা আপনার বয়সকে ১০০ বছরের মাইলফলক স্পর্শ করতে সাহায্য করতে পারে। বাগানে বীজ বপন বা চারা রোপণ, বাগানের পরিচর্যা ও ফসল উৎপাদনে প্রচুর শারীরিক শ্রম দিতে হয়, যার মানে হলো বাগান করলে শরীর সক্রিয় থাকে। সক্রিয় শরীরে রোগজীবাণু তেমন সুবিধে করতে পারে না, যার ফলে রোগমুক্ত থাকাতে আপনার আয়ু বেড়ে যাবে। এছাড়া বাগানে উৎপাদিত শাকসবজি স্বাস্থ্যকর আয়ুবর্ধক ডায়েটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে।

অপ্রক্রিয়াজাত শস্য খান : পাউরুটি, পাস্তা, ভাত ও সিরিয়াল এর পরিবর্তে অপ্রক্রিয়াজাত শস্যে বেছে নেওয়ার প্রচুর ভালো কারণ রয়েছে। অপ্রক্রিয়াজাত বা সম্পূর্ণ শস্যে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফাইবার থাকে, যা আপনাকে দীর্ঘসময় পেটভরা অনুভূতি দেবে ও ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে। বেশি পরিমাণে অপ্রক্রিয়াজাত শস্য খেয়ে নিজেকে শতবর্ষী করতে পারেন। একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব লোকেরা দিনে অন্তত একবেলা অপ্রক্রিয়াজাত শস্য খেয়েছিল তাদের গ্রুপে অকাল মৃত্যুর হার অপ্রক্রিয়াজাত শস্য না খাওয়া গ্রুপের তুলনায় ২০ শতাংশ কম ছিল।

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন : অতি ওজন অথবা স্থূলতা আপনাকে এমন কিছু রোগের ঝুঁকিতে রাখতে পারে যা ১০০ বছর বাঁচার পথে প্রতিবন্ধক হতে পারে, যেমন- ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হার্টের রোগ। বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, অতি ওজন বা স্থূলতার সঙ্গে অকাল মৃত্যুর বর্ধিত ঝুঁকির যোগসূত্র রয়েছে। সুস্থ থাকতে ও বেশিদিন বাঁচতে আপনার বডি মাস ইনডেক্সকে স্বাস্থ্যকর জোনের (১৮.৫ থেকে ২৪.৯) মধ্যে রাখুন।

প্রকৃতিতে বেশি সময় কাটান : সুস্থ মানুষেরা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করেন- তাদের আশপাশে প্রচুর গাছপালা থাকে অথবা তারা সহজে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে পারেন। গবেষণায় পাওয়া গেছে, প্রকৃতিতে সময় অতিবাহিত করলে বিষণ্নতা হ্রাস পায়, বেশি করে সক্রিয় হওয়া যায় এবং ক্ষতিকারক দূষণ থেকে মুক্ত থাকা যায়। কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে প্রকৃতিতে সময়যাপনে মস্তিষ্কের কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে এবং স্পষ্টভাবে চিন্তা করা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বেড়ে যায়।

পড়ুন :

 

ঢাকা/ফিরোজ