লাইফস্টাইল

চেহারা দেখেই মিথ্যা ধরে ফেলার উপায়

আমরা অনেকেই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মিথ্যা কথা বলি। এতে সম্পর্কের অবনতি থেকে শুরু করে অপরের ক্ষতি, সম্মান হারানো, যে কোনো দুর্ঘটনা; এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। অথচ আমরা সবাই জানি- সত্যের মৃত্যু নেই। তারপরও আমরা জেনেবুঝে মিথ্যার আশ্রয় নিই, সত্য এড়িয়ে চলি। বড়সড় মিথ্যা ধরার কাজ সাধারণত গোয়েন্দারা করেন। তারা এই কাজে এতোটাই দক্ষ যে, অভিব্যক্তি, অঙ্গভঙ্গি এবং অন্যান্য আচরণ দেখে মিথ্যাবাদী শনাক্ত করেন। সমাজে টিকে থাকতে হলে আপনাকেও এমন একজন গোয়েন্দা হতে হবে যাতে মিথ্যাটা চট করে ধরে ফেলতে পারেন।

মার্ক বাউটন এফবিআই কর্মকর্তা, যিনি ৩০ বছর ধরে গোয়েন্দাগীরী করছেন। চেহারা দেখেই মিথ্যা কথা ধরে ফেলার ব্যাপারটা তারই আবিষ্কার। বাউটন বলেন, ‘চেহারার বিভিন্ন অভিব্যক্তি এবং তার সাথে সম্পর্কিত নানান আকার ইঙ্গিতের মাধ্যমে মিথ্যাবাদী শনাক্ত করা সম্ভব। তবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় ব্যক্তি কেমন আচরণ করে সেদিকে লক্ষ্য রাখা।’ তিনি বাতলে দিয়েছেন আরো কয়েকটি উপায়।

চোখ নড়ছে কিনা লক্ষ্য করুন: সাধারণত কেউ অস্বস্তিবোধ করলে তার চোখ ডানে এবং বামে নড়াচড়া করে। বাউটন বলেন, ‘এটি একটি মানসিক অভিব্যক্তি এবং আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে বা উত্তর দিতে না চাইলে এমন অভিব্যক্তি অনেকেই প্রকাশ করেন। কোনো অবৈধ কাজ করে ধরা পড়ার ভয়ে এমন অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটে। মানুষ এরকম পরিস্থিতিতে ভয় পায় এবং পালানোর রাস্তা খোঁজে। তখন অবচেতন মনেই সে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করে।’

দ্রুত চোখের পলক ফেলা: সাধারণত কোনো মানুষ মিনিটে ৫-৬ বার চোখের পলক। কোনো ব্যক্তি মিথ্যা বলতে গিয়ে ধরা পড়লে মানসিক চাপের কারণে ন্যূনতম ৫-৬ বার দ্রুত চোখের পলক ফেলবে। তাছাড়া ডোপামিন হরমোন উৎপাদনের উপর চোখের পলক ফেলার ব্যাপারটা নির্ভরশীল। কোনো ব্যক্তি যদি পারকিনসন’স রোগে আক্রান্ত থাকেন তাহলে তিনি স্বাভাবিকের চেয়ে খুব ধীরে চোখের পলক ফেলবেন। আবার যদি কেউ সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত থাকেন তাহলে তিনি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ দ্রুত চোখের পলক ফেলবেন।

চোখ বন্ধ করার সময়সীমা লক্ষ্য করুন: বাউটনের মতে, কোনো ব্যক্তি যদি কথা বলা বা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় ১-২ সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে থাকে, তাহলে সে মিথ্যা বলছে। এটা অবশ্য অনেকসময় আত্মরক্ষার উপায় হিসেবেও কাজ করে। সাধারণত কোনো মানুষ ১০০-৪০০ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে চোখের পলক ফেলে।

তাকানোর দিকে লক্ষ্য করুন: বাউটন বলেন, ‘কোনো ডানহাতি ব্যক্তিকে তার স্মৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে সাধারণত উপরের দিকে বামে তাকিয়ে মনে করার চেষ্টা করে। কিন্তু সে যদি উপরের দিকে ডানে তাকায় তাহলে ধরে নিবেন সে কল্পনা থেকে বানিয়ে বলার চেষ্টা করছে।’ বামহাতি কোনো ব্যক্তি উপরে উল্লিখিত কাজগুলোর ঠিক উল্টোটা করবে। আবার অনেকেই আছেন যারা সরাসরি সামনে তাকিয়ে স্মৃতিতে থাকা কোনো বিষয় মনে করার চেষ্টা করেন।

বিষয়বস্তু লিখে রাখুন: বাউটনের মতে, কোনো ব্যক্তি কিছু শুনে থাকলে আপনি যদি সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন তাহলে তা মনে করার জন্য চোখ তার বামকানের দিকে ঘুরে যাবে। চোখ যদি ডানকানের দিকে ঘোরে তাহলে সে মিথ্যা বলার চেষ্টা করছে।

কী স্মরণ করার চেষ্টা করছে লক্ষ্য করুন: কেউ যদি সত্যিই তার স্মৃতি থেকে কিছু স্মরণ করার চেষ্টা করে, তাহলে সে নিচের দিকে বামে তাকাবে। আর যদি সে বারবার ডানে নিচের দিকে তাকায় তাহলে সে হয়তো মিথ্যা বলার চেষ্টা করছে।

হাসি লক্ষ্য করুন: স্বাভাবিক হাসিতে মানুষের চোখের দিকের চামড়া ভাঁজ হয়ে জমাট বাঁধে। কিন্তু কেউ যদি মিথ্যা হাসি হাসে, এমন হয় না। অর্থাৎ মিথ্যা হাসিতে চোখের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না, কেবল তা মুখে থাকে। 

হাত লক্ষ্য করুন: বাউটন বলেন, কোনো ব্যক্তি মিথ্যা বললে শরীরে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া হয়। ফলে তারা প্রায়শই নাক-মুখ চুলকায়।

মুখের দিকে দৃষ্টি দিন: বাউটন বলেন, কোনো ব্যক্তি মিথ্যা বললে তার গলা, ঠোঁট শুকিয়ে আসে। একারণে সে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট চাটা বা ঠোঁট কামড়াতে পারে। কারো ঠোঁট কথা বলার সময় অত্যধিক শুকিয়ে সাদা হয়ে গেলে ধরে নিন সে মিথ্যা বলছে।

অত্যধিক ঘাম: বাউটনের মতে, কেউ মিথ্যা বললে কপাল, গাল এবং ঘাড়ের পিছনে প্রচুর ঘাম হয়। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, তারা সেই ঘাম বারবার মুছে ফেলবে।

চেহারায় লাজুকভাব: চেহারায় লাজুকভাব আসা একটা আবেগজাত অভিব্যক্তি। কিছু তুখোড় মিথ্যাবাদী আছেন যারা মিথ্যা বলার সময় নিজের চেহারার অন্যান্য অভিব্যক্তি লুকাতে এই কৌশল অবলম্বন করেন। তাই তাদের লাজুক স্বভাবে ভুলে না গিয়ে অন্যান্য দিকগুলো খতিয়ে দেখুন।

মাথা নাড়ানো লক্ষ্য করুন: সাধারণত মানুষ সত্যি বলার সময় সম্মতিজ্ঞাপক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ান। কিন্তু যে মিথ্যা বলছে সে কখনো এমন করবে না। তার ভঙ্গিতে অসম্মতি থাকবে।

 

ঢাকা/ফিরোজ/তারা