লাইফস্টাইল

বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারে যেসব সতর্কতা জরুরি

দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। করোনা প্রতিরোধে সুরক্ষা উপকরণ সংগ্রহের পাশাপাশি হিড়িক পড়ে গেছে কোভিড-১৯ চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সামগ্রী কেনারও, যেমন- পালস অক্সিমিটার ও অক্সিজেন সিলিন্ডার। করোনায় আক্রান্ত হননি এমন সামর্থ্যবান মানুষেরাও এসব সামগ্রী কিনে রাখছেন।

অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যাপক চাহিদার সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা এর দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যকর্মীর তত্ত্বাবধান ছাড়াই ঘরে নিজে নিজে অক্সিজেন ব্যবহারে বিপদ ঘটতে পারে। এর অন্যতম কারণ হলো, একজন সাধারণ রোগী জানেন না তার কি পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন। এছাড়া ঘরে অক্সিজেন ব্যবহার করতে গেলে কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিতে হয়।

বাতাসে প্রায় ২১ শতাংশ অক্সিজেন থাকে, যা মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজন। আমরা নিঃশ্বাসের সঙ্গে এই অক্সিজেন গ্রহণ করছি। কিন্তু ঘরে অক্সিজেন ব্যবহারের সময় প্রয়োজনাতিরিক্ত গ্রহণ করলে কিছু পরিণতিতে ভুগতে পারেন, যেমন- খিঁচুনি হতে পারে, দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে, চোখ জ্বালাপোড়া করতে পারে, শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে ও মাংসপেশির স্পন্দনে অস্বাভাবিকতা আসতে পারে। এছাড়া সিওপিডি ও ব্রঙ্কাইটিসের মতো ফুসফুসীয় রোগের রোগীদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এসব রোগীরা নিজেদের ইচ্ছেমত অক্সিজেন গ্রহণ করলে ফুসফুসের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারেন, কারণ তারা জানেন না যে অক্সিজেনের ফ্লো রেট বা প্রতিমিনিটে অক্সিজেনের প্রবাহ কতটুকু দরকার। তাই ফুসফুসে অন্যকোনো রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অক্সিজেন ব্যবহার করে মারাত্মক পরিণতির ঝুঁকি বাড়াবেন কিনা পুনরায় বিবেচনা করুন।

আমরা প্রতিদিন নিঃশ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেন গ্রহণ করি বলে এটাকে নিরীহ গ্যাস মনে হতে পারে। কিন্তু সিলিন্ডারে উচ্চ চাপে সংরক্ষিত অক্সিজেন অসতর্কতায় ধ্বংসাত্মক হতে পারে। সিলিন্ডারের বিশুদ্ধ অক্সিজেন খুবই দাহ্য পদার্থ বলে অসাবধানতায় মারাত্মক অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। অক্সিজেন নিজে জ্বলে না, কিন্তু এটি ছোট স্ফুলিঙ্গ অথবা আগুনের শিখার সংস্পর্শে আসলে খুব দ্রুত আগুন ছড়াতে পারে। তাই ঘরে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের সময় আপনাকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। এখানে দুর্ঘটনা এড়াতে অক্সিজেনের নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।

* আগুনের কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করবেন না। আগুন থেকে ন্যূনতম ১০ ফুট দূরে থাকুন। এ সময় আপনার পাশে যেন কেউ ধূমপান না করেন ও মোমবাতি না থাকে। যে ঘরে আগুন জ্বলছে সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখবেন না বা ব্যবহার করবেন না।

* অক্সিজেন থেরাপির সময় কেউ যেন পাশে ইলেক্ট্রিক রেজার ব্যবহার না করেন। এগুলো স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করতে পারে।

* অক্সিজেন ব্যবহারের সময় এমন পোশাক পরে থাকা উচিত নয় যা ঘর্ষণে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করে। এ সময় আশপাশে কেউ যেন এমন জিনিস নিয়ে কাজ না করেন যা পরস্পরের ঘর্ষণে স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে।

* অক্সিজেন সিলিন্ডারকে সবসময় নিরাপদ স্থানে খাড়াভাবে রাখুন। সিলিন্ডারটিকে স্ট্যান্ডে ভালোভাবে রাখুন, অন্যথায় এটি পড়ে গিয়ে ভালভ ঢিলা হয়ে যেতে পারে ও চাপিত অক্সিজেন সিলিন্ডারটিকে বিপজ্জনক মিসাইলে পরিণত করতে পারে, অর্থাৎ ভয়ংকর বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

* বাতাস চলাচল করতে পারে এমন স্থানে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখুন। সিলিন্ডারে যেন সূর্যের আলো সরাসরি না পড়ে।

* নিয়মাবলি জেনেই অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করুন, যেমন- ভালভ সঠিকভাবে খোলা ও বন্ধ করা।

* ক্লিনিং ফ্লুইড, পেইন্ট থিনার ও অ্যারোসল স্প্রে'র মতো দাহ্য সামগ্রী ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত ও পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক স্কিন প্রোডাক্টও ব্যবহার করবেন না, যেমন- ভ্যাসলিন।

* যে রুমে অক্সিজেন সিলিন্ডার রেখেছেন সেখানে ‘আগুন জ্বালাবেন না, বিস্ফোরণ ঘটবে’ অথবা ‘ধূমপান করবেন না, বিস্ফোরণ ঘটবে’ প্রকৃতির লেখা সাঁটিয়ে দিন।

* ব্যবহার শেষে অক্সিজেন ইকুইপমেন্টকে তাপের যাবতীয় উৎস থেকে দূরে রাখুন।

* অক্সিজেন লিক করছে কিনা নিয়মিত চেক করুন। অক্সিজেন লিকের শব্দ শুনলে ঘরের সকল আগুন নিভিয়ে ফেলুন ও দরজা-জানালা খুলে দিন।

* অক্সিজেন ইক্যুইপমেন্টের সার্ভিস নম্বর লিখে রাখুন, ত্রুটি হলে প্রয়োজনে যেন কল করতে পারেন।

* স্মোক ডিটেক্টর সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা নিশ্চিত হোন। প্রয়োজনে নতুন ব্যাটারি লাগিয়ে নিন।

* ঘরে আগুন লাগলে আতঙ্ক ছাড়াই নিরাপদে বেরিয়ে আসার ব্যবস্থা করে রাখুন।

* নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিসের কনটাক্ট নাম্বার মুখস্ত করে রাখুন, যেন দুর্ঘটনাবশত অগ্নিকাণ্ডে অবিলম্বে কল করতে পারেন।

 

ঢাকা/ফিরোজ