লাইফস্টাইল

গৃহিণীদের যেসব কথা বলা উচিত নয়

একজন নারীর বাইরে কাজ করা অথবা গৃহিণী হওয়ার সিদ্ধান্তটি নিতান্ত তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবুও বেশ কিছু এমন মানুষ আছেন যারা তাদের এসব বিষয়ে নাক গলাতে ছাড়েন না। গৃহিণীরা শুনতে অপছন্দ করেন এমন কিছু কথা নিয়ে এ প্রতিবেদন।

আপনার কপাল খুব ভালো অনেকেই আছেন যারা মনে করেন যে বাড়িতে থাকা মহিলাদের প্রচুর সময় এবং তারা মনের সুখে টিভি দেখে, গান শুনে, খোশগল্পে সময় পার করে থাকেন। তাদের পরিবার সামলে অনেক সময় বেঁচে যায় এবং তারা প্রচুর অলস সময় পার করেন; এমন ধারণা অনেকেরই। আসলে এসকল ধারণার কতটুকুই বা সত্য? কোনো মহিলা কতটুকু ব্যস্ত তা আমরা বাইরে থেকে দেখে বিচার করতে পারব না এবং মহিলারা তাদের এসব ব্যাপারগুলো ব্যক্তিগত রাখতেই বেশি পছন্দ করেন। অনেক মহিলা আছেন যাদের স্বামী ১২ ঘণ্টার বেশি বাইরে থাকেন কাজের স্বার্থে এবং অনেকেই মনে করেন পুরুষটির তুলনায় নারীটি কম কাজ নিয়ে থাকেন। আসলে পরিবার বাচ্চা-কাচ্চা সামলে খুব কম সময়টুকু নারীরা নিজের জন্য দিতে পারেন, যা আমাদের সংকীর্ণতাবশত আমরা বুঝতে পারিনা বা বুঝতে চাই না। তাছাড়া বাড়ি পরিষ্কার রাখার মতো গুরুদায়িত্ব মহিলাদের পালন করতে হয়, যা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। এছাড়াও বাচ্চাদের পরিপূর্ণ সময়টুকু একজন মাকে সঠিকভাবেই দিতে হয় যার ফলে দিনশেষে গৃহিণীদের ব্যস্ততার হিসাবনিকাশ করাটা আসলে অত্যন্ত কঠিন একটা কাজ। অনেকে মনে করেন ঘরে থাকা মানেই প্রচুর সময় হাতে থাকা এবং তা ইচ্ছামত নিজের জন্য খরচ করা যায়। আসলে আমরা যারা এমন ধারণা রাখি তারা আসলে বাস্তবতাটা বুঝিনা; এটাই আসল সত্যি।

আপনার কী কখনো বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না? বাড়িতে থাকা একজন মায়ের ২৪ ঘণ্টাই ব্যস্ত থাকতে হয়। তাদের আসলে খাওয়া-দাওয়া বা অবসর কাটানোর মতো তেমন একটা সময় থাকে না বললেই চলে। অনেকেই বাচ্চার দেখাশোনা করার জন্য আলাদা করে লোক রাখা বা চাইল্ড কেয়ারে বাচ্চাকে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন মায়েদের। গৃহিণী মায়েরা তাদের বাচ্চার দেখাশোনা নিয়ে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হন। যারা সাধারণত প্রশ্নগুলো করেন তাদের আসলে সূক্ষ চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা কম।

আপনাকে এতো ক্লান্ত দেখায় কেন? গৃহিণী মায়েদের কাজগুলো আসলে ধরাবাধা সময়ের কোনো কাজ নয়, তাই তাদের ক্লান্ত দেখানোর যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একজন মা সকালে ঘুম থেকে জেগে তার বাচ্চা সামলানো থেকে শুরু করে তার সমস্ত সাংসারিক কাজ সম্পন্ন করেন; এমনকি রাতে ঘুমের মধ্যেও মাঝে মাঝে জেগে তার বাচ্চার খেয়াল রাখতে হয়। তাদের কাজের ব্যস্ততা আসলে বুঝে ওঠা খুবই কঠিন। তারপরও অনেকে এ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হন যে, কেন তাদের এতোটা ক্লান্ত দেখায়। অনেক পুরুষের ধারণা তারা যেহেতু বাড়ির মধ্যেই সারাদিন থাকে তাই তাদের এতো ঘুমের দরকার নেই, কেননা তারা তো প্রচুর অলস সময় বাড়িতে বসে বসে পার করে। 

সংসারই কী আপনার সব? অনেক মহিলাই আছেন যারা ঘরের কাজের পাশাপাশি বাইরেও কাজ করেন। তারা অতিরিক্ত আয়ের পাশাপাশি পেশাজীবীত্ব ধরে রাখার জন্য সংসারের পাশাপাশি বাইরের কাজ করে থাকেন। তবে যারা বাইরের কাজ করেন না বা একসময় করতেন কিন্তু এখন করেন না, তারা বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হন প্রায়শই। তারা কেন কাজ করেন না, কবে থেকে আবার বাইরের কাজ শুরু করবেন এরকম নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে থাকেন নারীরা।

শিক্ষিত গৃহিণী মানেই শিক্ষার জলাঞ্জলি এমন অনেক গৃহিণী আছেন যারা উচ্চশিক্ষিত। তাদের সম্বন্ধে এমন একটি ধারণা পোষণ করা হয় যে, তারা গৃহিণী হয়ে সমস্ত পড়াশোনাটাকে জলাঞ্জলি দিয়ে বসে আছেন। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ডিগ্রি অর্জন করতে সময়, ত্যাগ, অর্থের প্রয়োজন হয় এবং শিক্ষিত নারীদের গৃহিণী হওয়া মানে ধরেই নেওয়া হয় যে তাদের ডিগ্রিটাই বৃথা গেছে; ওই পড়াশোনার আর কোনো মূল্য নেই। অনেকেই নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হন যে, তারা পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জন করে কেন সংসার, বাচ্চাকাচ্চা সামলাতে শুরু করেছেন; তাদের কি লজ্জা লাগে না যে এতো কষ্ট করে পড়াশোনা করে শেষ পরিণতি এই হলো। অনেক মহিলা এমন আছেন যারা হয়তো আগে চাকরিজীবী ছিলেন কিন্তু সংসার আর বাচ্চার দেখাশোনা করতে গিয়ে চাকরি ছেড়ে ঘরে বসে আছেন। তাদেরও অনেক প্রতিকূলতা পার করতে হয়। এক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে আসলে তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতার ব্যাপারটা সবাই ইতিবাচক হিসেবে দেখেন না।

সারাদিন বাড়িতে আবদ্ধ কী থাকা যায়? বাড়িতে আবদ্ধ থাকা কারো পছন্দ না হতেই পারে; কিন্তু যে নারী তার নিজের সিদ্ধান্তবশত এবং বাড়ির প্রয়োজনে বাড়িতে আবদ্ধ থাকেন, পাশাপাশি তার সাংসারিক জীবন আরো সুন্দর এবং গোছালো করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তার পক্ষে এমন কথা সহ্য করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া অধিকাংশ গৃহিণী কাছে এমন কথা সবচেয়ে বেশি বিরক্তির কারণ হতে পারে। 

সংসার চলে কীভাবে? সমাজে অনেকেই আছেন যারা মনে করেন একজনের রোজগারে সংসার চলে না এবং বাড়ির মহিলাদের বাইরে কাজ করা উচিত, যাতে পরিবারের আয়ের উৎস একটু বর্ধিত হয়। আসলে সবসময় ব্যাপারটি ঘটেনা; কেননা একজনের রোজগারে প্রায়ই সমঝোতার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী তাদের সংসারটা ঠিকমতোই চালিয়ে নেন। অনেক নারীই আছেন যারা বিলাসিতার চেয়ে তার সংসারের সুখ বেশি পছন্দ করেন। তাই তাদের এমন প্রশ্ন করলে তারা বিরক্ত হবেন এটাই স্বাভাবিক।

আপনার সন্তানরা আপনার সম্বন্ধে কী ভাববে? সকল মা নিজেকে তার সন্তানদের কাছে ভালো উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে চান। অনেকেই আছেন যারা নানান প্রশ্ন তুলে বসেন। তাদের ধারণা এমন যে, একজন গৃহিণী কেমন করে নিজেকে তার সন্তানের কাছে ভালো উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরবেন। এটা একজন মায়ের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক; কেননা তিনি তার সন্তানের জন্য নিজের সর্বোচ্চটুকু নিঃসংকোচে বিলিয়ে দেন। একটু ভালো করে ভেবে দেখুন তো? গৃহিণী মায়েরা কি সত্যিই নিজের সন্তানের কাছে ভালো উদাহরণ হবার যোগ্য নন?