লাইফস্টাইল

যেভাবে বাড়াবেন আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা

শিশুরা নিজেদের আবেগ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে তা শেখানো আপনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তবে এটি শেখানো মোটেও কোনো সহজ কাজ নয়।

আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা হলো শিশু তার নিজের এবং অন্যদের আবেগীয় অবস্থা (রাগ, দুঃখ, ভয়) শনাক্ত করতে ও বুঝতে পারবে। পাশাপাশি নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ইতিবাচকভাবে পরিচালনা করে, অন্যের সঙ্গে সঠিকভাবে যোগাযোগ স্থাপন ও যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে।

আপনার শিশুকে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তায় কিভাবে গড়ে তুলবেন, সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কোথায় থামতে হবে সে বিষয়ে জ্ঞান দিন: ‘শিশুরা প্রাকৃতিকভাবেই আবেগপ্রবণ এবং তারা যখন অনিয়ন্ত্রিত থাকে তখন তাদের আবেগের মাত্রা বেড়ে যায়’-বলেন যুক্তরাস্ট্রের সার্টিফায়েড ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স কোচ এলেসা ওয়ার্ড। তিনি আরো বলেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত আবেগ শিশুর বুদ্ধিমত্তা বিকাশের ভিত্তি ধ্বংস করে দেয়, তাই শিশুরা কি চিন্তা করবে এবং কিভাবে আচরণ করবে, তা শেখানো উচিত।’ সেক্ষেত্রে শিশুরা যখন অনিয়ন্ত্রিত আবেগ প্রকাশ করবে তখন ইশারা করা যেতে পারে, যেন তারা বুঝতে পারে এখন তাদের থামতে হবে। শিশুদের যথেষ্ট সময় নিয়ে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন, নতুবা পরবর্তীতে সংকট তৈরি হতে পারে।

কথা বলায় উৎসাহ দিন: সাইকোথেরাপিস্ট টম কার্সটিং তার পরামর্শে বলেন, ‘পারিবারিক আলোচনায় শিশুদের সামিল করুন।’ সাধারণত বাবা-মায়েরা শিশুদের সঙ্গে তেমন অর্থবহ আলোচনায় যান না। সেক্ষেত্রে উচিত প্রতিরাতে নিয়ম করে পরিবারের সকল সদস্যদের অন্তত ১৫ মিনিট একত্রে মিলিত হওয়া এবং কথা বলা।

আপনার সন্তানের আবেগকে মূল্যায়ন করুন: ‘অনুভূতিগুলো হতে পারে ভুল বা ঠিক, সবারই অনুভূতি আছে এবং শিশুরাও এর বাইরে নয়’, বলেন ‘দ্য আদার কাইন্ড অব স্মার্ট, সিম্পল ওয়েস টু বুস্ট ইওর ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স ফর গ্রেটার পারসোনালিটি ইফেকটিভনেস অ্যান্ড সাকসেস’ বইয়ের লেখক হার্ভি ডয়চেনড্রফ। তিনি প্রশ্নের মাধ্যমে অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য উৎসাহ দেন। যেমন ধরুন, আপনি দেখলেন আপনার শিশুকে বিমর্ষ দেখাচ্ছে এবং কথা বলছে না। তখন তাদের বলুন যে, ‘কি ব্যাপার তোমাকে মনমরা দেখাচ্ছে কেন, কি হয়েছে?’ তাদের অনুভূতিগুলোকে সন্দেহ বা বিচার করবেন না। শিশুদের জন্য তাদের অনুভূতিগুলো সত্য এবং বিশ্বাসযোগ্য।

অনুভূতির ধরন প্রকাশে সহায়তা করুন: ‘সকল বয়সের শিশুরা কিছু অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়। তবে অনেক সময় তারা তাদের আবেগ বা অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না। তাই আপনি আপনার অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।’- বলেন, হার্ভি ডয়চেনড্রফ। তিনি আরো বলেন, ‘উদাহরণস্বরূপ: আপনার সন্তানকে বলুন যখন আপনার কাছের বন্ধুর সঙ্গে কথা হতো না, তখন আপনার ভালো লাগত না, অসহায় লাগত। অর্থাৎ ওই অবস্থায় আপনার অভিজ্ঞতা ভাগ করতে পারেন। এতে করে শিশু নিজেকে আপনার কাছে প্রকাশ করতে পারবে এবং আপনার ও নিজের ওপর আস্থা বাড়বে।

সন্তানের কাছে আপনিই হয়ে উঠুন আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার আদর্শ: আপনার দৈনন্দিন জীবনের অনুভূতি, আবেগ ও অভিজ্ঞতাগুলো আপনার শিশুর সঙ্গে কথার ফাঁকে ফাঁকে বলুন, এটি আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার প্রশিক্ষণের একটি বড় মাধ্যম। আপনিই তাদের কাছে আদর্শ, কারণ সন্তানেরা তাদের বাবা-মাকে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখে এবং গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। ফলে এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর-অস্বাস্থ্যকর অনেক গুণাবলী নিজের মধ্যে আয়ত্ত করে। হার্ভি ডয়চেনড্রফ বলেন, দৈনিক কাজের মধ্যদিয়ে আবেগ শেয়ার করুন। যেমন, কোনো বিষয়ে আপনার রাগ হলেও তা কিভাবে ইতিবাচকভাবে ম্যানেজ করেন বা অফিসে কাজের জন্য বস আপনার প্রশংসা করলে আপনার কেমন ভালোলাগা কাজ করে।

সহমর্মিতা শেখান: আপনার সন্তানের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলুন। আবেগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সহমর্মিতা। যা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে বেশ প্রয়োজনীয়। যখন আপনার সন্তান তার স্কুলে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা বলবে তখন তাকে বোঝান যে, একই ঘটনা তার সঙ্গে ঘটলে কেমন লাগবে। যেমন: কেউ পড়ে গিয়ে ব্যথা পেল আর সবাই তা নিয়ে ঠাট্টা বা হাসাহাসি করলো। হার্ভি ডয়চেনড্রফ বলেন, শুধু এইভাবে উদাহরণ দিলেই হবে না, বরং আপনিও তাদের সামনে সহমর্মিতার চর্চা করুন।

আচরণে সীমা টানুন, আবেগের নয়: ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কার নেচামা ফিনকেলস্টেইন তার পরামর্শে বলেন, ‘আপনার সন্তানের আচরণের ওপর নজর রাখুন। তাদের কখনোই বলবেন না যে, কী অনুভব করা উচিত আর অনুভব কী করা উচিত না। তবে তারা যদি কোনো অপ্রত্যাশিত আচরণ করে তবে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিন। যেমন, আপনার সন্তান যদি রেগে যায় ও সামনের কাউকে আঘাত করে তাহলে তাকে নিষেধ করুন এবং এ ধরনের আচরণ থেকে তাকে বিরত রাখুন।’

তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন: * শিশুর স্কুল থেকে শেখা বদভ্যাস থামাবেন যেভাবে

* যে ১০ কথা সন্তানকে বলা উচিত নয়