লাইফস্টাইল

ভাষা ব্যবহারে সচেতনতা

কথা বলার সময় আমরা প্রায়ই জেনে না জেনে ভুল শব্দ আর ভুল বাক্যে কথা বলি। এ সময় আমরা অনেকেই ঘরের ভাষা, বাইরের ভাষা, বন্ধুর ভাষা, প্রমিত ভাষা-সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলি। লেখার ক্ষেত্রে আরও বেশি ভুল করি। অথচ বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ ভাষার জন্য বায়ান্নতে প্রাণ দিয়েছেন- শফিক, রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকে। নিজেদের ভাষা রক্ষার জন্য প্রাণ দেওয়া, বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। 

অনেকেই জানি না, আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণ বা সুখ-শান্তি শব্দগুলোতে বেশ তফাৎ আছে। জেনে না জেনে অনেকেই এমন শব্দ ব্যবহারে ভুল করি। এছাড়াও পাশাপাশি কিছু শব্দ আছে, যা আমরা প্রায়শই ব্যবহার করে আসছি। যাকে বলছি ও যে বলছি, কারোই মনে হয় না ভুল বলছি বা ভুল শুনছি। 

অনেককে বলতে শুনি ‘ইন কেইস-যদি’। এর মানে, একই শব্দ, একই বাক্যে দু’বার বলছেন আপনি। আমাকে ‘ফোন করিস’ বা ‘ফোন দিস’ দোস্ত! এটাও সঠিক না। কথাটা ফোন দেওয়া বা ফোন করা হবে না। এখানে বলতে হবে-‘কল করিস’ বা ‘কল দিস’।

অনেকে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, আমি মিস্টার অমুক। নিজের নাম বলার সময় নিজেকে ‘মিস্টার’ বলার বিষয়টা বেজায় শ্রুতিকটু। নিজেকে নিজে কখনই মিস্টার বলা যাবে না।  এমন আরও অনেক কিছু রয়েছে। যেমন আমাদের বর্তমান প্রজন্ম। এরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা রাস্তা-ঘাটে আজকাল যে ভাষায় কথা বলে! সর্বনাশ! বেশিরভাগ ছেলেমেয়েদের কথা শুনলে মনে প্রশ্ন জাগে, আচ্ছা ওরা কি বাসায়ও এভাবে কথা বলে? নাকি শুধু বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বলে! উদাহরণস্বরূপ কয়েকটা শব্দের কথা বলা যায়। যেমন-ব্রো, দোস, মাম্মা, জোস, জাক্কাস, অসাম...

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ কিছু শব্দের ব্যবহার বেশ চোখে পড়ে। যারা এসব শব্দ ব্যবহার করছেন, তারা ভুলে যান যে, এ শব্দগুলো অন্যদেরও নজরে পড়ছে। ইনবক্সে যে ভাষায় লেখা যেতে পারে, সেটা নিশ্চয়ই কারো ওয়ালে লেখা ঠিক না। অনেকে কিন্তু ইনবক্সের ভাষাই ব্যবহার করেন আরেকজনের ওয়ালে। আবার, এমন অনেক শব্দ আছে, যেগুলোকে সংক্ষিপ্ত করেও ব্যবহার করছেন অনেকে। সেটাও দৃষ্টিকটু। 

কারো মৃত্যু সংবাদ শুনলে জবাবে অনেকে লিখেন, ‘RIP’। আবার কেই কেউ লিখেন, ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন! অথচ চলে যাওয়া মানুষটির আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমাদের লেখা দরকার ছিল- Rest in Peach বা ইন্নালিল্লাহি ওয়া-ইন্না ইলাইহি রাজিউন। 

শুরুতে বলছিলাম, আমন্ত্রণ ও নিমন্ত্রণ এবং সুখ ও শান্তি শব্দগুলোর মধ্যে পার্থক্য নিয়ে। সেটাই বরং খোলাসা করি। আমন্ত্রণ হচ্ছে- কোনো অনুষ্ঠান বা স্থানে বা কাজে যাওয়ার আহ্বান। যেখানকার সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে। আর নিমন্ত্রণ হচ্ছে- কোনো অনুষ্ঠান বা স্থানে বা কাজে যাওয়ার আহ্বান। যেখানকার সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক অবশ্যই থাকবে।  তেমনি সুখ আর শান্তি। সুখ হচ্ছে-ক্ষণস্থায়ী কোনো ভালো লাগা বা প্রাপ্তি। যেমন; আপনি আপনার প্রিয়জনকে নিয়ে বেড়াতে বেরোলেন। ঘুরলেন, খেলেন, সিনেমা দেখলেন। রাতে বাসায় ফিরলেন মনে ‘সুখ’ নিয়ে।

আর শান্তি হচ্ছে স্থায়ী কোনো ভালো লাগা বা প্রাপ্তি। যার সঙ্গে ঘুরলেন, খেলেন, সিনেমা দেখলেন, তার সঙ্গে আপনার বিয়ে হলো। আপনি তাকে পরিপূর্ণভাবে পেলেন। অর্থাৎ শান্তি শব্দটা ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়, যার উৎপত্তি মূলত সুখ থেকেই। 

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী। ঢাকা/মাহি