লাইফস্টাইল

লকডাউনে ঘরে নিরাপদ থেকেও মানসিক চাপ বাড়ে কেন?

করোনা মহামারি প্রতিরোধে বিভিন্ন দেশে পুনরায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে এ সময় বেশিরভাগ মানুষকে ঘরে থাকতে হচ্ছে। অনেকে ঘরে থেকে অনলাইনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করছেন। মনে হতে পারে, ঘরে থাকার কারণে চাকরিজীবীদের মানসিক চাপ কমেছে, কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোটা ঘটছে।

প্রশ্ন হলো- মানসিক চাপ বাড়ছে কেন? এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সিসিল আরেনস বলেন, ‘ঘরের পরিবেশ ও সার্বিক স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক আছে। অফিসের পরিবেশ এবং ঘরের পরিবেশ এক নয়। এটি মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। মানসিক চাপ শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’

ঘরের কোন বিষয়গুলো মানসিক চাপের ইন্ধনদাতা হিসেবে কাজ করে জানতে একাধিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ইনসাইডার। তারা ৬টি বিষয় তুলে ধরেছেন।

অগোছালো জিনিসপত্র

ঘরে জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলে মানসিক চাপ বেড়ে যায়।  থেরাপিস্ট মার্ক লোভেন ইনসাইডারকে জানান, ‘জিনিসপত্রের বিশৃঙ্খলা মন বিক্ষিপ্ত করে। অন্যদিকে জিনিসপত্র পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখলে মনে প্রশান্তি আসে। অফিসের ডেকোরেশন এখানে ভূমিকা রাখে। সেই সৌন্দর্যের সঙ্গে বাসার পরিবেশ অনেক সময়ই মিলবে না। তখনই দেখা দিতে পারে সমস্যা।’

কম আলো

উজ্জ্বল, কৃত্রিম আলো যেমন ঘুম ও শিথিলায়নে সমস্যা তৈরি করে, তেমনি অপর্যাপ্ত আলোও কিছু কাজ কঠিন করে তোলে। এর চূড়ান্ত পরিণতিতে মানসিক চাপ বাড়ে। যে কারণে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিটি রুমের কাজ অনুসারে বাতি জ্বালানো উচিত। অর্থাৎ যে কাজের জন্য যেমন আলো দরকার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে রুম আলোকিত করলে আর সমস্যা হবে না। গবেষণায় দেখা গেছে সাদা ও সবুজ আলো বিষণ্নতা কমায়।

সংকীর্ণ স্থান

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঘরের সঠিক বিন্যাস (লে-আউট)। যদি ঘর এমনভাবে বিন্যস্ত করেন যেখানে কাজের জন্য যথেষ্ট জায়গা নেই, তাহলে সন্দেহ নেই যে মানসিক চাপ বাড়বে। গবেষণা বলছে, সংকীর্ণ ও আবদ্ধ স্থানে বাস করলে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মন বা মেজাজ ভালো করতে বাইরে ঘুরে আসার পরামর্শ দেন। কিন্তু করোনাকালে তা সম্ভব নয়। অথচ আমরা সবাই জানি, সূর্যালোকের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে মানসিক চাপ কমে।

একই স্থানে কাজ ও বিশ্রাম

করোনাকালে অনেককেই ঘরে প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করতে হচ্ছে। এ সময় ব্যক্তিগত জীবনের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে কাজ করা অনেকের পক্ষে কঠিন। তারা ঘরের যেখানে কাজ করছেন, সেখানেই বিশ্রাম নিচ্ছেন। এটা মানসিক প্রশান্তির পরিবর্তে চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। কৌতূহলী মনে প্রশ্ন আসতে পারে, ঘরে কাজ ও বিশ্রামের জন্য পৃথক স্থান নির্ধারণ না করলে মানসিক চাপ বাড়ে কেন? এর অন্যতম কারণ হতে পারে কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো বিশ্রামের সময়ও চোখে পড়ে। ফলে মন অশান্ত হয়ে ওঠে। যারা ছোট ঘরে বাস করেন তাদের জন্য কাজ ও বিশ্রামের পৃথক ব্যবস্থা আসলেই কঠিন। তাদের জন্য একটি সহজ পরামর্শ হলো, একই রুমের মাঝ বরাবর পর্দা টাঙিয়ে পৃথক ব্যবস্থা করে নিন।

পুরোনো জিনিস

অনেকের ঘরে এমন কিছু জিনিস পড়ে থাকে, যা এতটাই পুরোনো যে পরিবারের সদস্যরাও ব্যবহার করতে চান না। অকেজো জিনিস মানসিক চাপ বাড়াতে ইন্ধন যোগায়। উদাহরণস্বরূপ, ঘরের সোফা বেশ পুরোনো বা নোংরা বা ছিঁড়ে গেলে সেখানে বসে প্রশান্তি পাওয়া তো দূরের কথা, বরং অস্বস্তি বাড়ে। নিত্যব্যবহার্য অন্য আসবাবের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য।

কোলাহল

যেখান থেকেই কোলাহল কানে আসুক না কেন, মানসিক চাপ বাড়তে পারে। কোলাহলের দুটি উৎস হলো- টেলিভিশন ও কথাবার্তা। তবে সব কোলাহলই পীড়াদায়ক বা মানসিক চাপ বাড়ায় না। কোনো খবর শুনলে কেমন অনুভূতি হচ্ছে লক্ষ্য করুন এবং সে অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নিন। ধরুন টেলিভিশনে খবর দেখলে আপনার মন অস্থির হয়ে ওঠে। তাহলে আপনি টেলিভিশনের পরিবর্তে রেডিও শুনে দেখতে পারেন। অর্থাৎ আপনার কী ভালো লাগছে আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে।