লাইফস্টাইল

পিল খেয়ে পিরিয়ড বিলম্বিত করে রোজা রাখা কি ঠিক? 

মহান আল্লাহ এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীতে বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে বংশীয় ধারা ঠিক রাখার জন্য নারী এবং পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। গঠন প্রকৃতি অনুযায়ী নারী-পুরুষ এক নয়। নারীর গাঠনিক অবস্থা এবং পুরুষের গাঠনিক অবস্থার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। একইভাবে নারী ও পুরুষের এই পার্থক্যের কারণে শরীয়তের বিধিনিষেধ আরোপের ক্ষেত্রেও দু’জনের মধ্যে কিছু বিষয়ে তারতম্য বা শিথিলতা রয়েছে। অর্থাৎ নারী এবং পুরুষের দৈহিক ও মানসিক দিক দিয়ে দু’জনের বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা থাকায় শরীয়ত যেসব বিষয় পুরুষের উপরে আরোপ করেছে, সে বিষয়গুলোর কোনো কোনোটিতে নারীর ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ  শিথিলতা হল ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাপারে নারীদের ছাড় দেয়ার বিষয়টি।

প্রাপ্তবয়স্কা নারীর একটি বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছুদিন পিরিয়ডের রক্তক্ষরণ হয়। আবার সন্তান প্রসব পরবর্তী সময়ে, প্রসূতি মায়ের কিছু সময় পর্যন্ত এমনি রক্তক্ষরণ হয়। রোজা অবস্থায় পিরিয়ড শুরু হলে ওই নারীর ওপর শরীয়তের অনেক বিধি-বিধান শিথিল করা হয়েছে, যেমন ফরজ রোজা ছেড়ে দিতে হবে। তবে পরবর্তী পবিত্র সময়ে, সুস্থাবস্থায় কাযা রোজা আদায় করতে হবে।

নামাজের বিষয়টিও ছাড় দেয়া হয়েছে, তবে নামাজ পরে কাযা আদায় করা দরকার হবে না, স্পর্শ না করে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে। আবার পিরিয়ডকালীন নারী অজু-তায়াম্মুম করলেও শারীরিকভাবে তাকে অপবিত্র হিসেবে ধরা হবে। তবে এই অপবিত্র মানে অচ্ছুৎ নয়। প্রকৃত অর্থে গোসল করা থেকে শুরু করে সব কিছুর মাধ্যমে সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নই থাকছে কিন্তু শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে নামাজ আদায় করার জন্য যে অজু করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা হয়, সেই অজু করলেও পিরিয়ড কালীন তাকে পবিত্র বলা যাবে না। এটা নারীর জন্য একটি বিশেষ অবস্থা।

প্রশ্ন হচ্ছে যদি কেউ রমজান মাস এলে বা সামনে রোজা আছে ভেবে, এই পিরিয়ড বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করে রোজা রাখে তাহলে তার জন্য ইসলামী শরীয়তের বিধান কী?  মেডিকেল সায়েন্স-এর সুবাদে আমরা অনেকেই জানি, এক ধরনের পিল বা ওষুধ আছে যা আগেভাগে সেবন করলে নারীদের পিরিয়ড বিলম্বিত করা যায়। এ বিষয়ে বিভিন্ন উলামা ও ফকিহদের মত হলো, পিল খেয়ে পিরিয়ড বিলম্বিত করলে, নারীর শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দেয়, শরীরে দূষিত রক্ত আটকে থাকার কারণে তার লিভার, কিডনি, পিত্তথলি এবং অন্যান্য কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কিছু সমস্যা তৈরি হয় বা কখনো কখনো দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যাও তৈরি হয়। তাই পিল খেয়ে পিরিয়ড বিলম্বিত না করাই উত্তম। এক্ষেত্রে তাদের জন্য আল্লাহর ফায়সালা মেনে নিয়ে রোজা ছেড়ে দেয়া এবং পরে কাযা আদায় করা ভালো।

এক্ষেত্রে কোনো ঈমানদার ডাক্তার যদি কোনো নারীকে পরামর্শ দেয় যে, পিল খেয়ে পিরিয়ড বিলম্বিত করে রোজা রাখা হলে সমস্যা হবে না, তাহলে সে বিষয়টি আমলে নিয়ে দেখতে পারে। অর্থাৎ এত ভাবে বলার পরও কেউ পিল খেয়ে পিরিয়ড বিলম্বিত করে রোজা রাখলে তার রোজা আদায় হয়ে যাবে; তবে তা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে অপছন্দনীয়।

বেশিরভাগ আলিম ও ফকীহদের মতে, ঋতুবতী মহিলারা পিরিয়ড কালে রমজানের রোজা না রাখতে পারলেও এর সওয়াব থেকে কোনো অংশেই বঞ্চিত হবে না। কারণ এটা তার শরীয়তের একটি ওজর ছিল। এটি তার তাকদীরে লিখা ছিল। অতএব এ বিষয়টিতে হা-হুতাশ না করে, তাকদীরের বিরোধিতা করার জন্য চেষ্টা না করে, আল্লাহ যেভাবে তাকে যে অবস্থায় রেখেছেন, সেটা মেনে নিয়ে, পরে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়াটা সমীচীন বলে মনে করছি।

কারণ প্রাকৃতিকভাবে স্রষ্টা তার উপর বিষয়টি অর্পণ করেছেন। আর এ অবস্থায় আল্লাহর সিদ্ধান্ত যা, তার উপর ছেড়ে দিয়ে, যে কোনো উপায়ে রোজা না রেখে, পরবর্তীতে কাযা করার জন্য এগিয়ে গেলে, আল্লাহ তাকে যে আদেশ করেছিলেন সে আদেশটি তিনি পরিপূর্ণভাবে পালন করছেন- এই সুবাদে আল্লাহ তাকে অনেক সওয়াব এবং বরকত দেবেন।

কাজেই পিল খেয়ে পিরিয়ড বিলম্বিত করে রোজা না রেখে, বরং আল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে পুণ্যবতী নারী বা স্ত্রীগণ যদি রোজা ছেড়ে দেয় এবং পরে সুস্থ ও পবিত্র অবস্থায় রোজাটি কাযা করে নেয়, তাহলে রোজা রাখার যে সওয়াব প্রথমে ছিল, সেটা তো পাবেই, অতিরিক্ত আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরো সওয়াব দান করবেন। আল্লাহ আমাদের সঠিক বিষয়টি বুঝে, সেভাবে আমল করার তাওফীক দিন। আমীন।

লেখক: গবেষক, প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক ও মাসিক পত্রিকা সম্পাদক