লাইফস্টাইল

নারীর স্ট্রোকের উপসর্গ, ঝুঁকি কমাবেন যেভাবে

মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হলে অথবা রক্তনালি ফেটে গেলে স্ট্রোক হয়। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বিঘ্নিত হলে কোষগুলো মরে যায়। ফলে স্ট্রোকের লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জরুরি চিকিৎসা নিতে হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়সে নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অনুরূপ বয়সী পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ। অথচ এই বয়সের অধিকাংশ নারী স্ট্রোক সম্পর্কে সচেতন নন। এখানে মধ্যবয়সী নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর উপায় উল্লেখ করা হলো।

প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট হাঁটুন

অনেক নারী প্রতিদিন বাচ্চা সামলানো, খাবার প্রস্তুত করা ও অন্যান্য কাজে এত ব্যস্ত থাকেন যে, হাঁটার অবকাশ পান না। কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে হাঁটার জন্য সময় বের করতে হবে। ৪০ হাজার নারীর ওপর পরিচালিত একটি গবেষণা বলছে, সপ্তাহে স্বাভাবিক গতিতে ২ ঘণ্টা হাঁটলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমতে পারে। দ্রুত হাঁটলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে।

বিষণ্নতা কমান

৮০ হাজার নারীর ওপর পরিচালিত গবেষণা মতে, বিষণ্নতায় স্ট্রোকের ঝুঁকি ২৯ শতাংশ বাড়তে পারে। এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে গবেষকরা জানান- বিষণ্ন নারীদের ধূমপানের প্রবণতা বেশি, খাবারে মনোযোগী নয় বলে ওজন বেড়ে যায় এবং শরীরচর্চা তেমন করে না। এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য সমস্যাও থাকতে পারে, যেমন- উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস। 

বিষণ্নতার উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হলো- প্রতিনিয়ত দুঃখবোধ বা দুশ্চিন্তা, হতাশ হওয়া, নিজেকে অপরাধী ও অযোগ্য মনে করা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, মনোযোগে ব্যর্থতা, ঘুমাতে সমস্যা, বেশি খাওয়া বা ক্ষুধা কমে যাওয়া, আত্মহত্যার চিন্তা করা ও ঘনঘন মাথাব্যথা।

প্রতি রাতে ৭ ঘণ্টা ঘুম

বেশি ঘুমালে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে, আবার কম ঘুমালেও একই আশঙ্কা। গবেষকরা জানাচ্ছেন, প্রতি রাতে ঘুমের জগতে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় কাটালে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে ৭ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুমের সময় যাদের নাক ডাকে, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি আরো বেশি।এমনকি তাদের হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেশি।

মাইগ্রেন নীরব ঘাতক 

গবেষকদের ধারণা, যাদের মাইগ্রেনের প্রবণতা বেশি তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেশি। পুরুষদের তুলনায় নারীরাই মাইগ্রেনে বেশি ভোগেন। মাইগ্রেনের ৩টি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো- মাথাব্যথার পূর্বে দৃষ্টি সমস্যা (যেমন- ব্লাইন্ড স্পট বা ফ্লাশ লাইট দেখা), আলো সহ্য করতে না পারা ও বমিভাব। সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শে মাইগ্রেন প্রতিরোধী ওষুধ সেবন করতে হবে।

বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরানো ও বুকে ব্যথা- এগুলো হলো এট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের (এএফ) লক্ষণ। এই সমস্যাতে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন হয়। এটা রক্ত জমাটবদ্ধতা, স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিউর ও অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়। যাদের এএফ রয়েছে, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি পাঁচগুণ বেশি। 

রাগ সংবরণ করুন

হাইপারটেনশন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, রেগে গেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। যার রাগের প্রবণতা যত বেশি, তার স্ট্রোকের ঝুঁকিও তত বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সহজেই রেগে যান এবং অপরের প্রতি আগ্রাসী হন তাদের ঘাড়ের ধমনীর পুরুত্ব সহনশীল লোকেদের তুলনায় বেশি। ধমনীর অধিক পুরুত্ব স্ট্রোকের রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচিত।

স্ট্রোকের উপসর্গ: 

জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩০ শতাংশ নারী স্ট্রোকের দুটির বেশি উপসর্গ বলতে পেরেছেন। কিন্তু মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকি এড়াতে স্ট্রোকের গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গগুলো মনে রাখতে হবে। যেমন: গাল বেঁকে যাওয়া বা ঝুলে পড়া, গাল অসাড় হওয়া, বিকৃত হাসি, দৃষ্টি সমস্যা, হাত-পায়ে দুর্বলতা বা অসাড়তা, হাঁটতে সমস্যা, কথা জড়িয়ে যাওয়া বা অস্পষ্ট কথা। এসব উপসর্গের কোনোটি দেখা দিলে জরুরি বিভাগে যেতে হবে। চিকিৎসা নিতে যত দেরি হবে, মস্তিষ্কের তত ক্ষতি হবে এবং জটিলতার ঝুঁকি বাড়বে।