লাইফস্টাইল

শবে মেরাজে বিশেষ নামাজ বা রোজা: ইসলাম কী বলে

‘শব’ ফার্সি শব্দ। এর অর্থ রাত। আর ‘মেরাজ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ ঊর্ধ্বগমন। যেহেতু আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর রাসুল এক রাতে ঊর্ধ্বজগতে ভ্রমণ করেছিলেন তাই সেই রাতকে শবে মেরাজ বলা হয়। আরবি ভাষায় একে লাইলাতুল মেরাজ বলা হয়। শবে মেরাজকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে বেশ কিছু প্রচলনসহ বিশেষ নামাজ ও রোজা রাখার প্রথাও প্রচলিত রয়েছে। শবে মেরাজ উপলক্ষে কোনো নামাজ বা রোজার বিধান কি আসলেই ইসলামে রয়েছে? এ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

অনেককে শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে সমবেত হতে দেখা যায়। বহু নারীও সেই রাতে নামাজ আদায় করার পদ্ধতি কী জানতে চান। বহু মুসলমান এই রাত উপলক্ষে মেরাজের রোজা রাখতে চান বা রাখার বিধান জানতে চান। অনেকেই শবে মেরাজের নামাজ বা রোজাকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করেন। নামাজ আদায় করা ও রোজা রাখা অবশ্যই পুণ্যের কাজ। কিন্তু শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোনো নামাজ ও রোজার বিধান ইসলামি শরিয়তে নেই। এ ব্যাপারে আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) তৎপ্রণীত লাতায়েফ ও মাআরেফ গ্রন্থে বলেন, ‘রজব মাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষ কোনো নামাজ নেই। রজব মাসের প্রথম জুমায় সালাতুর রাগায়েব প্রসঙ্গে যেসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট।’ 

অধিকাংশ আলেমের মতে, শবে মেরাজ উপলক্ষে নামাজ বিদআত। পরবর্তী যুগের আলেমগণের মধ্যে যারা এই মত ব্যক্ত করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আবু ইসমাঈল আনসারি, আবু বকর সামআনি, আবুল ফযল ইবনে নাসির ও আবুল ফারায ইবনে জাওযি (রহ.)সহ আরও অনেক আলেম। পূর্ববর্তী যুগের আলেমগণ এ ব্যাপারে আলোকপাত করেননি। কেননা এই বিদআত হিজরি চতুর্থ শতাব্দির পর প্রকাশ পেয়েছে। নবী করিম (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে রজব মাসের রোজা সম্পর্কেও বিশুদ্ধ কোনো হাদিস বর্ণিত নেই। 

শবে মিরাজ উপলক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো নামাজ আল্লাহর রাসুলের হাদিসের মাধ্যমে অথবা সাহাবিদের আমলের মাধ্যমে অথবা তাবেয়িদের আমলের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়নি। এ রাতের কোনো ইবাদত আল্লাহর রাসুলের কোনো হাদিসের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়নি। ভিন্ন কোনো নামাজ, বিশেষ কোনো নামাজ আদায় করার কোনো প্রয়োজন নেই। অন্যান্য রাতের মতোই এ রাতে নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন। সেটা স্বাভাবিক নিয়ানুযায়ী আগে যেভাবে আদায় করতেন সেভাবেই আদায় করতে পারবেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই। আল্লাহ এবং তার রাসুল (সা.) শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোনো নামাজ আদায় করা, রোজা রাখা, খাওয়া-দাওয়া করা এবং রাত জেগে ইবাদত করার কোনো হুকুম আমাদের দেন নাই।

শবে মেরাজ উপলক্ষে নফল রোজা রাখার কোনো বর্ণনা কোরআন-হাদিসের কোথাও নেই। আল্লাহর রাসুল ও তার অনুসারীরা এই দিনে বিশেষভাবে কোনো রোজা রেখেছেন এমনে কোনো বর্ণনা ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এই দিনে শবে মেরাজ উপলক্ষে রোজা রাখা কোনো ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না।