লাইফস্টাইল

রোজা রেখে নৈশপতন হলে কী হবে?

ঘুমন্ত অবস্থায় রাগমোচন, নিদ্রারতি, যৌনস্বপ্ন বা নৈশপতনকে সাধারণ ভাষায় স্বপ্নদোষ বলা হয়। এটি প্রাকৃতিক একটি বিষয়। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষমাত্র এটি হয়ে থাকে। বিষয়টি বলা বা লেখায় লজ্জার কিছু নেই। ইসলামি শরিয়তের সমাধান জানতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। কেউ রোজা রেখে ঘুমালে আর সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার এই সময়টুকুতে স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙবে না। কারণ এটা রোজাদারের অনিচ্ছায় ঘটে। 

সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি জিনিস রোজাকে ভাঙে না- শিঙা, বমি, স্বপ্নদোষ। (তিরমিজি শরিফ, মিশকাত শরিফ)। অবশ্য এমন আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো সংঘটিত হলে রোজা ভাঙে না। এই লেখার শেষের দিকে এ জাতীয় ১০টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে ব্যক্তি ও পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন।

ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আলেমদের ঐকমত্য হচ্ছে, কারো স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙবে না। কারণ সে এক্ষেত্রে অপারগ। যেমন অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটি মাছি উড়ে এসে অসাবধানতাবশত কারো পেটে ঢুকে গেলে, সেক্ষেত্রেও সে অপারগ। (আল-মাজমু)

শায়খ বিন বাজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যে ব্যক্তি দিনের বেলা ঘুমিয়েছে এবং তার স্বপ্নদোষ হয়েছে, বীর্যও বের হয়েছে; সে কি ওই দিনের রোজার কাজা পালন করবে? জবাবে তিনি বলেন, তার ওপর কাজা আবশ্যক নয়। কেননা স্বপ্নদোষ তার ইচ্ছাধীন নয়। কিন্তু তার ওপর গোসল ফরজ; যদি বীর্য দেখে থাকে। (মাজমুউল ফাতাওয়া ১৫/২৭৬)

কাজা হলো, একটি রোজার বদলে শুধু একটি রোজা পালন করা। আর কাফফারা হলো, একটি রোজার বদলে একটানা ৬০টি রোজা রাখা। একটানা ৫৯টি রেখে ৬০তম দিনে রোজা না রাখলেও আবার এক থেকে গণনা শুরু করতে হবে।

শায়খ উসাইমিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকেও এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেন, তার রোজা শুদ্ধ হবে। স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভাঙবে না। কেননা স্বপ্নদোষ তার ইচ্ছাধীন নয়। ঘুমন্ত অবস্থায় কলম তুলে রাখা হয়। এক্ষেত্রে ঘুমন্ত মানুষের কোনো হাত থাকে না।

যে ব্যক্তির রোজা, হজ বা উমরার ইহরাম অবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়েছে তার কোনো গুনাহ নেই; তার উপর কাফফারা নেই। এটি তার রোজার ওপর, হজের ওপর বা উমরার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। সে বীর্যপাত করে থাকলে তার গোসল করা ফরজ। এ অবস্থায় গোসলের তিন ফরজ আদায় করে গোসল করা ছাড়া সে পবিত্র হবে না। গোসলের তিন ফরজ হলো:

ক. নাকে পানি দেওয়া খ. গড়গড়াসহ কুলি করা এবং গ. পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করা। শরীরের একটি পশমও শুকনো থাকলে শরীর পবিত্র হবে না।

রোজা নষ্ট না-হওয়ার আরও ১০টি কারণ: ১. অনিচ্ছাকৃত গলার ভেতর ধুলা-বালি, ধোঁয়া অথবা মশা-মাছি প্রবেশ করা ২. অনিচ্ছাকৃত কানে পানি প্রবেশ করা ৩. অনিচ্ছাকৃত বমি অথবা ইচ্ছাকৃত অল্প পরিমাণ বমি করা (মুখ ভরে নয়) ৪. বমি আসার পর নিজে নিজেই ফিরে যাওয়া ৫. চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করা ৬. ইনজেকশন নেওয়া ৭. ভুলক্রমে কিছু খেয়ে ফেলা ৮. শরীর ও মাথায় তেল ব্যবহার করা ৯. ঠান্ডার জন্য গোসল করা ১০. সুগন্ধি ব্যবহার করা বা অন্য কিছুর ঘ্রাণ নেওয়া

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম