লাইফস্টাইল

এ বছর এত গরম কেন?

চলতি বছর অন্যান্য বছরের চেয়ে গরমের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। গরমে শরীর না ঘামলেও অনুভূত হচ্ছে তীব্র তাপ; যেন শরীর পুড়ে যাচ্ছে! আবহাওয়ার এমন বৈরিভাব নিকট অতীতে দেখা যায়নি। আরো অবাক করা বিষয় হলো, অনেকের ঠোঁট ফাটছে। আমরা সাধারণত শীতে ত্বকের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। আবহাওয়াবিদ ও চিকিৎসকদের মতে, বাতাসের আদ্রতা কমে যাওয়ায় এবার এ ধরনের অসহ্যকর গরম অনুভূত হচ্ছে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে ঠোঁট ফাটার মতো অস্বস্তিকর শারীরিক পরিস্থিতি।  

বাতাসের আদ্রতা কমে বাতাস শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ফলে সূর্যের তাপ শরীর থেকে পানি শুষে নিচ্ছে। ফলে আমাদের ত্বক জ্বালাপোড়া করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শীতকালে দেশের আকাশে উত্তর থেকে পূর্ব দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। তখন বাতাস শুষ্ক হয় এবং ঠোঁট ফাটে। 

অন্যদিকে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বাংলাদেশের আকাশে দক্ষিণ থেকে পশ্চিমে বাতাস প্রবাহিত হয়। এই বাতাসে যুক্ত হয় বঙ্গোপসাগরের প্রচুর জলীয় বাষ্প। ফলে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ থাকে বেশি। এ অবস্থায় গরমে ঘাম হয়। শরীর ঘামলে তেমন জ্বালাপোড়া করে না। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশান্ত মহাসাগরে তৈরি হওয়া এক বিশেষ পরিস্থিতি এ বারের গরমের জন্য অনেকাংশে দায়ী। আমাদের পৃথিবীর জলবায়ু একস্থানে পরিবর্তন ঘটলে সর্বত্রই এর প্রভাব পড়ে এবং পরিবর্তন ঘটে। সাধারণত প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে বাতাস প্রবাহিত হয়। এই বায়ুপ্রবাহকে বলা হয় ট্রেড উইন্ড। সাগরের গরম বায়ু এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দিকে সাগরতলের শীতল পানি উপরে উঠে আসে। এ অবস্থাকে বলে আপওয়েলিং। 

আপওয়েলিংয়ের কারণে প্রশান্ত মহাসাগরের অস্থিতিশীল আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। তখন এশিয়া অঞ্চলে প্রচুর মেঘ ও বৃষ্টি হয়। এই স্বাভাবিক প্রক্তিয়া অতিরিক্ত হারে বেড়ে গেলে তাকে বলা হয় ‘লানিনা’। যদি প্রশান্ত মহাসাগরের বায়ু উল্টো দিকে প্রবাহিত হয় তাকে বলে ‘এল নিনো’। যে বছর এল নিনো হয় সে বছর এশিয়া অঞ্চল থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় শীতল বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে।  প্রতিটি এল নিনো ও লানিনার জন্য আবহাওয়া বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়।

চলতি বছর লানিনা প্রভাবের কারণে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বাতাস প্রবাহের স্বাভাবিক গতি কমে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশের উপর দিয়ে দক্ষিণ থেকে পশ্চিমে বাতাস প্রবাহিত না হয়ে উত্তর থেকে  পশ্চিমে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে এত গরম পড়েছে বলে ধারণা অনেক বিশেষজ্ঞের।

এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, ‘এত গরমের কারণ হচ্ছে,  এ সময় সাধারণ যে বৃষ্টিপাত হবার কথা সেটা হচ্ছে না। জুন মাসের এক তারিখে কক্সবাজারে বর্ষাকাল শুরু হয়। ৩১ মে শুরু হয় টেকনাফ, ২ জুন চট্টগ্রাম, তারপর এটা বাড়তে বাড়তে সিলেট, মধ্যাঞ্চল ঢাকা এবং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এখনো এটি শুরু না হওয়ার কারণে দেশের আবহাওয়া গরম।’

‘আজ ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রাজশাহীতে রেকর্ড করা হয়েছে। এর চেয়েও বেশি তাপমাত্রা গিয়েছে কিন্তু মানুষের মধ্যে এত অস্বস্তি ছিল না। বিষয়টি উল্লেখ করে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘তার প্রধান কারণ হচ্ছে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি। মূলত বর্ষা আসতে দেরী হওয়ার জন্য গরমটা বেশি।’

এ প্রসঙ্গে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমান বলেন, ‘প্রতি বছর এ সময় ভালো গরম পড়ে। তবে এবার একটু বেশি। এখন  রোদের সঙ্গে বাতাসও থাকার কথা কিন্তু সেটা নেই। আকাশে মেঘ হচ্ছে কিন্তু নিচে তাপের চাপ এত বেশি যে মেঘ উপর থেকেই জলীয় বাষ্প হয়ে যাচ্ছে- বৃষ্টি হচ্ছে না।’

কয়েকদিনের মধ্যেই বৃষ্টি হবে- এই আশাবাদ ব্যক্ত করে ড. আতিক রহমান আরো বলেন, ‘নিচে গরম আর উপর থেকে বৃষ্টি নামলে সেটা ঠিক হবে কিন্তু সেটা জলীয় বাষ্প হয়ে নামছে তাই কোনো কাজ হচ্ছে না। উত্তর গোলার্ধে এবার বেশি গরম পড়েছে। এর কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এই বিরূপ প্রভাব। বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাবও পড়েছে। এল নিনো কিংবা লানিনার প্রভাবও রয়েছে।’