জাপানে কাজ শুধু দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা বা সফলতা সম্পর্কে নয় — এটি অনুভূতি, অস্থায়িত্ব এবং কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। জাপানিদের ‘Mono no Aware’ নামের একটি মৌলিক জাপানি দার্শনিক ধারণা রয়েছে। যা বস্তু এং অস্থায়িত্বের প্রতি সচেতনতা বোঝায়। এটি জীবন ও অভিজ্ঞতার ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতির প্রতি গভীর, মিষ্টি-দুঃখী কৃতজ্ঞতার অনুভূতিকে বোঝায় — এই দর্শন বিষণ্ণতা ও সৌন্দর্যকে একসঙ্গে অনুভব করার তাগিদ দেয়।
দর্শনটি সাধারণত সাহিত্য, শিল্প ও প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত যেমন— চেরি ফুলের ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্য) — তবে Mono no Aware-এর কর্মজীবন এবং পেশাগত জীবনের ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব রয়েছে। এটি আমাদের শেখায় কীভাবে কাজের প্রতি মনোযোগ, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা, এবং সব কিছুই অন্তঃস্থায়ী — এমন সচেতনতা নিয়ে এগোতে হয়। যেভাবে এই দর্শন চর্চা করতে পারেন—
ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলোতে অর্থ খুঁজে পাওয়া কাজ শুধুমাত্র ফলাফলের উদ্দেশ্য নয় — বরং নিজেই একটি অভিজ্ঞতা। পেশাজীবীরা প্রতিটি কাজ, প্রকল্প বা চ্যালেঞ্জকে পূর্ণ উপস্থিতি ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করতে পারেন। এতে কাজটি আরও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে।
পরিবর্তন ও রূপান্তর গ্রহণ করা ক্যারিয়ার পরিবর্তিত হয়, কোম্পানি কাঠামো পরিবর্তিত হয়, কাজের ভূমিকা বদলে যায়। পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই না করে পরিবর্তনকে ভালোভাবে গ্রহণ করার চেতনা তৈরি করতে পরেন। এতে চাপ কমে এবং অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হলে সহনশীলতা বাড়ে।
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা ও সহানুভূতি এই দর্শন আবেগের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ায়—যার ফলে কর্মজীবনে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে। সহকর্মীদের অনুভূতি বোঝা, টিমওয়ার্ককে মূল্যায়ন করা, এবং মানবিক সংযোগকে গুরুত্ব দেওয়া সহ-কার্য দক্ষতা ও কাজের সন্তুষ্টি বাড়াতে পারে।
উল্লেখ্য, জাপানি কাজের সংস্কৃতি সাধারণত নিখুঁততা ও শৃঙ্খলার ওপর জোর দেওয়া হয়, কিন্তু Mono no Aware একটি কোমল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে—একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা জীবনের অসম্পূর্ণতা ও প্রচেষ্টার সৌন্দর্যকে স্বীকার করে। এর ফলে কর্মীরা অত্যাবশ্যক চাপ ও বার্নআউট কমাতে পারে।
সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস