মার্চ স্পেশাল

মদ্যপানে ৭ ধরনের ক্যানসার!

মনিরুল হক ফিরোজ : সাম্প্রতিক একটি বড় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নিয়মিত অতিরিক্ত মদ্যপান এমনকি নিয়মিত সামান্য মদ্যপানের ফলে শুধু লিভার (যকৃত) ক্যানসার নয়, বরঞ্চ আরো ৬ ধরনের ক্যানসার হতে পারে।

 

অর্থাৎ ৭টি ভিন্ন ধরনের ক্যানসারের জন্য সরাসরি দায়ী অ্যালকোহল। মদ্যপানের ফলে ৭ ধরনের ক্যানসারের জোড়ালো প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা।

 

এছাড়া এতদিন ধারণা করা হতো, অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে সমস্যা হয় কিন্তু নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক তথ্যমতে, কম পরিমান অ্যালকোহল পানেও ক্যানসার ঝুঁকি রয়েছে।

 

গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন যে, মদ্যপান মুখ এবং গলা, স্বরযন্ত্র, অন্ননালী, যকৃত, মলাশয়, অন্ত্র এবং স্তন ক্যানসার ঘটায়।

 

ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গবেষক জেনি কনার বলেন, প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, ‘মদ্যপানকে হালকাভাবে নেওয়া যায় ক্যানসারের জন্য মদ্যপানের এমন কোনো নিরাপদ স্তর নেই।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘মদ্যপানের অনুমিত স্বাস্থ্য উপকারিতা- যেমন রেড ওয়াইন হার্টের জন্য ভালো- এটা আসলে ক্যানসারের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি বৃদ্ধির তুলনায় অপ্রাসঙ্গিক।’

 

‘আমরা জোড়ালো প্রমাণ পেয়েছি যে, মদ্যপান শরীরের ৭টি জায়গায় ক্যানসার তৈরির জন্য সরাসরি দায়ী এবং সম্ভবত শরীরের আরো কোনো জায়গায়।’

 

মদ্যপান কীভাবে শরীরে এই ক্যানসার বৃদ্ধি করে, সেই জৈবিক প্রক্রিয়া অজ্ঞাতসার থাকলেও এপিডেমিওলজিকাল প্রমাণ বলে যে, অ্যালকোহল মুখ এবং গলা, স্বরযন্ত্র, অন্ননালী, যকৃত, মলাশয়, অন্ত্র ও স্তন ক্যানসার ঘটায়। গত এক দশকের অ্যালকোহলভিত্তিক ক্যানসার গবেষণার তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষন ও পরীক্ষা করে গবেষকরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

 

মদ্যপানে ক্যানসার ঝুঁকির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে মুখের ক্যানসার। জেনি কনার বলেন, যারা দৈনিক ৫০ গ্রাম অ্যালকোহল পান করেন মুখের ক্যানসারের ঝুঁকি তাদের ৭ গুণ বেশি, যারা মদ্যপান করেন না তাদের তুলনায়।

 

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন অ্যালকোহল এবিউস অ্যান্ড অ্যালকোহলিজম-এর মতে, গড় মদ্যপান যেমন একটি রান অব মিল বিয়ার অথবা সাধারণ ওয়াইনে প্রায় ১৪ গ্রাম অ্যালকোহল থাকে।

 

সুতরাং ক্যানসার ঝুঁকির ক্ষেত্রে জেনি কনার বলেন, যে ব্যক্তি কম হিসেবে দিনে ৪ বার মদ্যপান করে সেও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

 

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, নিয়মিত মদ্যপানের কোনো নিরাপদ স্তর নেই।

 

অন্যান্য গবেষকরা নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গবেষক জেনি কনারের এই সাম্প্রতিক গবেষণায় সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। যেমন ওয়ার্ল্ড ক্যানসার ফাউন্ডেশনের সায়েন্স প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুজানা ব্রাউন বলেন, ‘অ্যালকোহল থেকে ক্যানসার ঝুঁকি বেড়ে চলেছে এবং আমরা একমত যে, মদ্যপানের সঙ্গে নানা ধরনের ক্যানসার ঝুকির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।’

 

নতুন এই গবেষণাপত্র অ্যাডিকসন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

 

গবেষণার তথ্য সত্ত্বেও, সত্যিকার অর্থে কেউ এটা জানে না যে, ক্যানসার এবং অ্যালকোহলের মধ্যে যোগসূত্র কেন বিদ্যমান। এক্ষেত্রে অবশ্য প্রচলিত একটি অনুমান রয়েছে যে, অ্যালকোহল মানব দেহের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা ক্যান্সার কোষ গঠনের নেতৃত্ব দেয়। কিন্তু এ ব্যাপারে যতদিন না পর্যন্ত আরো ব্যাপক গবেষণা না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত মদ্যপানের দরুন ক্যানসার সৃষ্টির সঠিক কারণটি আসলে কেউ জানে না। 

 

তথ্যসূত্র: মিরর ও সায়েন্স অ্যালার্ট

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জুলাই ২০১৬/ফিরোজ