মিডিয়া

ফটোসাংবাদিক নুরুদ্দীনের যাবজ্জীবনে সাংবাদিক-আইনজীবীদের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক : একটি হত্যা মামলায় জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির পরিচালক নুরুদ্দীন আহমেদকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক ও আইনজীবীরা। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা তাদের ক্ষোভের কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য দেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি বলেন, ‘মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে তিনি (নুরুদ্দীন) ফ্রিডম পার্টির নেতা ছিলেন। বাস্তবে এর কোনো সত্যতা নেই। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষীও এমন কথা বলেননি।’ সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘যখন এই ঘটনা ঘটে তখন তিনি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় ফটোসাংবাদিক হিসেবে ছিলেন। তিনি সেদিন অফিশিয়াল অ্যাসাইনমেন্টে ময়মনসিংহ যাত্রা করেন। কিন্তু ময়মনসিংহে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় আর যাননি। সুতরাং পরিষ্কার যে তিনি কারো ইনটেনশনের (অভিসন্ধি) শিকার। তাঁকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’ বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, ‘যে মামলায় তাঁর ব্যাপারে এই রায় দেওয়া হয়েছে, সে ঘটনার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। তিনি সাংবাদিক ছাড়া অন্য কিছু ছিলেন না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার ছিলেন- এমন বিষয়ও মামলার আমলে আনা হয়েছে। আমরা পত্রিকায় তা-ই দেখেছি। কিন্তু এই ঘটনার সময় তো তিনি পুরোপুরিভাবে মিল্লাতের সাংবাদিক। তখন তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। আজ অবধি ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবুও কেন তিনি ন্যায়বিচার পেলেন না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আশা করছি উচ্চ আদালত এ বিষয়ে সঠিক মূল্যায়ন করবেন।’ সাংবাদিক নেতা রুহুল আমীন গাজী বলেন, ‘তিনি অপরাধী হলে আমরা এখানে আসতাম না। সাংবাদিক অপরাধ করলে তাঁর শাস্তি হোক, আমরাও তা চাই। কিন্তু বিনা অপরাধে কেন একজন সাংবাদিক শাস্তি ভোগ করবেন?’ সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, ‘শুধু নুরুদ্দীনের মুক্তির কথা ভেবে নয়, সারা দেশের পেশাজীবী সমাজ ও পেশাদার সাংবাদিকের অধিকারের কথা ভেবে সমগ্র সিভিল সোসাইটিকে এগিয়ে আসতে হবে।’ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তিনি সে সময় সম্পূর্ণরূপে পেশাদার সাংবাদিক ছিলেন। তাহলে কি বলব সাংবাদিকরা কি তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না?’ ইলিয়াস খান বলেন, ‘তিনি নিছক সাংবাদিক। এর বাইরে তাঁর কোনো পরিচয় নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ফটোগ্রাফার ছিলেন সে বিষয়টি আনা হয়েছে। সুতরাং আমি বলব, তাঁর মুক্তি অনিবার্য।’ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সাংবাদিক নুরুদ্দীন ন্যায়বিচার না পেলে তারা কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন। ফটোজার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন, ডিআরইউ, বিএফইউজে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহে ২৭ বছর আগের হারুন-অর-রশীদ হত্যা মামলায় গত ৯ মে বিএনপির নুরুদ্দীন আহমেদসহ ২৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মমতাজ বেগম এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে নুরুদ্দীন আহমেদ, আশরাফুল হক ও আবদুর রশিদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ মে ২০১৭/সাওন/শাহনেওয়াজ