মিডিয়া

‘নবম ওয়েজবোর্ড গঠনে যুক্তিসঙ্গত সমাধান খুঁজুন’

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজবোর্ড গঠনে যুক্তিসঙ্গত-বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে বের করতে তথ্যমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত ‘সাংবাদিকদের আনন্দ সম্মিলনী’অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উপলক্ষে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তথ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাংবাদিকদের সাথে কেন সংঘাতের রাস্তা তৈরি করছেন? সাংবাদিকরা ভিন্ন কোনো দ্বীপের বাসিন্দা নয়। তাদের সাথে আলাপ-আলোচনায় বসে যুক্তিসংগত-বাস্তবসম্মত একটা সমাধান খুঁজে বের করুন। একসময় দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় সাংবাদিকতা করা ওবায়দুল কাদের সাংবাদিক নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এখানে আছেন। তাদের সামনে বলতে চাই, শুনে শুনে লেখা, একজনে একটা রিপোর্ট লিখে এনেছে, ঠিক একই রিপোর্ট অন্য আরো অনেক মিডিয়াতে দিয়ে দিল। তার মানে হচ্ছে, অন্য কেউ যাননি, একজন গেছেন, তার রিপোর্টটাই অন্যরাও দিয়ে দিল। এই কাজটা হচ্ছে। সাংবাদিকতার নামে অপকর্ম ও দৌরাত্ম বন্ধ করতে সাংবাদিক নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বুকে একটা নোট বই, কলম ... ওসি, ইউএনও, ভূমি অফিস ... । এই সাংবাদিকগুলো থেকে একটু সাবধান থাকতে হবে। এদেরকে একটু শিক্ষা দিন। অনেকে সাংবাদিক বললেই কিন্তু সাংঘাতিক ভাবে। সারা দেশে যেখানে সেখানে টাঙানো দলীয় বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সৌজন্য বিলবোর্ড আছে, সৌজন্য ব্যানার আছে, শুধু হারিয়ে গেছে সৌজন্যবোধ। রাজনীতি থেকে সৌজন্যবোধ শব্দটি আজকে হারিয়ে গেছে। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা আমাদের বিবেকের কণ্ঠস্বর। মাঝে মাঝে যা অবস্থা দেখি তাতে খুব কষ্ট লাগে। একজনকে আমি জানি, আমার নির্বাচনী এলাকার আশে-পাশে। আমি জানি না, সে এক লাইন শুদ্ধ বাংলা লিখতে পারবে কি না? কিন্তু সে এক কাগজের করেসপনডেন্ট। এই ধরনের লোকগুলো যদি সাংবাদিক হয়! আপানাদের সাংবাদিকতার যে উৎকর্ষ, এটা ঠিক কি অবস্থায় নিয়ে গেছে! এখন তো ব্যাঙের ছাতার মতো কাগজ বের হচ্ছে। বিজ্ঞাপন নিচ্ছে। সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতা করা সাংবাদিকদের নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের এমন সমালোচনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিতদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়। অনেকে হাততালি দিয়ে তার বক্তব্যকে সাধুবাদ জানান। দৈনিক সমকালের সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কি যে অবস্থা সারওয়ার ভাই! দুর্ভিক্ষ লেগেছে সাংবাদিকতায়! ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি নিজেও একসময় সাংবাদিক ছিলাম, হয়ত জীবিকার জন্য ছিলাম। সেই হিসেবে সাংবাদিকদের দুঃখ-দুর্দশা, তাদের জীবনের কষ্টের ইতিহাস জানি। কি কষ্ট করে সাংবাদিকরা নিজে চলে এবং সংসার চালায়। বর্তমানে সাংবাদিকদের কম বেতন-ভাতার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, লেখাপড়া করে বড় সাংবাদিক হবে, সে পড়াশোন করবে কী? কারণ, একটা বিষয়ে লিখতে গেলে একটা মুড লাগে। এই মুড তৈরির বিষয়টি ভেরি ইমপর্টেন্ট। এখন আমার সংসারে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ দিতে পারছি না, বেতন দিতে পারছি না, বাড়িভাড়া দিতে পারছি না, এরকম অবস্থায় সে কী করে ভালো সাংবাদিকতা করবে, কী করে তার লেখার মানকে পড়াশোনা করে আরো উন্নত করবে? ওবায়দুল কাদের তথ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, মাননীয় তথ্যমন্ত্রীকে বলব, সাংবাদিকদের বিষয়ে খুবই মনোযোগের সঙ্গে, সতকর্তার সাথে নিজের চেতনা দিয়ে এবং ভালবাসা দিয়ে বিষয়টি দেখবেন। কারণ, এখানে একটা মানবিক বিষয়ও আছে। সেই মানবিক দৃষ্টিকোণও যেন উপেক্ষিত না হয়। কেন সংঘাতের রাস্তা তৈরি করছেন? সাংবাদিকরা তো ভিন্ন কোনো দ্বীপের বাসিন্দা নয়। তাদের সাথে বসে আলাপ-আলোচনা করুন। যুক্তিসংগত-বাস্তবসম্মত একটা সমাধান খুঁজে বের করুন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন আহ্বানকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান উপস্থিত সাংবাদিক নেতারা। বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক, ডিইউজের সভাপতি শাবান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ নভেম্বর ২০১৭/নৃপেন/রফিক