মিডিয়া

ইন্টার্নশিপের দিনগুলো

একজন শিক্ষার্থী কর্মজীবনে প্রবেশ করার আগে, সেই জীবন ও কর্ম পরিবেশ কেমন হবে তার বাস্তবসম্মত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করার অন্যতম উদ্দেশ্যে হলো ইন্টার্নশিপ।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র হিসাবে ইন্টার্নশিপের জন্যে গণমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করা ছিল  আমার প্রথম  ও একমাত্র পছন্দ। এই লক্ষ্য সামনে রেখে ইন্টার্নের জন্যে আমি বেছে  নিয়েছিলাম বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমকে।

দেশের অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেল, জাতীয় দৈনিক বাদ দিয়ে আমার প্রথম পছন্দ রাইজিংবিডি হওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণ ছিল।

এখানে একটি বিষয় না বললেই নয়, আমার বাসা যাত্রাবাড়ী থেকে রাইজিংবিডি অফিসে যাওয়া-আসা ৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় হতো। এটা আমার জন্যে অনেকটা চ্যালেন্জিং ছিল। 

দৈনিক ইত্তেফাকের স্পোর্টস ফটো সাংবাদিক ভুবন ভাইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমবারের মতো সিভি জমা দেওয়ার লক্ষ্যে নিয়ে রাইজিংবিডির অফিসে আসা। এর আগেও আমি অনেক গণমাধ্যম অফিসে গিয়েছি, সেই তুলনায় রাইজিংবিডির অফিস ছিল  সাজানো-গোছানো, পরিচ্ছন্ন ও অতিথিবান্ধব। 

আমার প্রথম দিনের গন্তব্য ছিল মিলটন আহমেদ ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। একজন মানুষ এত অসাধারণ হতে পারে এখানে না আসলে তা আমার জানার বাইরেই থেকে যেতো।  মিলটন ভাইয়ের  প্রতিটি কথা এত বেশি আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে যা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। প্রথমদিনেই ভাইয়ের কাছ থেকে ওয়ালটনের পণ্যসামগ্রী  উপহার পেলাম।  বাসায় ফেরার পথে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম যদি সুযোগ পাই তাহলে  রাইজিংবিডিতেই ইন্টার্ন করবো।

 ৮ ফেব্রুয়ারি ওয়ালটন করপোরেট অফিস থেকে ফোন দিয়ে জানানো হলো আমার লেটার ও আইডি কার্ড রেডি, এগুলো নিয়ে আসার জন্যে। রাতে অনেক কৌতূহল ছিলাম, কখন সকাল হবে, কখন অফিসে যাব। 

৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় করপোরেট অফিস থেকে লেটার ও আইডি কার্ড নিয়ে দুপুর ১২টায় রাইজিংবিডির অফিসে পৌঁচ্ছাই। আবারও মিলটন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা।  যিনি সহাস্যমুখ  নিয়ে একে একে সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।

রাইজিংবিডির উপদেষ্টা সম্পাদক উদয় হাকিম স্যারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। উদয় হাকিম স্যারকে  ত্রিবেণী প্রোগ্রামে অনেক আগে থেকেই দেখার কারণে স্যারকে অনেক বেশি পরিচিত মনে হলো।

প্রথমদিকে আমি কাজ শুরু করি হাকিম মাহি ভাইয়ের অধীনে। দ্বিতীয় দিনে ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুত্বের গল্প’ শিরোনামে একটি ফিচার লিখি। ঐদিন একটি নিউজ কিভাবে প্রকাশিত হয় এবং একজন সাব এডিটর কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করে নিউজ প্রকাশ করে সেই বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি। ডেস্কে কাজ করার নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি।

তৃতীয় দিন রাইজিংবিডির নির্বাহী সম্পাদক তাপস রায় স্যারের সাথে কথা হলো। তিনি আমার আগ্রহের জায়গা জানতে চাইলেন। আমি স্যারের পরামর্শ ও ব্যক্তিগত পছন্দ থেকে রিপোর্টিংয়ে কাজ করার কথা করলাম। আমাকে রিপোর্টিংয়ে নির্বাচিত করা হলো, সঙ্গে প্রধান প্রতিবেদক হাসান মাহামুদ ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন।  সেদিন থেকেই হাসান মাহামুদ ভাইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করলাম।

হাসান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ায় আমার ইন্টার্নের পুরো প্রক্রিয়াটা অনেক বেশি সহজ হয়ে গেলো। যদি এককথায় বলি হাসান ভাইয়ের আন্তরিকতায় ইন্টার্নের দিনগুলো আমি অনেক বেশি উপভোগ করেছি।

আমার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল পল্টনে নিউজ কাভার করা। এটায় প্রথমবারের মতো ফিল্ডে এসে নিউজ কাভার করার অভিজ্ঞতা। এর আগেও আমি ক্যাম্পাস রিপোর্টিং করেছি। আমার অনেক লেখা জাতীয় পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।  সেগুলো ছিল গতানুগতিক।

এই প্রথমবার সরাসরি স্পটে এসে নিজে ছবি তুলে, বক্তব্য তাৎক্ষণিক নোট করে, মোবাইল ফোনে লিখে হাসান ভাইয়ের ই-মেইলে পাঠানো। পুরো প্রক্রিয়াটা ছিল আমার কাছে অনেক চ্যালেন্জিং।

 আমি বাসায় এসে অধীর আগ্রহে নিউজ প্রকাশিত হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করছি। সন্ধ্যায় আমার নিউজ প্রকাশিত হলো। নিজের তোলা ছবি, নিজের লেখা নিউজ, নিজের নাম দেখতে পেয়ে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতে শুরু করলো, যা এর আগে কখনো হয়নি।

এভাবেই গত ৬০ দিনে প্রেসক্লাব, রিপোটার্স ইউনিটি, পল্টন মোড়, বাংলা একাডেমি, মতিঝিল শাপলাচত্বর, সিরডাপ মিলনায়তন, কমলাপুর রেলস্টেশনসহ অসংখ্য জায়গায় নিউজ সংগ্রহের জন্যে গিয়েছি। অনেক নিউজ ডেস্কে পাঠিয়েছি। কিছু নিউজ প্রকাশিত হয়েছে, কিছু প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু প্রতিটি দিন ছিল নিজের ভুলগুলো সংশোধন করে নিউজে নতুন মাত্রা যোগ করার তাড়না। 

এই কয়েক দিনে সাংবাদিকতার প্রতি আমার অনেক ভালোলাগা, ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। সাংবাদিকতা অনেক চ্যালেন্জিং, সম্মানিত সেই সাথে অনেক আনন্দের একটি পেশা। প্রতিদিন নতুন নতুন সংবাদকর্মীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। প্রতিটি দিন ছিল নতুন কিছু শেখা, নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সমাহার।

গত দুই মাসে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক  পছন্দের  মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে।  রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছ থেকে দেখতে পেয়েছি, তাদের কথা শুনতে পেরেছি। তাদের বাচনভঙ্গি, দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি বিষয়ে জেনেছি। যা আমার  নিজের জীবনের স্বপ্নপূরণের ইচ্ছাকে বহুলাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাইজিংবিডির সাথে আমার জার্নিটা যদিও অল্পদিনের ছিল, কিন্তু রাইজিংবিডিতে আসার পর আমি সবচেয়ে বেশি বিমোহিত হয়েছি এখানের কর্ম পরিবেশ দেখে। একটা অফিসে সবার আচরণ এত আন্তরিক  হতে পারে এটা কখনো আমার কল্পনায় ছিল না। 

উদয় হাকিম স্যারের হঠাৎ হঠাৎ আগমন নিউজরুমে প্রাণ ফিরে পেতো।  তাপস রায় স্যারের প্রাণবন্ত, সজীব সতেজ কথাবার্তা, নিউজরুমে আনাগোনা সব মিলিয়ে ছিল এক অসাধারণ।

প্রতিদিন অফিসে গিয়েই মারুফ হোসাইন ভাইয়ের সাথে কথা হতো। ভাই আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।  সাইফ ভাই, আমিরুল ভাই, রাহাত সাইফুল ভাই, মেসবা য়াযাদ, মনজুরুল ইসলাম, হাসিবুল ইসলাম, টিপু ভাই, ইভা আপু, ইয়াসিন  ভাইসহ সবাই সহযোগিতা করেছেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র হিসাবে একাডেমিক পড়াশোনায় যেকোনো সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে যে নিয়মকানুনগুলো পড়ে এসেছি, রাইজিংবিডিতে তার চমৎকার প্রয়োগ দেখেছি। বস্তুনিষ্ঠতা, সংবাদের তাৎক্ষণিকতা, মানবিক আবেদনমূলক নিউজগুলো ফলাও করে প্রচার করা, সংবাদের ইতিবাচক, সুস্পষ্ট শিরোনাম, শব্দচয়ন, নিউজের  ক্যাটাগরি সবকিছুই অসাধারণ মনে হয়েছে।

শেষদিকে এসে আমি একজন অসাধারণ মিশুক বন্ধুসুলভ ভাইয়ের গল্প শোনাতে চাই, তারুণ্য যার প্রতীক। তিনি এম এম কায়সার ভাই। যার অনুপ্রেরণায় আমার এই লেখা। যার সাথে ফোনে দুই মিনিট কথা বলে আমি সাংবাদিকতার স্পিড খুঁজে পেয়েছি।

সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভালো একজন সাংবাদিক হওয়া। স্বপ্ন, ইচ্ছে দুটোই আছে বাকিটা সুযোগের অপেক্ষায়। রাইজিংবিডি পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়