মিডিয়া

সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার চান আনিসুল হক

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও লেখক আনিসুল হক বলেছেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলাটি প্রত্যাহার করা হোক।

রোববার (২৩ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর আদালত পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকা এবং পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে রোজিনা ইসলামকে জামিনের আদেশ দেন। জামিন আদেশ হওয়ার পর এ কথা বলেন আনিসুল হক।

সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, আমি আবেগ, আপ্লুত। সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধানে প্রদত্ত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা যে সংহতি দেখিয়েছেন এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।  এ কাজটা আপনারা করেছেন।  আপনারা প্রথম দিন সচিবালয়ের ভেতরে সজাগ ছিলেন।  সচেতন ছিলেন, সক্রিয় ছিলেন।  শাহবাগ থানায় এসে আপনারা (সাংবাদিক) সারারাত ছিলেন এবং প্রখর রোদে-বৃষ্টিতে ঘুমোননি।  জেগে আছেন। আপনাদের কারণেই বাংলাদেশ জেগে উঠেছে।

আনিসুল হক বলেন, সংবাদপত্রে স্বাধীনতা সুশাসন নিশ্চিত করে, দুর্নীতি কমায়। জনগণের যে মৌলিক অধিকার আছে তথ্য জানার সেটাকে নিশ্চিত করাও আমাদের কর্তব্য, সাংবিধানিক অধিকার।  প্রথম আলো আইনের শাসন বিশ্বাস করে। আইনের প্রতিকার পাওয়াতেই আমাদের আস্থা আছে।  সেই হিসেবে সব সময় আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার ওপর আস্থা রাখি। এক ধাপ হলো, রোজিনার জামিন হলো। পরবর্তীতে প্রথম আলো রোজিনার কাছ থেকে এ বিষয়ে আইনানুগ যে প্রতিকার পাওয়ার সেটার জন্য শেষ পর্যন্ত আমরা লড়াই করবো।  একজন নাগরিক, লেখক, সাংবাদিক হিসেবে দাবি, মামলাটি নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক।

তিনি বলেন, মামলায় আমরা যেটা শুনেছি, বিশেষ করে টকশোগুলোতে ব্যারিস্টার, আইনজীবী বলেছেন, মামলায় কোনো ম্যারিট নাই।  তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে অযথা শুধু হয়রানি করার জন্য মামলাটি চালিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। সারাদেশের সাংবাদিকদের মুখোমুখি করাটাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। ব্যাপারটাকে অনেক জটিল না করে মামলার ফয়সালা করুন।

আনিসুল হক বলেন, যারা রোজিনাকে হয়রানি করেছে, যে ভিডিওগুলি অন্যায়ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে তো রোজিনার প্রাইভেসি আবার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।

হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, আগে তো রোজিনাকে পেতে হবে আমাদের। রোজিনা এখনো আমাদের মাঝে এসে পৌঁছায়নি।  উনি এবং ওনার আইনজীবীরা মিলে সিদ্ধান্ত নিবেন মামলা করবেন কি না। এটা আবেগের বিষয় না, আইনের বিষয়। সব বিষয়ে পরামর্শ আইনজীবীদের মাধ্যমে নিয়ে করতে হবে। তবে আমি বলি, বাংলাদেশ এবং এর বাইরের বিবেকমান মানুষেরা, নাগরিকরা, সাংবাদিকেরা যে ঐক্য, সংহতি দেখিয়েছেন এটা অব্যাহত রাখতে হবে, জারি রাখতে হবে।  শুধু রোজিনার ক্ষেত্রে না, এটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, নাগরিকের অধিকার, চলাচলের অধিকার, নাগরিকের মোবাইল ফোন নিজের কাছে রাখার অধিকার এটা তো ব্যক্তিগত বিষয়।  এগুলো তো আপনি কেড়ে নিতে পারেন না। আদালতের মাধ্যমে বিশেষ ওয়ারেন্ট জারি করে এটা নিতে পারেন।  আমার শরীর আপনি তল্লাশি করতে পারেন না।  এগুলো জন্য তো আইন আছে।  যাই হোক আমি আইন নিয়ে কথা বলতে চাই না। এটা আইনজীবীরা বলবেন। তবে আমাদের নাগরিকদের সচেতন থাকতে হবে। যেন নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়। এটা আমাদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। এ অধিকার ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি। এখানে বিশেষ ক্যাটাগরিতে বলা আছে, সংবাদপত্রকে স্বাধীনতা দেওয়া হলো। এটা আমাদের চোখের মনির মতো সাংবিধানিক অধিকারকে রক্ষা করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উদ্বৃতি তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু একটা কথা বলেছিলেন, সত্য এবং মিথ্যার যুদ্ধ একটা দীর্ঘস্থায়ী। খণ্ডযুদ্ধে মিথ্যা জয়ী হয়। কিন্তু চূড়ান্ত যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত সত্যই জয়ী হয়।