মটো কর্নার

নতুন বাইক কেনার সময় যা যা চেক করবেন

আমরা জানি সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কিনতে গেলে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ভালোভাবে দেখেশুনে না কিনলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

ঠিক তেমনি নতুন বাইক কিনতে গেলেও দেখে শুনে বুঝে, ভালো করে পরীক্ষা করে কিনতে হবে। ভাবছেন কী যা তা বলছি? নতুন বাইকের আবার চেক কিসের? জি, ঠিকই বলছি। নতুন বাইক কেনার সময় কিছু জিনিস চেক করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণটা ব্যাখ্যা করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। 

প্রথমত, উৎপাদনের সময় ১০০ বাইকের মধ্যে সবকয়টিই নিখুঁত হয় না। কারণ প্রতিটি বাইকেই ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টের মেশিনপত্র এবং কর্মীদের কর্মকাণ্ডের কারণে ত্রুটিযুক্ত হতে পারে। ৩ থেকে ৫ শতাংশ বাইকে ছোট বড় কিছু ত্রুটি থেকেই যায়। কোয়ালিটি চেকে বড় ত্রুটি ধরা পড়লেও ছোটখাটো ত্রুটি অনেক সময় দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। এই ত্রুটিগুলোকে বলা হয় ম্যানুফ্যাকচারিং ফল্ট। 

দ্বিতীয়ত, বাইকগুলো যখন কারখানা থেকে শোরুমে আসে তখন ট্রাক বা পিকাআপে করে আনা হয়। লোড আনলোডিং এর সময় বিভিন্ন অংশে ঘষা লাগা, চাপ লাগা, ফেটে যাওয়া, বেঁকে যাওয়া এমনকি ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। যেগুলো চোখে পড়ে সেগুলো ঠিকঠাক করে দেওয়া হয় বাইক ডেলিভারির আগে। কিন্ত এখানেও কিছু জিনিস নজর এড়িয়ে যেতে পারে। 

তৃতীয়ত, বাইকের রিভিউ করার জন্য, বিজ্ঞাপন বানানোর জন্য বা টেস্ট রাইড দেওয়ার জন্য যে নতুন বাইকগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো কোথায় যায় এই প্রশ্ন হয়তো কখনো আপনার মাথায় আসেনি। সেই ব্যবহৃত বাইকগুলোও কিন্তু ধুয়ে মুছে অথবা প্রয়োজনীয় পার্টস পরিবর্তন করে আপনার আমার কাছেই বিক্রি করা হয়। যদিও এই ব্যাপারটা কেউ স্বীকার করতে চাইবে না, তবে এটাই সত্য। 

তাই, প্রতিটা নতুন বাইক কেনার আগে ভালো করে পরিদর্শন করা উচিত। যে বিষয়গুলো প্রাথমিকভাবে চেক করা উচিত তা বলছি…

✅ সবার আগে ট্যাংকের মুখ খুলে উঁকি দিয়ে দেখবেন ট্যাকের ভেতরে মরিচা আছে কি-না। নতুন বাইকের ট্যাংকে জং বা মরিচা থাকার কথা না। যদি মরিচা থাকে সেই বাইক কখনোই কিনবেন না। ট্যাংকের ভেতরের অংশ সাধারণত মরিচারোধী ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়। যদি নতুন বাইকের ট্যাংকের মুখে মরিচা দেখতে পান তাহলে বুঝে নিবেন বাইকটি অত্যন্ত নিম্নমানের মেটাল দিয়ে বানানো হয়েছে। 

✅ চেক করবেন বাইকের বডির বিভিন্ন পার্ট। এগুলোতে কোনো দাগ বা ঘষার চিহ্ন আছে কিনা দেখুন। 

✅ চেক করবেন বাইকের চেইন। ভালো ব্র্যান্ডের বাইকের সাথে ভালো ব্র্যান্ডের চেইন আসে। যেমন রোলন, DID ইত্যাদি ব্রান্ডের চেইন। চেইনের প্রতিটি লিংকে খোদাই করে ব্র্যান্ডের নাম লেখা থাকবে। যদি দেখেন চেইনের গায়ে কোনো লেখা নেই তাহলে বুঝতে হবে নিম্নমানের সস্তা এবং ননব্র্যান্ড চেইন সেটা। এইসব চেইন বেশিদিন টিকবে না, তাছাড়া এগুলোর ছিড়ে যাওয়া, মরিচা ধরার সম্ভাবনা প্রবল। 

✅ চেক করে দেখবেন টায়ারের উৎপাদনের তারিখ। নতুন বাইকের টায়ার সম্প্রতি উৎপাদন করা হয়েছে এরকম হওয়া উচিত। টায়ারের বয়স দীর্ঘদিন হয়ে গেলে সেই টায়ার থেকে কিন্তু ভালো গ্রিপ পাবেন না। 

✅ চেক করে নেবেন বাইকের সাথে থাকা ব্যাটারি এবং ব্যাটারির উৎপাদনের তারিখ। কেননা মেইনটেনেন্স ফ্রি ব্যাটারির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় ফ্যাক্টরি সিলড ব্যাটারি দেওয়া হয়। এই ব্যাটারি যদি ৩ থেকে ৬ মাস অব্যবহৃত অবস্থায় থেকে থাকে তাহলে সেগুলো অল্প দিনেই ডাউন হয়ে যাবে। তাছাড়া অনেক সময় অরিজিনাল ব্যাটারি বদলে লোকাল ব্যাটারি বাইকের ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়ার ঘটনাও বিরল নয়। 

✅ সুইচ টিপে দেখতে হবে বাইকের সব লাইট এবং ইন্ডিকেটর ঠিকঠাক কাজ করছে কি-না। 

✅ দুটি চাকা ফ্রি ঘুরছে কিনা এবং ব্রেক ফাংশন ঠিকমতো কাজ করছে কিনা এগুলা চেক করে দেখাও জরুরি। যদি দেখেন চাকা জ্যাম অথবা ব্রেক থেকে অস্বাভাবিক শব্দ আসছে তাহলে বুঝতে হবে এলাইনমেন্ট ঝামেলা আছে অথবা ডিস্ক কিংবা রিম টাল। 

✅ বাইকের হ্যান্ডেল মেজারমেন্ট ঠিক আছে কিনা দেখে নেবেন।। সেই সাথে সামনের শক অ্যাবজরভার ঠিকমতো ফিডব্যাক দিচ্ছে কিনা তাও দেখতে হবে। 

বাইকটি টেস্ট রাইড করলেও বুঝতে পারবেন সামনের T, হ্যান্ডেল, বল রেসার, এবং ফর্ক রডে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা। বাইক একদিকে টানে কিনা সেটাও বুঝতে পারবেন। 

✅ ট্যাংকে তেল ঢুকিয়ে দেখবেন তেলের মিটার ঠিকঠাক রিডিং দিচ্ছে কিনা। 

✅ ইঞ্জিনের সাউন্ড এবং ভাইব্রেশন লেভেল স্বাভাবিক কিনা তা অনুভবের চেষ্টা করবেন।

✅ বাইকের ওয়ারেন্টি পলিসি এবং ওয়ারেন্টির আওতায় কোন কোন পার্টস আছে সেটা খুব ভালো করে জেনে নেবেন। 

✅ বাইকের সাথে প্রাইমারি টুলবক্স এবং ইউজার ম্যানুয়াল বই বুঝে নেবেন। 

মোটামুটি এই বিষয়গুলো দেখেশুনে নিলেই আশা করা যায় ঠিকঠাক একটা বাইক পাচ্ছেন আপনি। 

 

লেখক:  অ্যাডমিন, বাইক ডক্টর বিডি