জাতীয় ক্রিকেট লিগ ২০১৭-২০১৮

সিলেটে দ্যুতি ছড়ালেন বোলাররা

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে : ইয়াসির আলীর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েও বড় সংগ্রহ পেল না চট্টগ্রাম বিভাগ। সিলেট বিভাগের বিপক্ষে ওয়ালটন আইওটি স্মার্ট ফ্রিজ ১৯তম জাতীয় ক্রিকেট লিগের শেষ রাউন্ডে প্রথম দিনেই অলআউট হয়েছে চট্টগ্রাম। নিজেদের মাঠে বোলিংয়ে ভালো করা সিলেট হাসিমুখে দিন শেষ করতে পারেনি। পড়ন্ত বিকেলে ৩টি উইকেট হারিয়ে তারাও ব্যাকফুটে। সব মিলিয়ে ১৩ উইকেটের দিনে ব্যাটসম্যানদের থেকে বোলাররা এগিয়ে। বুধবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চট্টগ্রাম বিভাগ সবকটি উইকেট হারিয়ে করেছে ২১৫ রান। জবাবে ৩ উইকেটে ৫৪ রান তুলে দিন শেষ করেছে সিলেট। রাজিন সালেহ ও সায়েম আলম অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। প্রথম ইনিংসে ১৬১ রানে পিছিয়ে সিলেট বিভাগ।  

দিনের শুরু থেকেই বল ব্যাটে আসছিল। ফ্ল্যাট উইকেটে টস জিতে সিলেটের ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্তটা ছিল অনেকটাই বিস্ময়কর। আবু জায়েদ রাহীর করা ইনিংসের প্রথম ওভারের প্রথম বলে অন ড্রাইভে চার মেরে সাদিকুর রহমান বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, উইকেট ব্যাটিং-স্বর্গ। আরেক ওপেনার জসিম উদ্দিন পরের ওভারে আবুল হাসানের বল স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠান। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতেও পারেননি ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। চতুর্থ ওভারে রাজুর স্কিড করা বল মিস করে এলবিডব্লিউ হন জসিম। উইকেটে এসে থিতু হতে পারেননি মুমিনুল হক। চট্টগ্রামের অধিনায়ক বারবার পরাস্ত হচ্ছিলেন অফ স্টাম্পের বাইরের বলে। রানের খাতা খোলার আগে ভাগ্যের জোরে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান একবার।  পেসার আবুল হাসান রাজুর বলে স্কয়ার কাটে বাউন্ডারি তুলে নিলেও শেষ পর্যন্ত তার বলেই সাজঘরের পথ ধরেন মুমিনুল। ৯ রানে অফ স্টাম্পের বাইরের বল কাট করতে গিয়ে উইকেটে পেছনে ক্যাচ দেন জাতীয় দলের এ ব্যাটসম্যান। দ্রুত দুই উইকেট হারালেও সাকিদুর রহমান ছিলেন দুর্দান্ত। বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খোলা এ ওপেনার ষষ্ঠ ওভারে আবু জায়েদের বল তিনবার বাউন্ডারিতে পাঠান। প্রথমটি পুল কওে, পরের দুটি স্কয়ার কাট ও আপার কাটে। অনেকটা ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করেন চট্টগ্রামের এ ওপেনার। তাকে তৃতীয় উইকেটে সঙ্গ দেন তাসামুল হক। ৪৯ রানের জুটি গড়েন তারা।  

কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির আগে মনোযোগ হারিয়ে বসেন চট্টগ্রামের এ দুই ব্যাটসম্যান। শেষ দুই ওভারে দুই সেট ব্যাটসম্যানকে হারায় চট্টগ্রাম। স্পিনার এনামুল হক জুনিয়রের বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে ৪৬ রানে স্টাম্পড হন সাদিকুর। ১০৩ রানে তার বিদায়ের পর একই রানে রানআউট হন তাসামুল। মিড অনে বল পাঠিয়ে দ্রুত রান নিতে গিয়ে ইবাদত হোসেনের সরাসরি থ্রোতে ৩৮ রানে তাসামুল রানআউট হন। বিরতির পর আবারো উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। এবার পেসার এবাদত হোসেন সিলেটকে এনে দেন ব্রেক থ্রু। তার ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডাব্লিউ হন সাজ্জাদুল হক (১৩)। ১১২ রানে ৫ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় চট্টগ্রাম। ষষ্ঠ উইকেটে দলের হাল ধরেন সাঈদ সরকার ও ইয়াসির আলী। ৬৩ রানের জুটি গড়েন তারা। দারুণ প্রতিরোধে রানের চাকা সচল রাখেন দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তাদের ফেরানোর জন্য প্রয়োজন ছিল দারুণ বোলিং। নিজের চতুর্থ স্পেলে বোলিংয়ে এসে দলের হয়ে কাজটা করে দেন রাজু। সাঈদ সরকার ১২ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। সঙ্গী হারালেও ব্যাট চালিয়ে যান ইয়াসির। স্পিনার শাহানুরের বলে এগিয়ে এসে এক রান নিয়ে ৭৯ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি।  

এরপর দলের হয়ে একাই লড়ে যান ইয়াসির। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রাহীর বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দেওয়ার আগে আরো ৩১ রান যোগ করেন। ততক্ষণে চট্টগ্রামের রান ২১৫। ইয়াসির ৮১ রানের ইনিংসটি সাজান ১৩৬ বলে, ১২ বাউন্ডারিতে। ৭ রানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ২১৫ রানে আটকে যায় চট্টগ্রাম। সাইফউদ্দিন ক্রিজে নেমে শুরু থেকেই ছিলেন নড়বড়ে। উইকেট সেট হলেও স্ট্রাইক রোটেট করতে পারছিলেন না জাতীয় দলে রঙিন পোশাকে অভিষেক হওয়া এ ক্রিকেটার। ৪৫ বলে ৫ রান করে এনামুল হক জুনিয়রের বলে বোল্ড হন। এরপর ইফতেকার সাজ্জাদকে দারুণ এক ইনসুইং ইয়র্কারে এলবিডব্লিউ করেন রাহী। মেহেদী হাসান রানাকে ফিরতি ক্যাচে পরিণত করেন এনামুল। শেষ ব্যাটসম্যান ইয়াসিরের উইকেট নিয়ে রাহী দ্বিতীয় উইকেটের স্বাদ পান।  সিলেটের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন রাজু ও এনামুল। জবাবে ব্যাট করতে নেমে সায়েম আলম ও শাহনাজ আহমেদ ভালো জবাব দিচ্ছিলেন। মেহেদী হাসানের নো বলে পুল করে ছক্কা  মেরে শাহনাজ ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু পরের বলেই তাকে এলবিডব্লিউ করে সাজঘরের পথ দেখান বাঁহাতি পেসার রানা। এরপর দিনের খেলা শেষ হওয়ার ১১ বল আগে সিলেটের অধিনায়ক ইমতিয়াজ বাঁহাতি স্পিনার শাখাওয়াতের ঘূর্ণিতে এলবিডব্লিউ হন। ক্রিজে নামা জাকির হাসানকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বোল্ড করেন ইফতেকার সাজ্জাদ। ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহ করতে না পারলেও মুমিনুল হকের দল বল হাতে দারুণ লড়াই করছে। রাইজিংবিডি/সিলেট/২০ ডিসেম্বর ২০১৭/ইয়াসিন/পরাগ