জাতীয়

নুরুল ইসলাম নাহিদের ৭১তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

মাছুম আহমদ : ‘হে নতুন/দেখা দিক আর-বার/জন্মের প্রথম শুভক্ষণ!’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নিজের জন্মদিন সর্ম্পকে এই উক্তি করেছেন, যা দিয়ে যেকোনো গুণী মানুষকে তার জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো যেতে পারে।

 

আজ ৫ জুলাই। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ৭১তম জন্মদিন। নুরুল ইসলাম নাহিদ ১৯৪৫ সালের ৫ জুলাই সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কসবা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কসবা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিয়ানীবাজার পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চবিদ্যালয়, সিলেট এমসি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেটেছে তার শিক্ষাজীবন।

 

নুরুল ইসলাম নাহিদের রয়েছে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে তৎকালীন ছাত্রনেতাদের মধ্যে যেকজন আজও রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় অবদান রাখছেন, নাহিদ তাদের মধ্যে অন্যতম। জাতীয় পর্যায়ে ষাটের দশকের সামরিক ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, শিক্ষার দাবি ও অধিকার অর্জন, গণতন্ত্র ও জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার সব আন্দোলন, ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ ওই সময়ের সব আন্দোলন-সংগ্রামের একজন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা এবং সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি ছিলেন আন্দোলন সংগ্রামের প্রথম সারিতে। মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং তৎকালীন অন্যতম বৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে গেরিলা বাহিনী সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নুরল ইসলাম নাহিদের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

 

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পাকিস্তানি বাহিনীর দালাল খুনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত ‘ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’-এর স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে ওই আন্দোলন ও গণ-আদালত সংগঠিত করাসহ নব্বইয়ের দশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা পুনরুজ্জীবিত করার ঐতিহাসিক সংগ্রামে নুরুল ইসলাম নাহিদ বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

 

১৯৯৩ সালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) অন্যতম সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পার্টি সংগঠনের (সাংগঠনিক সম্পাদক) দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি পার্টির আদর্শগত শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে নুরল ইসলাম নাহিদ সিবিপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

 

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে গুণগত পরিবর্তন দেখা দিলে বাস্তবতার বিবেচনায় সেই প্রক্রিয়াই পরবর্তীকালে ১৯৯৪ সালে অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। বর্তমানে নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক।

 

নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে (২০০৯-২০১৪) শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তনের মাধ্যমে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধনে সক্ষম হয়েছেন। তার উদ্যোগে প্রথমবারের মতো সব মহলের মতামত নিযে সমগ্র জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ প্রণয়ন, জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন (চলমান) সম্ভব হযেছে।

 

তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন করে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক মানসম্মত যুগোপযোগী শিক্ষা এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা, অন্যদিকে নৈতিক মূল্যবোধের জাগরণ, সততা, নিষ্ঠা, জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ দেশপ্রেমিক হিসেবে উদ্ভুদ্ধ করে এক নতুন আধুনিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন।

 

শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্যোগ, শৃংঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, ভর্তি নীতিমালা বাস্তবায়ন, যথাসময়ে ক্লাস শুরু, নির্দিষ্ট দিনে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ, ৬০ দিনে ফল প্রকাশ, সৃৃজনশীল পদ্ধতি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রভৃতিতে ব্যাপক কার্যক্রম, স্বচ্ছ গতিশীল শিক্ষাপ্রশাসন গড়ে তোলা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আকৃষ্ট করে ঝরেপড়া বন্ধ করা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম বছরই ২০১০ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ স্কুল ও মাদ্রাসায় সব ধরনের শিক্ষার্থীদের প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১৯ কোটি বই বিনামূল্যে যথাসময়ে পৌঁছে দিয়ে দেশবাসীকে বিস্মিত করেছেন। তার এই অভূতপূর্ব সফলতা সমগ্র জাতীর কাছে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্ব সমাজে পেয়েছে স্বীকৃতি ও মর্যাদা।

 

নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও একই সঙ্গে ২০০৯ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব এবং ২০১৩-২০১৪ সালে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্য হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাযিত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন।

 

এই সময়টি ছিল শিক্ষার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। বিরোধী দলের কার্যক্রমের ফলে সৃষ্ট অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও সময়মতো পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশ এবং বছরের প্রথম দিনে সমগ্র দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬৭২ জন শিক্ষার্থীর হাতে ২৯ কোটি ৯৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৮টি পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এত সংখ্যক পাঠ্যপুস্তক একিদিনে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার উদাহরণ দুনিয়ার কোনো দেশে নেই।

 

পরিশেষে বলতে চাই- ‘জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো’- এই মহান উক্তিটি নুরুল ইসলাম নাহিদের ক্ষেত্রে স্বার্থকতা পেয়েছে। প্রিয় মানুষ, প্রিয় শিক্ষামন্ত্রীর ৭১তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও লাল সালাম।

 

লেখক : ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার ও সংবাদকর্মী, সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সম্ভাবনা পত্রিকার সম্পাদক।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জুলাই ২০১৫/রাসেল পারভেজ