জাতীয়

বৃষ্টি ছাপিয়ে ছুটির দিনে কেনাকাটার ধুম

হাসান মাহামুদ : ঈদ সামনে রেখে এখন কেনাকাটার ধুম রাজধানীতে। রমজানের চতুর্থ শুক্রবার রাজধানীর মাকের্টগুলোতে ছিল ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। তবে সারা দিন গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি থাকায়, ক্রেতাদের কিছুটা ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু তাতে থেমে থাকেনি কেনাকাটা।

 

বিশ রোজা শেষে প্রায় সবার হাতেই ঈদ বোনাস ও বেতন চলে এসেছে। এর ওপর আজ শুক্রবার ছুটির দিন, রমজানে আরো একটি শুক্রবার আসবে, কিন্তু তখন ঈদ খুব সন্নিকটে থাকবে- এ সব বিবেচনায় আজ কেনাকাটায় বের হয়েছেন অধিকাংশ ক্রেতা। ফলে ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজধানীর মার্কেটগুলো। সেইসঙ্গে রাজধানীর প্রতিটি সড়কে বিশেষ করে মার্কেটের সামনের সড়ক ও আশেপাশে দেখা যায় তীব্র যানজট।

 

রমজানের শুরু থেকেই মার্কেটগুলোতে ভিড় থাকলেও শেষদিকে রেডিমেড পোশাকের দোকানগুলোতে ভিড় থাকে বেশি। তবে কেনাকাটায় নারীদের আনাগোনাই বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, রমজানের প্রথম সাতদিন ক্রেতারা কেবল এ মার্কেট, ও মার্কেট দেখে, আর কী ধরনের পোশাক কিনবেন ঠিক করেন। এখন সবাই কিনতেই আসছেন।

 

আজ শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় প্রতিটি মার্কেটে নানা বয়সি নানা পেশার মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। সারা দিনই ক্রেতা ঠাসা ছিল প্রায় প্রতিটি দোকান। সকলেই সেরে নিচ্ছেন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা। কিনছেন প্রয়োজনীয় শাড়ি, পোশাক অথবা গিফট আইটেম।

 

রাজধানীর বেশ কিছু মার্কেট, বিপনী বিতান, বুটিক শপ ও শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে নতুন ডিজাইনের ও হাল ফ্যাশানের শাড়ি, জামা, পাঞ্জাবি, জুতা, গহনা বা ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে আসছেন ক্রেতারা। তবে দোকানিরা বলছেন, নগরীর বিলাসবহুল মার্কেটগুলোয় সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকছে সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত।

 

চাঁদনী চক মাকের্টের অঙ্কিতা ফ্যাশনের মালিক আফজাল হোসেন বলেন, আমাদের দোকানে পাইকারি বিক্রি হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন তাদের দোকানের জন্যে মাল নিতে। তিনি বলেন, ২০ রমজানের আগে পাইকারি বিক্রি হয়েছে খুব বেশি। এখন পাইকারির পাশাপাশি খুচরা বিক্রিও ভালো হচ্ছে।

 

নিউমাকের্ট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, বঙ্গ বাজার, ধানমন্ডি হকার্স মাকেট, ইস্টার্ন প্লাজা, রাপা প্লাজা, সীমান্ত স্কয়ার, এ আর প্লাজা, বসুন্ধরা সিটি, মৌচাক, টুইন টাওয়ার, কর্ণফুলি গার্ডেন সিটিসহ বেশ কিছু মার্কেট ও শপিং মল ঘুরে দেখা গেছে ঈদ সামনে রেখে মার্কেটগুলোতে তুমুল ব্যস্ততা। নতুন ডিজাইনের ও হাল ফ্যাশনের জামা, শাড়ি, পাঞ্জাবি, জুতা, গহনা আসছে প্রতিনিয়ত, বিক্রিও হচ্ছে দেদার।

 

ইস্টার্ন প্লাজার স্টার ওয়ার্ল্ডের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সজল আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, এবারের ঈদে এই মার্কেটে বাইরের পোশাকের মধ্যে বেশি চলছে ভেলভেট কটি। ভারতীয় এ পোশাকের দাম রাখা হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা পর্যন্ত। দ্বিতীয় চাহিদা সম্পন্ন পোশাক হচ্ছে ফ্লোর টাচ্। এর দাম রাখা হচ্ছে ৬ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। এছাড়া অন্যান্য ড্রেসের মধ্যে ভারতীয় শাড়ির বিক্রি ভালো।

 

মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের লোকজন নগরীর নিউমাকের্ট, চাঁদনী চক, বঙ্গ বাজার, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসছেন। এসব মার্কেটগুলোতে তুলনামূলক কম দামে রুচিশীল জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। মার্কেটগুলোতে ৬শ থেকে ৫ হাজারের মধ্যে টাঙ্গাইলের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ পাওয়া যাচ্ছে ৬শ থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে।

 

কেনাকাটায় মেয়েদের সবচেয়ে পছন্দের মার্কেট চাঁদনী চক। এখানে যেমনি রয়েছে বিভিন্ন মূল্যের থ্রিপিস তেমনি পাওয়া যায় নানা দামের ও নানা রকমের গজ কাপড়। ৬০ টাকা থেকে ১৫শ’ টাকা দরের গজ কাপড় পাওয়া যায় এ মার্কেটে। তাই নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত নারীরা ভিড় করেন এ মার্কেটে। তবে এখন গজ কাপড় নয়, বরং তৈরি পোশাকের বিক্রিই বেশি দেখা গেছে।

 

এদিকে ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে দেওয়া হয়েছে স্পেশাল অফার, মূল্য ছাড় এবং র‌্যাফেল ড্রর মাধ্যমে নানা রকম উপহারের সুযোগ।

 

মহানগরীর অভিজাত মার্কেটের মধ্যে ইস্টার্ন প্লাজা, রাপা প্লাজা, সীমান্ত স্কয়ার, এ আর প্লাজা, বসুন্ধরা সিটি, টুইন টাওয়ার, কর্ণফুলি সিটিতে শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, থ্রিপিসসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত মূল্যে। তারপরও এসব শপিং মলে প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন ক্রেতার ভিড়।

 

ধানমন্ডি হকার্সে কথা হয় ঈদ ও বিয়ের শপিং করতে আসা দুই তরুণীর সঙ্গে। তারা বলেন, আমাদের বিয়ের কেনাকাটা ও ঈদের কেনাকাটা একসঙ্গে করতে হচ্ছে। সবকিছু হিসাব করে সময় ভাগ করে রাখা হয়েছে। তাই বৃষ্টির ভেতরেই আমাদের মার্কেটে আসতে হয়েছে। একজন বলেন, সকালেই বের হয়েছি, ভেবেছিলাম বৃষ্টি থেমে যাবে কিন্তু এখন দেখি বৃষ্টি থামছেই না। তারা শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিস ও কিছু জুয়েলারি কিনেছেন। তারা বলেন, দাম একটু বেশি।

   

সারাদিনের গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ঈদের কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। কিন্তু মার্কেটগুলোতে নিয়মিত বিদ্যুৎ না থাকায় কিছুটা কষ্ট পেতে হচ্ছে ক্রেতা ও ব্যবসায়িদের। কারণ ক্রেতাদের চাপে বৃষ্টির মধ্যেও নন-এসি মার্কেটগুলোতে প্রচুর গরম দেখা গেছে।

 

ঈদ উপলক্ষে মার্কেটগুলোর পাশাপাশি ফুটপাতেও দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। বিশেষ করে গুলিস্তান এলাকা, নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত, ফার্মগেট, এয়ারপোর্ট এবং মীরপুর-১০ ও সংলগ্ন এলাকার ফুটপাতগুলোতে বিক্রি চলছে পুরোদমে। আজ বৃষ্টিতে বড় আকারের ছাতা, প্লাস্টিকের ছাউনি আবার কোথাও কোথাও সামিয়ানা টাঙিয়ে দোকান বসাতেও দেখা গেছে। কিন্তু ক্রেতার কমতি নেই এসব দোকানেও।

 

রাজধানীর ফ্যাশন হাউসগুলো বরাবরের মতো রকমারি পোশাকের পসরায় সাজিয়েছে। উল্লেখযোগ্য ফ্যাশন হাউজগুলোর মধ্যে আড়ং, রঙ, কে ক্রাফট, সাদা কালো, আলতামিরা, আবর্তন, বাংলার মেলা, দেশাল, অঞ্জনস্, বিবিয়ানা, অন্যমেলা, অরণ্য, ইয়েলো, প্রবর্তনায় ঈদ উপলক্ষে নতুন ডিজাইনের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামে। ফলে দামাদামি করতে গিয়ে ক্রেতার আর সময় নষ্ট হচ্ছে না। ক্রেতার রুচি ও ক্রয় ক্ষমতার কথা চিন্তা করেই শো-রুমগুলোতে পোশাক রাখা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট দোকানিরা।

 

দর্জির দোকানগুলোতেও ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কেউ দর্জির দোকান থেকে তুলে নিচ্ছেন তৈরি করতে দেওয়া জামা কেউবা দেখে নিচ্ছেন মাপ। কেউ ঢুকছেন ইমিটিশন জুয়েলারির দোকানে। গাওছিয়া ও চাঁদনী চকের পাশের ফুটপাতে মানুষের ভিড়ে পা রাখা দায়। দুপুরের পর বৃষ্টি কমায় নিউ মার্কেট, গাওছিয়া ও চন্দ্রিমা মার্কেটে ঢল নামে মানুষের। এলিফ্যান্ট রোডে ছেলেদের তৈরি পোশাকের দোকানগুলোতে ভিড় ছিল অনেক বেশি।

 

আরিয়ান নামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী সায়েম জানান, তার দেশের বাড়ি ভোলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি হয়েছে। রোববার বাড়ি যাওয়ার টিকেট কেটেছেন। আজ ছুটির দিনে পরিবারের সঙ্গে এসেছেন কেনাকাটা করতে।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জুলাই ২০১৫/হাসান/কামরুজ্জামান/নওশের