জাতীয়

তিনটি অনুগল্প || প্রশান্ত মৃধা

চোখের কাজলবালিশের ওপরে রেখে ঘুমানোর জন্যে মেয়েটি একখণ্ড কাপড়ে লিখেছিল, ‘ভুলো না আমায়।’প্রেমিক ছেলেটিকে দিয়েছিল সেই কাপড়খানা। ছেলেটিও কথা রেখেছিল। কাপড়খানা বালিশের ওপর দিয়ে ঘুমাতো রোজ। কিন্তু ওই কাপড়খানা মাথায় রেখে ঘুমাতে ঘুমাতে ছেলেটি একদিন মেয়েটিকে ভুলে গেল। আর ততদিনে লেখাটিও গেছে মুছে।এদিকে একদিন মেয়েটি তার নিজের বালিশের ওপর লেখা দেখে ভুলো না আমায়। আসলে তার চোখের জল কাজলের সঙ্গে মিলে তা লিখেছে।মেয়েটি সেদিন ছেলেটিকে প্রথম দেখার দিনটিকে স্মরণ করে চোখে কাজল দিয়েছিল।মালি ও কিশোরীকিশোরটি এক মালিকে মাটি বেলচা ছোট্ট শাবল টব ইত্যাদি এগিয়ে দেয়। আর চোখ বড়ো বড়ো করে মালির গাছ পরিচর্যা করা দেখে। দেখে আর শেখে, যেন এক সময় সেও এই গাছগুলোর পরিচর্যা করতে পারে।একদিন গাছের পরিচর্যা করতে করতে হঠাৎ একটা ছোট্টো ফুলগাছের ডাল মালির হাতের আলতো  চাপে মরে যায়। তখন ওই কিশোরী মেয়েটি বলে, ‘আস্তে আস্তে। সাবধান দেইখেন, মামা। গাছ ব্যথা পায়।’লোকটি চোখ বড়ো করে মেয়েটির দিকে তাকায়। তারপর বলে, ‘জানি গো মা, গাছেরও জীবন আছে।’রাজার দুঃস্বপ্নকোনো একদিন সকালে রাজা ঘুম ভেঙে উঠে দেখে সে প্রজা হয়ে গেছে! রাজা রাজপ্রাসাদে নেই। চারদিকে তাকিয়ে খুব অসহায় হয়ে সে চিৎকার জুড়ে দিল। রাজা তখন একটি কুটিরে। এখন আর তাকে কোনওক্রমে রাজা বলা যাচ্ছে না। অতএব প্রজা। কিন্তু মাথার ভিতরে নিজের কাছে নিজে তো রাজাই। তাই তার চিৎকার কোনোভাবে থামছে না। তখন আশেপাশের কুটিরের কয়েকজন এসে জানতে চাইল, ‘তুমি চেঁচাও কেন?’রাজা চেঁচিয়ে বলল, ‘আমি এই দেশের রাজা।’সবাই হাসল।বিব্রত রাজা জানতে চাইল, ‘আমি এখানে কেন?’যে লোকটি রাজাকে জিজ্ঞাসা করেছে, সে সহ প্রত্যেকে এই কথা শুনে আবার হাসল। তাতে রাজা আরও অসহায় হলো। তারপর তাদের শুধাল, ‘তোমরা হাসো কেন?’তাদের একজন বলল, ‘তুমি যে এই কুটিরে বসে নিজেকে রাজা হিসেবে জাহির করছো, তাই।’এইবার রাজা সত্যি সত্যি ভেবাচেকা খেল।রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জুলাই ২০১৫/তাপস রায়