জাতীয়

বিজয়োল্লাসে একাকার বিয়ের আনন্দ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি : দীর্ঘদিনের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বিজয়োল্লাসে বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে ছিটমহলের বিয়ের আয়োজন।১৩২ নম্বর ছিটমহলে জন্ম নিয়ে গত ২৪ বছর ধরে বন্দীজীবন কাটিয়েছেন টগবগে তরুণ মোহাম্মদ রতন মিয়া। ছিটমহল বিনিময়ের দিনক্ষণ নির্দিষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি নিজের বিয়ের তারিখটাও ঠিক করে ফেলেন একই দিনে। এদিকে ৩১ জুলাই ছিল রতনের জন্ম দিনও। এ দিন রাত ১২টা ১ মিনিটে নতুন বাংলাদেশি নাগরিক হবেন রতন। ছিটমহল শব্দটি তার জীবন থেকে মুছে যাবে।

 

এসব বিষয়কে স্মরণীয় করে রাখতে  রতন তাই বাবা-মার কাছে বায়না ধরেন এই শুভদিনেই নিজের বিয়েটা সেরে ফেলতে। বাবা মনছার আলী এবং মা অসভা বেগমও  রাজি হয়ে যান একমাত্র ছেলের বায়না পূরণে।  সামর্থ্যের সবটুকু বিলিয়ে পাটগ্রাম পৌর এলাকার নুর আলম ও রনজিনা খাতুনের মেয়ে নুরফা বেগমের সঙ্গে শুক্রবার রাতে মহা ধুমধামে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়।

 

অনুভূতি জানাতে গিয়ে রতন বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। পড়ালেখা করতে পারি নাই। ৩১ জুলাই আমার জন্মদিন।  গত ২৪টি বছর ছিটমহল যন্ত্রণায় সামাজিকভাবে দগ্ধ ছিলাম। এই দিনে মধ্যরাতে আমরা নতুন বাংলাদেশি হবো জেনেই বাবা-মাকে বলে আমি বিয়ের দিনও ঠিক করি। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত ছিল আমার।’

 

রতনের বাবা মনছার আলীর কন্ঠেও একই সুর। রাইজিংবিডিকে তিনি জানান, দীর্ঘ ৬৮ বছর বন্দিদশার মুক্তির আনন্দকে স্মরণীয় করতে ছেলের বিয়ের আয়োজন করেছেন। নতুন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে ছেলে বিয়ে করবে বাংলাদেশি মেয়েকে। এটি যেন তার কাছে স্বপ্নের মতো। ঢাক ঢোল পিটিয়ে সানাই বাজিয়ে চলে এ  বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিবেশীরা নেচে- গেয়ে উপভোগ করেন বিয়ে ও বিজয়ের আনন্দ।  রাত ১২টা ১ মিনিটে ছিটমহল বিনিময় হওয়ার পরপরই এ বিয়ে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়।ওই ছিটমহলে বিজয়ের আনন্দের সঙ্গে বাড়তি আনন্দ যুক্ত হয় রতন নুরফার বিয়ে।সব মিলে ১৩১ ও ১৩২ নম্বর ছিটমহলে চলে আনন্দের বন্যা। ছিটমহলেই শুধু নয়- এ আনন্দযজ্ঞে  যুক্ত হয় পাশের প্রতিবেশীরাও।

     

রাইজিংবিডি/লালমনিরহাট/১ আগস্ট ২০১৫/মোয়াজ্জেম হোসেন/সুমন মুস্তাফিজ