জাতীয়

বাড়ছে এইচআইভির ঝুঁকি, কমছে অর্থ বরাদ্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ কমছে বলে দাবি করেছেন সেভ দ্য চিলড্রেনের উপ-পরিচালক শেখ মাসুদুল আলম।

 

তিনি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগ নির্ণয় পদ্ধতির সঙ্গে যদি এইচআইভি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে এইচআইভি নির্ণয় করাটা আরো সহজ হবে। যখন বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে, তখন কমে যাচ্ছে অর্থ বরাদ্দ।’

 

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আহছানিয়া মিশনের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন শেখ মাসুদুল আলম।

 

মাইগ্রেশনের ফলে বাংলাদেশে এইডসের ঝুঁকি বাড়ছে, এ দাবি করে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে ৫০ শতাংশ টার্গেট গ্রুপকে কাভারেজের আওতায় আনার চেষ্টা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। ২০০৪ ও ২০০৯ সালে বাংলাদেশে সাইজ এস্টিমেশন হয়েছিল। এ বছর গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নে সাইজ এস্টিমেশনের কাজ চলছে।’

 

মাসুদুল আলম জানান, ১৭২টি সেন্টারের মাধ্যমে ১৪ হাজার মাদকাসক্ত, ২৮ হাজার ৬০০ যৌনকর্মী, ১ হাজার ১০৬ এইচআইভি আক্রান্তকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নে সারা দেশে ১০১টি এসটিসি সেন্টার তৈরির কাজ চলছে, যেন এসব সেন্টার থেকে এইচআইভি আক্রান্তরা পুরো চিকিৎসা পায়।

 

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ৩ কোটি ৬ লাখ ৯০ হাজার মানুষ এইডসে আক্রান্ত। ২০১৪ সালে ২০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু এইডসে আক্রান্ত হয়েছে। ২০০০ হাজার সালের তুলনায় এইডস আক্রান্তের হার ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০০০-২০১৪ সাল পর্যন্ত অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ৭০ লাখ ৮০ হাজার এইডস আক্রান্ত মানুষকে বাঁচানো হয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে ১০ লাখ ২০ হাজার মানুষ এইডস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ২০১৪ সালে ২ লাখ ২০ হাজার শিশু নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছে। ২০১৪ সালের অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ১০ লাখ ৪০ হাজার শিশু সুস্থ হয়েছে।

 

২০১৪ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়। ২০০০-২০১৪ সাল পর্যন্ত নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার অনুপাতে তা ৩১ শতাংশ কম।

 

বাংলাদেশে ৩০৯ জন শিশু, যাদের বয়স ০-১৪ বছর, মূলত জন্মগতভাবেই এইডসে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ২০১৪ সালে ৬৩ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের ২০৮ জনকে অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্ট দেওয়ার প্রয়োজন থাকলেও মাত্র ৭৯ জনকে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ২০১৪ সালে এইডস আক্রান্তদের মধ্যে ৩০ শতাংশ নারী। এইডসমুক্ত সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৩৮ গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসার প্রয়োজন থাকলেও পেয়েছেন মাত্র ২৫ জন।

 

সিরিঞ্জের মাধ্যমে যারা মাদক সেবন করেন, তাদের এইডস আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ২৮ শতাংশ বেড়ে যায়। যৌনকর্মীদের মাধ্যমে ১২ শতাংশ বাড়ে। ১৯ শতাংশ বাড়ে সমকামীতার মাধ্যমে। ৪৯ শতাংশ বাড়ে হিজড়াদের মাধ্যমে।

 

প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. শাহ আলমগীর বলেন, ‘মাদ্রাসা থেকে শুরু করে প্রতিটি স্কুলে এ বার্তাটা পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের রক্ষণশীলতার জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইন দেওয়ার পরও কিন্তু বাল্যবিবাহ রোধ করা যাচ্ছে না। গণমাধ্যমগুলোকে কমিটমেন্টের জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।’

 

আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন মিশনের উপ-পরিচালক ইকবাল মাসুদ।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ নভেম্বর ২০১৫/নিয়াজ/রফিক