জাতীয়

তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড নিয়ে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব

উজ্জল জিসান : তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড নিয়ে মালিকদের সঙ্গে শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মিছিল করছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, মালিকপক্ষের নেতারা মেয়র আনিসুল হকের হয়ে কাজ করছেন। আর মালিকরা বলছেন, যা করা হয়েছে সবার স্বার্থেই করা হয়েছে।সোমবার তেজগাঁও সাতরাস্তা সংলগ্ন ট্রাক স্ট্যান্ডে গিয়ে এসব চিত্র দেখা গেছে।শ্রমিকদের অভিযোগ, বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলীর নেতৃত্বে মালিকরা মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তারা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। তারা শ্রমিকদের এখান থেকে সরিয়ে ভিক্ষুক বানাতে চাইছেন। গতকাল (রোববার) রুস্তম আলী নিজে আসেননি, অথচ তার পেয়াদা মোতালেবকে পাঠিয়ে শ্রমিকদের বাগে আনার চেষ্টা করেছেন।মালিকদের ইন্ধন না থাকলে কোনোভাবেই মেয়রসহ সরকারের মন্ত্রীরা ট্রাক স্ট্যান্ড সরানোর কাজ করতে পারতেন না। শ্রমিকদের পেটে লাথি দিতে পারতেন না। গতকাল শ্রমিকরা যখন জোর আন্দোলন গড়ে তুললেন, তখন মালিকপক্ষই প্রথমে শ্রমিকদের বিরত রাখার চেষ্টা করেছেন। ফলে দুঃখ প্রকাশ না করে এবং ক্ষতিপূরণ না দিয়েই মেয়র বেরিয়ে যেতে পেরেছেন।এদিকে মালিকদের পক্ষে মোতালেব নামের এক ব্যক্তি বলেন, সরকারের নির্দেশে মেয়র আনিসুল হক জনগণের কল্যাণে কাজ করছেন। মেয়রের কথা, জনগণের রাস্তা কেউ দখল করে থাকতে পারবে না। সিটি করপোরেশন মূলত ওইসব দখলকৃত জমিই উদ্ধার করেছে মাত্র। মালিকদের গাড়ি রাখার জন্য মেয়র সাহেব আধুনিক টার্মিনাল করে দিতে চেয়েছেন। কাউকে আটকিয়ে কোনো দাবি পূরণ হয় না।শ্রমিক নেতা মনির হোসেন বলেন, সারা বাংলাদেশের শ্রমিক সংগঠনের নেতা নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে ট্রাক স্ট্যান্ডে আসার কথা থাকলেও আসেননি। কারণ তিনি জানেন, শ্রমিকদের অন্যায়ভাবে সরানো যাবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বিব্রত হবেন ভেবে তিনি আসেননি। কিন্তু মালিকপক্ষ কীভাবে যে শ্রমিকদের পক্ষ না নিয়ে নিজেদের স্বার্থ দেখলেন, তা বুঝে উঠতে পারেননি তিনি। এ ব্যাপারে মালিকপক্ষের সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক হয়েছে, আরো হবে। সেখানে শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে কথা বলা হবে। শ্রমিকরা মালিকদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পারায় তারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন।রোববার দুপুরে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সরানোর কাজে হাত দিলে শ্রমিকরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে মেয়র আনিসুল হক শ্রমিক অফিসে অবস্থান নেন। পরে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ বাঁধে। এ ঘটনায় জসিম ও বদরুদ্দোজা নামে দুজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার দাবি করলেও পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময় গুলি চালানো হয়নি। ইটের আঘাতের তারা আহত হয়েছেন।প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্ত হয়ে মেয়র আনিসুল হক শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝি থেকে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা করাসহ ভাঙা গাড়িগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে। ৩৯ বিঘা জমিতে আধুনিক ট্রাক টার্মিনাল করা হবে। তবে রাস্তায় কাউকে থাকতে দেওয়া হবে না। জনগণের রাস্তায় জনগণ নির্বিঘ্ন চলাচল করবে। আমি জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। এ কাজে কেউ বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারবে না। আমি কাউকে ভয় করি না। এরপর মেয়র র‌্যাব-পুলিশ পাহাড়ায় সেখান থেকে বের হয়ে চলে যান।অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত এক সপ্তাহে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকার ৮০ শতাংশ দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিগুলোও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এসব জায়গায় একটি স্থায়ী টার্মিনাল করে বাকি জায়গা জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এর আগে এসব জায়গা দখল করে বিভিন্ন অপকর্ম চালানো হতো। অনেক বড় রাস্তা দিয়ে রিকশাও চলাচল করতে পারত না।

       

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ নভেম্বর ২০১৫/রফিক