জাতীয়

বিজয়ের মাসের প্রথম দিন

শাহ মতিন টিপু : পহেলা ডিসেম্বর। মহান বিজয়ের মাসের প্রথম দিন আজ। বিজয়ের মাস, বাঙালির  শ্রেষ্ঠ অর্জনের মাস। ১৯৭১ সালের এই মাসেই অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। দীর্ঘ প্রায় ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধ শেষে এ মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমার্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

 

বাংলাদেশ সৃষ্টির সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙ্গালি জাতির হাজার বছরের স্বপ্ন-সাধ পূরণ হয় এ মাসেই।

 

বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন গৌরবদীপ্ত চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় এ মাসের ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালিরা। অর্জন করে নিজস্ব ভূ-খণ্ড আর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা। এক রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা এ দিনেই পূর্ণতা পায়।

 

বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নপূরণ হবার পাশাপাশি বহু তরতাজা প্রাণ বিসর্জন আর মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বেদনার কথা মনে করিয়ে দেয় এই ডিসেম্বর। প্রতিবছর নতুন করে দেশপ্রেমে আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার পথ দেখায় এই ডিসেম্বর।

 

এ মাসেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর আল শামসদের সহযোগিতায় দেশের মেধা, শ্রেষ্ঠ সস্তান-বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। সমগ্র জাতিকে মেধাহীন করে দেওয়ার এমন ঘৃণ্য নজির বিশ্বে আর নেই।

 

বিজয়ের ৪৪ তম বছরে জাতি এমন একটি প্রেক্ষাপটে বিজয় দিবস ও বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করবে যখন একাত্তরের সেই যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টদের বিচার কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত অনেকের বিরুদ্বে ফাঁসির রায় ঘোষিত হয়েছে। কার্যকর হয়েছে বুদ্ধিজীবি হত্যার অন্যতম হোতাদের ফাঁসির দণ্ড।

 

৩০ লাখ শহীদ আর দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি যাদের কারণে, আজ তাদের বিচারের মধ্যদিয়ে জাতি কালিমামুক্ত হওয়ার প্রয়াস পেয়েছে, আমাদের  জন্য এটা গর্বের। আমাদের আবার নতুন করে শপথ নেওয়ার সময় এসেছে, আমরা স্বাধীনতার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখবো। নিজস্ব ভূ-খণ্ড আর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা সমুন্নত রাখবো।

 

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর জল-স্থল আর আকাশপথে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর চারদিক থেকে ভেসে আসতে থাকে। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ) পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

 

যেখান থেকে ৭ মার্চ স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,’ বলে স্বাধীনতার ডাক দেন, সেখানেই পরাজয়ের দলিলে স্বাক্ষর করেন পাক জেনারেল নিয়াজী। এর মধ্যদিয়ে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। আর জাতি অর্জন করে হাজার বছরের স্বপ্নের স্বাধীনতা।

 

মহান এ বিজয়ের মাস উদযাপনে জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিজয়ের মাসের প্রথম দিনেই বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে। এ সব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিজয়ের মাসকে স্বাগত জানিয়ে সমাবেশ, মানববন্ধন, মোমবাতি প্রজ্বলন, বিজয় র‌্যালি, মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন ইত্যাদি। মুক্তযোদ্ধা দিবস বাস্তবায়ন পরিষদ আজ সকাল ১০টায় বিজয়ের মাসের প্রথম প্রহরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনীতে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করবে।

 

‘যুদ্ধাপরাধী মুক্ত বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার-সদস্যবৃন্দের অংশগ্রহণে আজ সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে অপরাজেয় বাংলা থেকে বিজয় র‌্যালি বের হবে। র‌্যালিটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা চত্বরে গিয়ে শেষ হবে।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ ডিসেম্বর ২০১৫/টিপু/উজ্জল