জাতীয়

শিশুরা আসছে, বই কিনছে

আবু বকর ইয়ামিন : রুবাইয়া ইসলাম। চাকরি করছেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। ঘুরতে যাওয়ার জন্য খুব একটা সময় হয়ে ওঠে না। তবে মেয়ের আবদার তাকে রাখতেই হয়। মেয়ের বায়না নিয়ে যেতে হবে বইমেলায়। আজকে সুযোগ পেয়েই মেয়েকে নিয়ে রুবাইয়া হাজির হলেন মেলায়।  কথা হলো রুবাইয়া আর তার মেয়ে শারমিনের সঙ্গে। মেয়েকে কী বই কিনে দিবেন? রুবাইয়ার সহজ উত্তর, মেয়েতো এখনো ছোট। তার পছন্দের ওপর নির্ভর করছে সে কী বই নেবে। তবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু বেই কেনার ইচ্ছা আছে আমারা। বাবুরা যেন ছো্ট থেকেই দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে লালন করতে পারে।

 

ছোট্ট শানু অনেক ছোট। হাতে কিছু ডাইকার্ড ও পপআপ। কথা বলতে চায় না। কোলে থেকেই আম্মুকে জড়িয়ে ধরে।

 

পাঁচ বছরের শিশু শারমিনকে প্রশ্ন করতেই মায়ের দিকে লাজুক দৃষ্টি। আম্মুকে ধরে বলে ছড়ার বই কিনবো। হাতে দেখা যায়, রাজকন্যার মাছধরা, নেকড়ে আর খরগোস, অপুর ইশকুল ও বোকা ব্যাঙ।

 

বইমেলায় আগ্রহ বেড়েছে শিশু-কিশোরদের। সঙ্গে মা-বাবাকে নিয়েই আসে শিশুরা। শিশু কর্নারে গিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায় মায়ময় দৃষ্টিনন্দন শিশুদের ভিড়ে শুরু থেকেই অনেকটা রঙিন হয়ে ওঠেছে গ্রন্থমেলা।

 

স্মার্টফোন, কম্পিউটার আর হিন্দি সিরিয়ালের এ যুগে রূপকথার রাজা-রানি, পরি, রাক্ষস আর ড্রাকুলার সঙ্গে তেমনভাবে পরিচয় ঘটে না শহুরে শিশু-কিশোরদের। কিন্তু বর্তমান সময়ের রূপকথা-বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির বইগুলো কিছুটা হলেও তাদের আকৃষ্ট করছে। ছোটদের বইয়ের অডিও ভিজ্যুয়াল ভার্সন স্বল্প পরিসরে হলেও নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ঠাকুরমার ঝুলির সঙ্গে। একুশের বইমেলায় অভিভাবকদের সঙ্গে এসে আগ্রহভরে এসব দেখছে শিশু-কিশোররা।

 

গতবার বাংলা একাডেমির চত্বরে থাকলেও এবারের শিশু কর্নার সাজানো হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বিশ্বস্ত বন্ধু বইয়ের সঙ্গে সন্তানের আত্মার সম্পর্ক গড়ে দিতে অভিভাবকরা তাদের নিয়ে আসছেন একুশে বইমেলায়। এদিকে, শিশুদের আকৃষ্ট করতে বড় স্ক্রিনে চলছে বইয়ের ই-ভার্সন প্রদর্শন। দারুণ চাহিদা রয়েছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি আর অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাসেরও। এছাড়া বিদেশি বইয়ের অনুবাদ ও রূপকথাও বেশ জনপ্রিয়।

 

কথা হয় মেহেদী হাসান মোহন নামের এক শিশুর সঙ্গে। মোহন জানায়, তার ভূতের বই, রাজকুমারের বই পড়তে ভাল লাগে। ৭ম শ্রেণির ছাত্র তারেক আব্দুল্লাহ রনি জানায়, গল্পের বই, মুক্তিযুদ্ধের বই, বিজ্ঞানের বই, ভূতের বই পড়তে তার খুব ভালো লাগে।

 

শুধু শিশু-কিশোর নয়, তরুণদের মাঝেও এসব বই জনপ্রিয়। মেলায় ঘুরতে আসা স্বপ্না নামের এক কিশোর জানায়, তার পছন্দের তালিকায় আছে কিশোর উপন্যাস আর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির বই। এছাড়া হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলীও তার পছন্দের বই। মেলায় ঘুরতে আসা আরেক কিশোর সোহেল জানায়, জাফর ইকবাল স্যারের বই তার খুব ভাল লাগে।

 

মেলা ঘুরে দেখা যায়, বাবা-মায়ের হাত ধরে শিশু চত্বরের স্টলগুলোতে ঘুরছে শিশুরা। কিছু বলতে গেলেই আম্মুর আঁচল জড়িয়ে ধরে।  আনন্দঘন এক পরিবেশে উচ্ছল পুরো মেলা প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখছে আর কিনছে নানা ধরনের বই। কেউ দেখেছে সয়েন্স ফিকশন, কারও আবার পছন্দ ভূতের গল্প। তবে গল্প, কার্টুন ও ছড়ার বইগুলোর দিকেই শিশুদের বাড়তি ঝোঁক দেখা গেছে।

 

যাত্রাবাড়ী থেকে বাবার হাত ধরে বইমেলায় এসেছে ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া রিমা। হাতে তার বইয়ের মোড়ক। কী বই কিনেছো, জানতে চাইলে সে বলে, আহসান হাবীবের সুইপার, স্বপ্নপুরীতে একদিন, আলী ইমামের নিলসের অ্যাডভেঞ্চার, শাহজান কিবরিয়ার শেয়াল আর শেয়াল।

 

সঙ্গে থাকা রবিন কিনেছে হুমায়ূন আহমেদের ‘ভূত আমার পুত’, জুগল সরকারের ‘মাই অ্যালফাবেট’, ‘দুষ্টু ইঁদুরের বুদ্ধি’, আহসান হাবীবের ‘Boss  জোকস’।

 

প্রগতি পাবলিশার্সের বিক্রয়কর্মী নুরুন্নাহার পলি বলেন, আমাদের স্টলে শিশুদের বিভিন্ন ডাই কার্ড, পপ আপ, গল্পের বই পাওয়া যাচ্ছে। শিশুরা আব্বু আম্মুর সঙ্গে আসছে প্রতিদিন। সন্ধ্যার পর বিক্রি বেশি হচ্ছে। এবারের মেলার পরিসর বাড়ানোতে বিক্রিও বেশি হতে পারে।

 

ঘাঁস ফড়িং প্রকাশনীর কর্ণধার রত্না দাস বলেন, এবারের মেলা অনেক সুন্দর হচ্ছে। বিক্রিও বাড়ছে। শিশুরা ভূতের গল্পের বইয়ের পাশাপাশি কৌতূকের বইও দেখছে। বেশি বিক্রি হচ্ছে রাজকন্যার মাছধরা, নেকড়ে আর শেয়াল, মিনার স্কুল, অপুর ইশকুল ও বোকা ব্যাঙ, দুষ্টু ইঁদুরের বুদ্ধি। পাতাবাহার প্রকাশনীর ইনচার্জ নাজিয়াত মেহজাবিন বলেন, আমাদের চেষ্টা থাকে বাচ্চাদের জন্য নির্ভুল বই দেওয়ার জন্য। বেচাবিক্রি ভালোই হচ্ছে। শিশুরাও আসছে।

 

শিশু কর্নারকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে আসাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এটিকে আরো সম্মুখভাগে নিলে ভালো হতো।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ইয়ামিন/রহমান