জাতীয়

‘এবার দাম ভাল পাওয়া যাবে’

রুহুল আমিন : প্রতিবারের মতো এবারও পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ধুপখোলা ও ধোলাইখাল (সাদেক হোসেন খোকা) মাঠে বসেছে পশুর হাট।

 

শুক্রবার সকালে ঘুরে ‍ঘুরে দেখা যায়, ধোলাইখাল হাটে গরু নিয়ে আসা বিক্রেতারা কিছুটা অলস সময় কাটাচ্ছেন। কেউ গরুর শরীর পানি দিয়ে ধুয়ে কাপড় দিয়ে মুছে দিচ্ছেন। কেউ খড়কুটোর সঙ্গে ভুসি মিশিয়ে খাবার দিচ্ছেন। কেউ বা আবার বসে বসে খোশগল্প ও আড্ডা দিচ্ছেন।

 

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এই গরু বিক্রেতারা রাত্রিযাপর করেন রাস্তার পাশেই। সেখানে গরুকে খাওয়ানোর খড়কুটো, ভুষির সঙ্গে রয়েছে তাদের থাকার ব্যবস্থাও। কেউ কেউ করেছেন রান্নার ব্যবস্থাও। পলিথিনের সামিয়ানা টানিয়ে গরুকে রক্ষা করছেন রোদ বৃষ্টি থেকে, নিজেরাও আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে।

 

মুরগীটোলা মোড়ের পাশে এক সামিয়ানার নিচে দেখা যায় একজন ভ্রাম্যমাণ চুলা দিয়ে রান্না করছেন। কথা হয় রাশেদ নামের এই রাধুনীর সঙ্গে।

 

তিনি জানান, যশোর থেকে এসেছেন। পাঁচটি ট্রাকে করে ৬৭টি গরু নিয়ে এসেছেন সাহাজ উদ্দিন নামের এক ব্যাপারি। তিনিই তাকে এনেছেন সঙ্গে করে রান্নার কাজ করার জন্য। ১২ জন নিয়ে তাদের দল।

 

ধোলাইখাল ও ধুপখোলা মাঠের ভেতরে ছাড়াও আশপাশের অনেক রোডের দুই পাশে বাঁশ পুতে খুঁটি করে সেখানে গরু বেঁধে রেখেছেন ব্যাপারীরা। ধোলাইখাল মাঠের পশ্চিমে রায় সাহেব বাজার দক্ষিণ-পূর্বে কাঠেরপুল বাসস্ট্যান্ড ছাড়িয়ে সূত্রাপুর পর্যন্ত, উত্তর-পূর্বে দয়াগঞ্জ মোড় আর পূর্ব দিকে গেন্ডারিয়া নতুন রোড পর্যন্ত ব্যাপারীরা গরু নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন।

 

ফরিদপুরের আটরশি থেকে এসেছেন শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যাপারি। ২৩ টি গুরু নিয়ে তিনি এসেছেন।

   

শহিদুল জানান, বুধবার সন্ধ্যায় ট্রাকে এসেছেন।এই পর্যন্ত তিনটি গরু বিক্রি হয়েছে। হাট এখনো পুরোপুরি জমেনি। আজ শুক্রবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা জমবে, তার আশা।

 

তিনি জানান, গত দুই বছর ধরে তিনি ধোলাইখাল হাটে গরু বিক্রি করতে আসছেন। আগে গাবতলীর হাটে আসতেন।

 

এবার গরুর দাম কেমন যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার দাম ভাল পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। এখন পর্যন্ত ইন্ডিয়ান ‍গুরু আসেনি। তবে ইন্ডিয়ান গরু আসলে আমরা লোকসানে পড়ে যাব।

 

একটা ট্রাকে ৪ থেকে ২০টা পর্যন্ত গরু আনা যায়। ‍খুব বড় আকারের হলে চারটি। আর একটু ছোট হলে ১৮ থেকে ২০টি। মাজারি আকারের হলে ১৫ থেকে ১৮টি।

 

কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়ন থেকে এসেছেন মনিরুল ইসলাম। তার পাশে বসা আমিরুল ইসলাম। সম্পর্কে আমিরুল মনিরুলের নানা হন। সকালের নাস্তা শেষে পান-সিগারেটে খোশগল্প করছেন তারা।

   

কথা হয় মনিরুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভারত থেকে এখন গরু আসেনি। গরু পালনে খুব খরচ। এক থেকে দেড় বছর আগে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছি। প্রত্যেকটা গরুর পেছনে কম করে হলেও ২০ হাজার টাকা খরচ। আশা করছি ভাল দাম পাওয়া যাবে। তবে যদি ভারত থেকে গরু আসে তাহলে মাঠে মারা যাব।

 

তিনি জানান, এবার আলামপুর ইউনিয়ন থেকে প্রায় দেড়শ’ ট্রাক গরু নিয়ে ঢাকার হাটে এসেছে। শুধু ধোলাইখাল হাটেই এসেছে প্রায় ৫০টি ট্রাক। আলামপুরে বেশ কয়েকজন গরুর খামারি রয়েছেন।       

 

কয়টি গরু বিক্রি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি গতকাল দুপুরে এসেছি। এখনো কোনো গরু বিক্রি হয়নি। আজকে কয়েকটি বিক্রি হবে বলে মনে হয়। তবে ঈদের দুএকদিন আগে বেশি বিক্রি হয়। আজ শুক্রবার তো আজকে মোটামুটি বিক্রি হবে।

 

গত সোমবার থেকেই শুরু হয় ধুপখোলা ও ধোলাইখাল হাটে গরু ব্যাপারীদের আগমন। হাট দুটির ইজারাদারদের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা। রাস্তার পাশে অবস্থান নেওয়া গরু ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধার জন্য বসানো হয়েছে বেশ কয়েকটি স্টল। ট্রাক থেকে গরু নামানোর জন্য বালির বস্তা দিয়ে বেশ কয়েকটি উঁচু স্থান করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপারীদের বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার জন্য রয়েছে অর্ধশত কর্মী। বসানো হয়েছে অনেকগুলো মাইক। মাইকে ব্যাপারীদের সতর্ক করে বার বার বলা হচ্ছে, অপরিচিত কারো কাছ থেকে কোনো কিছু না খাইতে।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬/রুহুল/ইভা