জাতীয়

আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী

হাসান মাহামুদ : ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ঋতুচক্রের বিবর্তনে দুয়ারে পৌঁছেছে ঋতুরাজ বসন্ত। প্রকৃতির বিচিত্র রূপের মতো নিজেকে সাজিয়ে নিতে চায় সকলে। সেই ধারাবাহিকতায় বসন্ত বরণের প্রস্তুতি থাকে কম-বেশি সবার মাঝেই। আজ সোমবার পয়লা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। ফাল্গুন আসলেই দোলা লাগে মানুষের মনেও। চলে বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার আয়োজন। শীতের শেষে ঋতুচক্রের এই মাস বাঙালির জীবনে প্রকৃতির রুপ বদলে যায়। শুরু হয় অন্যরকম জীবনধারা। প্রকৃতি আজ খুলে দেবে দখিন দুয়ার। সে দুয়ারে বইবে ফাগুনের হাওয়া। বসন্তের আগমনে কোকিল গাইবে গান। ভ্রমরও করবে খেলা। গাছে গাছে ছড়িয়ে পড়বে পলাশ আর শিমুলের মেলা। প্রকৃতি সাজবে নতুনরূপে।

 

বসন্ত মানে ফুল ফুটবার কাল। ঝরে পরা শুকনা পাতার মর্মর ধ্বনির দিন। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতই বাঙালির মনেও দোলা লাগায়। একই সঙ্গে বাসন্তি রংয়ের শাড়ি ও পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়ে আনন্দে মেতে ওঠার আবাহন। এ সময়েই শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীর গতিতে বাতাসে সঙ্গে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন কিছুর। শীতে খোলসে ঢুকে থাকা বনবনানী অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠে। পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তে সাজ সাজ রব।

 

এ ছাড়া পাতার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহুকুহু ডাক, ব্যাকুল করে তুলবে অনেক বিরোহী অন্তর। যদিও এই ব্যস্ত নগরীতে এ চিত্র দেখা বা শুনা দুস্কর। তবুও কবির ভাষায় ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত।’ বাংলাদেশের ইতিহাসেও ফাল্গুনের আবেদন এবং অবদান কম নয়। এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। ৮ ফাল্গুন আমাদের ভাষা আন্দোলনের দিন। ইংরেজি বর্ষ হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এখন সারাবিশ্বে উদযাপিত হয়। বাংলা মাসের হিসেবে এটি ৮ ফাল্গুন।

 

ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের সংগ্রামের যে বীজ রোপিত হয়েছিল, তার মাধ্যমেই পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায় স্বাধীনতা। সে হিসেবে বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব।বসন্ত মানেই আবেগ-উচ্ছ্বাস। বাংলা সাহিত্যে বসন্ত বন্দনা হয়েছে যুগে যুগে। কবি গুরু লিখেছেন, ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে এত পাখি গায় আহা আজি এ বসন্তে’।

 

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী; চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি।’ এদিকে বসন্তকে স্বাগত জানাতে রাজধানীতে থাকছে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন। জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ ২২ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বসন্তের প্রথমদিনে বসন্ত উৎসবের উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় থাকছে দিনব্যাপী আয়োজন। দিনের শুরুতেই মতিয়ারের সারেঙ্গী বাদন ও অসিত কুমার দের শাস্ত্রীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হবে।

 

এ ছাড়া ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ, লক্ষীবাজারের বাহাদুর শাহ পার্ক এবং উত্তরার ৩নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্রসরণীর উন্মুক্ত মঞ্চে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গানের দল সমগীত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছবিগুলো তুলেছেন কেএমএ হাসনাত।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/হাসান/সাইফ