জাতীয়

ত্রাণ নয়, স্বদেশে ফিরে যেতে চান রোহিঙ্গারা

কক্সবাজার প্রতিনিধি : ‘ত্রাণ নয়, অধিকার চাই; আমরা মিয়ানমারের নাগরিক, মিয়ানমারে অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই।’- জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের সহযোগিতায় নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য এভাবে রাইজিংবিডির মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে আকুতি জানিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় ত্রাণ নিতে আসা রমিদা বেগম (২০)। এ আকুতি শুধু রমিদা বেগমের নয়, বুধবার বেলা ১১ টায় ত্রাণ নিতে আসা কালু (৫০), জোহরা খাতুন (৪৪), ফেরদৌস বেগমসহ (৪০) রোহিঙ্গাদের। মালয়েশিয়া সরকারের প্রতিনিধি দল, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে মালয়েশিয়ার পাঠানো ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। তিন দফায় কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ও টেকনাফের লেদায় ১৫০ রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে এ ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রতি পরিবারকে চাল, ডাল, কফি, চিনি, খাদ্যশস্য, ভোজ্যতেল, কম্বল ও চিকিৎসা সামগ্রীসহ ৩৫ প্রকার পণ্য দেওয়া হয়। নির্যাতনের কারণে গত তিন মাস আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজারে উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন হালিমা খাতুন (৪২)। তিনিও দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এ পর্যায়ে কথা হয় তার সঙ্গে।  হালিমা খাতুন বলেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতনে ছেলে ও স্বামীকে হারিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে কোনো রকমে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা তাদের ত্রাণ দিচ্ছে। তারা যাতে মিয়ানমারে অধিকার নিয়ে ফিরে যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে বিশ্ববাসীর কাছে আহ্বান তিনি। ত্রাণের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা আবদু রহিম বলেন, অভিবাসী হিসেবে বাংলাদেশে থাকতে চান না, নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারে সন্ত্রাসীদের হামলায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকে রাখাইন রাজ্যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। জাতিসংঘ এরই মধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার অভিযোগ এনেছে। রোহিঙ্গা নারীদের গণধর্ষণ, হত্যাসহ নানা নির্যাতনের কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের উখিয়ার ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। রাইজিংবিডি/কক্সাবাজার/১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সুজাউদ্দিন রুবেল/বকুল