জাতীয়

‘বিজেএমসির লোকসান ২০০ কোটি টাকা কমেছে’

সচিবালয় প্রতিবেদক : বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) হচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। এ কারণে এটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় আসার পর প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর ফলে শৃঙ্খলা ফিরে আসার পাশাপাশি বিজেএমসির লোকসানও কমে এসেছে।’ মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বিজেএমসির লোকসান প্রসঙ্গে এ কথা বলেন। আগামী ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস উদযাপন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মির্জা আজম বলেন, ‘আগামী ৬ মার্চ দেশব্যাপী জাতীয় পাট দিবস প্রথমবারের মতো উদযাপন করা হবে। ১৯৭৫ সালের পর সামরিক সরকার ও এরপর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এ প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। এখানে অনিয়ম দুর্নীতিই ছিল নিয়ম। কোনো শৃঙ্খলা ছিল না, প্রতি মণ পাট ১৯০০ টাকায় কিনে বিল করত ২ হাজার টাকা। এক মণ পাট কিনে প্রতিষ্ঠানে দিত তার চেয়ে কম। বাকিটা আত্মসাৎ করা হতো। এভাবেই লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয় বিজেএমসিকে। একপর্যায়ে জুট মিল ও পাট উৎপাদনই বন্ধ করে দেয়া হয়।’ বিজেএমসির দুর্নীতি বন্ধে বর্তমান সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে মির্জা আজম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিজেএমসির অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জড়িতদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান এখন জিরো টলারেন্স। যার ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিজেএমসিতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে এবং দুর্নীতি কমেছে। দিন দিন লোকসানও কমছে। এ কয়েক মাসে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার লোকসান কমেছে।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি আমলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৯টি জুট মিলস ও বেসরকারি পর্যায়ে যেসব জুট মিলস বন্ধ করে দেওয়া হয়, আমরা ক্ষমতায় আাসার পর সব কটি জুট মিলস চালু করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ায় দেশে পাটের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে এর চাহিদাও বেড়ে গেছে। জুট মিলগুলোতে আমরা এই চাহিদা মেটানোর জন্য ডাবল শিফট চালু করেছি। তৃতীয় শিফট চালুর চিন্তুাও করছি।’ শ্রমিক সংকটের কারণে তৃতীয় শিফট চালু করা যাচ্ছে না।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ’- এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেশে প্রথমবারের মতো আগামী ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস উদযাপিত হবে। দেশের অর্থনীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই পাট। দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। পরিবেশ সহায়ক এই পাটের ব্যবহার ও চাহিদা দেশ-বিদেশে বাড়াতে এর ব্যপক প্রচার ও জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ৬ মার্চ দেশব্যাপী জাতীয় পাট দিবস উদযাপিত হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দিবসটি ‍উপলক্ষে ১ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১ থেকে ১২ মার্চ ঢাকা শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা, ৪ মার্চ রাজধানীর হাতিরঝিলে নৌ র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ৫ মার্চ সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদের সামনে পাটের তৈরি ক্যানভাসে চিত্রাঙ্কন, ৬ মার্চ সকাল সাড়ে ৮টায় সংসদ ভবনের সামনে থেকে র‌্যালি বের করা হবে। ওই দিন দৈনিক পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ ও জেলা-উপজেলায় র‌্যালি-আলোচনা সভা, ৯ মার্চ সকাল ৯টায় বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে বহুমুখী পাটপণ্যের তিন দিনব্যাপী মেলা শুরু হবে। এটি শেষ হবে ১১ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন তিনি পাটসংক্রান্ত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী মোট ২৪ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। তা ছাড়া সেরা পাটচাষি, সেরা পাটবীজ, বেসরকারি সেরা পাটকল, সেরা কাঁচাপাট রপ্তানিকারকসহ আট ক্যাটাগরিতে ৮ জন এবং পাটসংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য ২ জনকে পুরস্কৃত করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজেএমসির চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/নঈমুদ্দীন/শাহনেওয়াজ/এএন