জাতীয়

‘বঙ্গবন্ধু প্রথম বুঝেছিলেন, টিকে থাকতে পাকিস্তানের জন্ম হয়নি’

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাঙালি রাজনীতিবিদদের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন, টিকে থাকার জন্য কৃত্রিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম হয়নি।’ শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট আয়োজিত সেমিনারে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান ছিল ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত দুটি জাতির একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র। তবে এ রাষ্ট্র দুটির ভাষা, সংস্কৃতি এবং আচার-আচরণ ছিল ভিন্ন। কৃত্রিম এ রাষ্ট্র দুটির মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষার ওপর আঘাত আসে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, টিকে থাকার জন্য পাকিস্তানের জন্ম হয়নি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জাতির স্বাধীনতার সনদ ঘোষণা করেছিলেন। তার সুচিন্তিত নেতৃত্ব এবং আন্দোলন জাতিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছে।’ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ট্রাস্টের চেয়ারপারসন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ: রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামো পরিবর্তনের দিকদর্শন’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ সুচিন্তিত ছিল বলেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, বিজয় পেয়েছি। আমাদের পতাকা, জাতীয় সংগীত এবং এই ভূবনের নাম যে বাংলাদেশ হবে সে প্রতিটি সিদ্ধান্ত তার নিজের নেওয়া। জাতীয় সংগীত এই গানটি করবেন, এই সিদ্ধান্তটা তার বহু আগেই নেওয়া ছিল। প্রতিটি পদক্ষেপ বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন ধাপে ধাপে। জাতিকে একত্রিত করে একটা স্বাধীন রাষ্ট্রগঠনের চিন্তা-ভাবনা মাথায় রেখে। বঙ্গবন্ধু প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘১৯৭০ সালের নির্বাচনে ফলাফল কী হবে, সেটা তিনি আগে থেকেই জানতেন। এটা তিনি লন্ডনে বসেই বলেছিলেন, কিন্তু সঙ্গত কারণে প্রকাশ্যে বলেননি। কারণ, তিনি কখনোই বিচ্ছিন্নতাবাদী হতে চাননি। তিনি বিদেশিদের সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় একটা কথা বার বার বলতেন, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ তারা কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদী হতে পারে না।’ বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জেলায় জেলায় বক্তৃতা দিলেন। মামলা করা হলো, গ্রেপ্তার করা হলো, জামিন পেলেন, আবার গ্রেফতার হলেন, কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। আগরতলা মামলায় গ্রেপ্তার করা হলো, তখন তাকে ফাঁসি দেওয়ার একটা ষড়যন্ত্র ছিল। বাঙালি জাতি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে আনে।’ ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার অবদান এবং তিনিই যে ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, সেটা এক সময় মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণের আগে চারদিক থেকে নানা উপদেশ ও পয়েন্ট আসতে লাগল। সেদিন বক্তব্য দিতে যাওয়া আগে আমার মা বাবাকে বলেছিলেন, তুমি এ দেশের মানুষকে চেনো। সারাজীবন তুমি মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গেছ। কারো কথা শোনার দরকার নেই। তোমার মনে যা চাইবে তাই বলবে। তোমার সামনে লাখো জনতা থাকবে, পেছনে থাকবে পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র। সেদিন জাতির পিতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাঙালির উদ্দেশ্যে তার সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন। যেখানে তিনি সকল দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন বাঙালি জাতিকে।’ ’৭৫ পরবর্তী সময়ের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই একটি ভাষণ দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ছিল। এই ভাষণ বাজানোর জন্য আমাদের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বহু নেতাকে জীবন দিতে হয়েছে। একটা সময় বঙ্গবন্ধুর নাম এমনভাবে নিষিদ্ধ ছিল যে, অনেকগুলো ছবির মাঝে বঙ্গবন্ধুর ছবিটা লুকিয়ে রাখতে হতো।’ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরবর্তী সময়ে ইতিহাস বিকৃতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েকটা প্রজন্ম স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারেনি।’ রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ মার্চ ২০১৭/রফিক