জাতীয়

প্রথম গণহত্যা দিবস জাতীয়ভাবে পালনের প্রস্তুতি সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক : একাত্তরে ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায় নিরস্ত্র বাঙ্গালির ওপর। ফুটপাতের মানুষের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলোতেও চালানো হয় নির্মম গণহত্যা। এই ঘৃণ্য হতাযজ্ঞের উপলক্ষকে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো দেশে জাতীয়ভাবে পালিত হতে যাচ্ছে ‘গণহত্যা দিবস’। এরই মধ্যে দিবসটি উদযাপনের যাবতীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। গণহত্যার বিষয়টি জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে এবার ২৫ মার্চ কালরাত পালিত হবে গণহত্যা দিবস হিসেবে। ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হবে দিবসটি। পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা শুরুর দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনে গত ১১ মার্চ সংসদে প্রস্তাব আনেন জাসদ নেত্রী শিরীন আখতার। সাত ঘণ্টা আলোচনার পর প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। জাতীয় সংসদের স্বীকৃতির পর একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২০ মার্চ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এরপর ২৫ মার্চকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে ওদিন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রসঙ্গত, ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবসগুলো জাতীয়ভাবে পালিত হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিকভাবেও দিবসটি পালনের জন্য ইতিমধ্যে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন। এ ছাড়া এপ্রিল মাসের মধ্যে এ বিষয়ে জাতিসংঘে আবেদন করা হবে বলেও জানা গেছে। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এর আগে দিবস ঘোষণার জন্য মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়, বাঙালির মুক্তির আন্দোলনকে শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে ২৫ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা। পৃথিবীর জঘন্যতম এ হত্যার যাতে কোনো সাক্ষী না থাকে, সে কারণে বিদেশি সাংবাদিকদের হোটেলে বন্দি করে রাখা হয়। ২৬ মার্চ তাদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। নয় মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বাংলাদেশ নামের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। এবার প্রথম গণহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ, গণহত্যার ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এ প্রদর্শনী দুইদিন থাকবে। এ ছাড়া থাকবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন শহীদ মিনারের বেদিমূলে পুষ্পস্তবক দেওয়া হবে। তবে এবার শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হবে ২৬ মার্চ ভোরে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। বিভিন্ন চ্যানেলে গণহত্যা বিষয়ক বিভিন্ন নাটক ও ডকুমেন্টারি প্রচার হবে। প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে প্রকাশ করা হবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ মার্চ ২০১৭/হাসান/সাইফ