জাতীয়

কওমির জন্য আলাদা কমিশন গঠনের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : কওমি মাদরাসা পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মতো আলাদা কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় কওমি শিক্ষা সনদ বাস্তবায়ন কমিটি। কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স (এমএ) সমমানের মর্যাদা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দেশে কওমি মাদরাসা শিক্ষা পদ্ধতি চালু থাকলেও স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এর সনদ এমএ সমমানের স্বীকৃতি পেয়েছে। এর পক্ষে ও বিপক্ষে দেশে সমালোচনা চলছে। বিশেষ করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ছাড়া সরাসরি কওমি শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স ডিগ্রি দেওয়ায় রীতিমত হতবাক হয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তবে বর্তমান সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে কওমি শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এটি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত; যেটি স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মৌখিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে কওমি মাদরাসা শিক্ষাসনদ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ বলেন, ‘আমরা একটি পর্যায়ে এসেছি। এখন এটি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একটি কমিশন দরকার। এটি পরিচালনার জন্য আইন করে আলাদা কমিশন গঠনের দাবি করছি; যেটির বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো ক্ষমতা থাকবে। যার মাধ্যমে দেশের সব মাদরাসা পরিচালনা করা হবে। তবে এ কমিশনে সরকারের কোনো প্রতিনিধি থাকবে না। পাশাপাশি আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনো সহায়তা নেব না।’ তিনি বলেন, ‘সরাসরি এমএ সনদের মান নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন এসএসসি, এইচএসসি বা বিএ ছাড়া কীভাবে মাস্টার্স সমমানের সনদ লাভ করা যায়। আমি তাদের বলতে চাই, শিক্ষা ব্যবস্থা কোনো আসমানি ওহি না যে, যেভাবে আছে সেভাবে রাখতে হবে। এটি চাইলেই পরিবর্তন করা যায়। আর বাংলাদেশে এমন অনেক নজির আছে যেখানে সরকারি সনদ ছাড়াও শুধু কওমি সনদ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এমনকি আশির দশকে বায়তুল মোকাররমের প্রধান খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মাওলানা ওবায়দুল হক আলিয়া মাদরাসার হেড মাওলানার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার পদ ছিল যুগ্ম সচিবের সমমানের। কিন্তু তিনি কোনো সরকারি সনদ লাভ করেননি।’ কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি সহায়তা নেন না তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন ইয়াহইয়া মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের আর্থিক কোনো সহায়তা নেব না। কারণ যখন কারো কাছ থেকে আপনি টাকা বা সম্পদ নেবেন তখন তার গোলামি করতে হয়। নৈতিকতা কমে যায়। তাই আমরা সরকারের কাছ থেকে সহায়তা নেব না। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে, ঠিক সেভাবে আমরা দেশের মানুষের দ্বীন রক্ষায় জিম্মা নেব।’  মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভিন্নভাবে না দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আপনারা ভিন্ন চোখে দেখবেন না। আমরা ভিন্ন গ্রহের কেউ না। আমরা আপনাদেরই ভাই। সমাজে আমরা একে অপরের পরিপূরক।’ কওমি শিক্ষা নিয়ে ধ্রুম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে

কওমি মাদরাসার শিক্ষা নিয়ে ধ্রুম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘সবাই বলছেন নিচের স্তরের শিক্ষার মান নেই। এটি টিকবে না। কিন্তু আমরা আশ্বস্ত করতে চাই কওমি শিক্ষা অনেক সমৃদ্ধ। কওমি মাদরাসাগুলোর পরিদর্শক ও এর শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের সাহিত্যকর্মী দেখলে সবাই বুঝতে পারেব। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার কওমি মাদরাসা শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। কিন্তু জামায়াতে ইসলামের ষড়যন্ত্রের কারণে এটি সে সময় বাস্তবায়ন হয়নি। এক্ষেত্রে ওই সরকারের আন্তরিকতার অভাব ছিল। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। তবে কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না।’ মাদরাসায় জঙ্গি নিয়ে বক্তব্য অপপ্রচার

কওমি মাদরাসা জঙ্গি সৃষ্টির আতুরঘর সরকারের প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেন ইয়াহইয়া মাহমুদ। তার মতে, বাংলাদেশে দুটি রাজনৈতিক দল আছে যারা বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ভর করে ক্ষমতায় আসে। এদের মধ্যে একটি বাম ঘরানার রাজনৈতিক দল এবং অন্যটি হলো জামায়াতে ইসলামী। এরা ভেতর থেকে পঁচা। তিনি বলেন, ‘যারা ভেতর থেকে পঁচা তাদের মুখ দিয়ে আবর্জনা বের হতে পারে। আমরা তাদের এমন বক্তব্যে তোয়াক্কা করি না।’ খুব শিগগির সারাদেশের মাদরাসার সঠিক সংখ্যা ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা জানানো হবে বলে জানান তিনি।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ এপ্রিল ২০১৭/নূর/উজ্জল