জাতীয়

অপরাজেয় বাংলাদেশে মারুফা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাবার সঙ্গে চাচার বাসায় যাচ্ছিল ১০ বছরের মারুফা। ঢাকায় বাস থেকে নেমে হারিয়ে ফেলে বাবাকে। এরপর আর খুঁজে পায়নি বাবাকে। যাওয়া হয়নি চাচার বাসায়। পরে তার আশ্রয় হয় গাজীপুরের কোনাবাড়ির কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে। মঙ্গলবার সেই মারুফাকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান অপরাজেয় বাংলাদেশের জিম্মায় নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক হাফিজুর রহমান। সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার এনামুল হক মিয়া বিষয়টি জানিয়েছেন। অপরাজেয় বাংলাদেশের কর্মী জেসমিন আক্তার বলেন, আদালত আজ মারুফাকে আমাদের জিম্মায় নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। তবে এখনই আমরা মারুফাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসতে পারছি না। গাজীপুরের কোনাবাড়ির কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে মারুফাকে রিলিজ দিলে আমরা মারুফাকে যাত্রাবাড়ীতে আমাদের কার্যালয়ে নিয়ে আসব। মারুফাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের সংস্থা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বলে জানান জেসমিন আক্তার। যতদিন না মারুফাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারেন, ততদিন সে অপরাজেয় বাংলাদেশে থাকবে বলেও জানান ওই সমাজকর্মী। জানা গেছে, দুই বছর আগে বাবার সঙ্গে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় চাচা সাইদুলের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিল মারুফা। গাড়ি ঢাকায় পৌঁছালে নেমে পড়ে সে। সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেখে তার বাবা নেই। এরপর অনেক খোজাখুঁজির পরও আর খুঁজে পায়নি বাবাকে। বাবাকে খুঁজতে খুঁজতে চলে যায় মোহাম্মদপুর থানা এলাকায়। সেখানে সে কান্নাকাটি করছিল। মারুফার কান্না দেখে এলাকার লোকজন তাকে মোহাম্মদপুর থানায় দিয়ে আসে। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ মারুফার কাছে তার ঠিকানা জানতে চায়। বাবা দেলোয়ার হোসেন এবং মা লাইলি বেগমের নাম বলে মারুফা। বাড়ি বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ বলতে পারলেও গ্রামের নাম বলতে পারেনি। ঢাকায় চাচার বাসা কোথায় সেটাও বলতে পারেনি। মারুফার এ তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তার বাবাকে খুঁজতে থাকে। দেলোয়ার হোসেনকে না পেয়ে তাকে আদালতে হাজির করে গাজীপুরের কোনাবাড়ি কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন করে পুলিশ। আদালত তাকে সেখানে পাঠিয়ে দেন। এরপর থেকে মারুফা গাজীপুরের কোনাবাড়ির কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে ছিল। এদিকে সোমবারও মারুফাকে ঢাকার কিশোর আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। কীভাবে হারিয়ে গেলে? জানতে চাইলে মারুফা বলে, চাচ্চু সাইদুলের বাসায় যেতে কুমিল্লা থেকে বাবার সঙ্গে ঢাকায় আসি। গাড়ি থেকে নেমে সামনের দিকে হাঁটতে থাকি। কিছুক্ষণ পর পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার বাবা নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বাবাকে আর পাইনি। ঠিকানা জানতে চাইলে সে জানায়, তাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের হাসপাতালের পাশের গ্রাম। তবে তার পরিবার কুমিল্লায় বাস করছে। সেখানে তার বাবা কৃষি কাজ করেন। পরিবারে আর কে কে আছে জানতে চাইলে মারুফা বলে, ‘মা-বাবা আর আমার চার বোন।’ পাঁচ বোনের মধ্যে তৃতীয় মারুফা। বড় বোন কারিমা ও হালিমা। ছোট বোন রুবি ও স্বপ্না। এরপর মারুফা বলে, ‘আমি আমার মা-বাবার কাছে যেতে চাই। দুই বছর ধরে আমি আমার মা-বাবা-বোনদের ছেড়ে আছি। তাদেরকে ছেড়ে থাকতে আমার খুব কষ্ট হয়, খারাপ লাগে।’ প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন আল্লাহ করিম মসজিদের পাশে কান্নারত অবস্থায় মারুফাকে দেখতে পান এলাকাবাসী। স্থানীয়রা মারুফাকে মোহাম্মদপুর থানায় ডিউটি অফিসার এএসআই মিলন কুমার বিশ্বাসের কাছে তুলে দেন। এদিকে পুলিশ বলছে, মারুফা থানা ও জেলার নাম বলতে পারলেও গ্রামের নাম বলতে পারে না। মারুফাকে তার বাবা ঢাকায় নিয়ে আসার পর তাকে রেখে বাস কাউন্টারে যাওয়ার কথা বলে গেলে সে হারিয়ে যায়। মারুফা হারিয়ে গেলেও তার বাবা কোনো খোঁজ-খবর নেননি বলে পুলিশ আদালতকে জানায়। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ এপ্রিল ২০১৭/মামুন খান/রফিক