জাতীয়

১ রমজান থেকে ধর্মঘটের হুমকি মাংস ব্যবসায়ীদের

আবু বকর ইয়ামিন : রাজধানীতে স্থায়ী পশুর হাট তৈরি, মানসম্মত একাধিক কসাইখানা তৈরির দাবি জানিয়েছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসব দাবি পূরণ না হলে পয়লা রমজান থেকে ধর্মঘট করার হুমকি দিয়েছেন তারা। রোববার মাংস ব্যবসায়ীদের সমিতি নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। এর আগে কয়েকটি দাবিতে গত ১৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় দিনের ধর্মঘট করেন তারা। মাংস ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রায় দেড় বছর ধরে নির্ধারিত খাজনার চেয়ে বেশি অর্থ আদায় করছেন গাবতলী পশুর হাটের ইজারাদাররা। বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস সংযোগ বন্ধ হওয়ায় ট্যানারিগুলোও গরুর চামড়া কেনা কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ আলোচনা ছাড়াই মাংস ব্যবসায়ীদের আলাদা একটি তালিকা করেছে। গাবতলী পশুর হাটে গরু-ছাগলের খাজনা দ্বিগুণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মাংস বিক্রিতে লোকসানের পরিমাণ আরো বেড়েছে। তাই বাড়তি দামেই (কেজিপ্রতি ৫০০ টাকা) গরুর মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার গরু-মহিষ ও দেড় হাজার ছাগল-ভেড়ার চাহিদা আছে। এসব গরু-মহিষের সিংহভাগ সংগ্রহ করা হয় দেশের দক্ষিণ-উত্তরাঞ্চলের জেলা ও ভারত থেকে। এসব পশুর চালানের অধিকাংশ ঢাকার গাবতলী থেকে মাংস ব্যবসায়ীরা কিনে থাকেন। তাদের মাধ্যমেই রাজধানীর গরু-মহিষের মাংসের চাহিদা মেটানো হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগে মাংস ব্যবসায়ীদের প্রতিটি গরুর জন্য ৫০ টাকা, মহিষের জন্য ৭০ টাকা ও ছাগলের জন্য ১৫ টাকা করে খাজনা দিতে হতো। সম্প্রতি গরুপ্রতি খাজনা ১০০ টাকা, মহিষের খাজনা ১৫০ টাকা ও ছাগলের জন্য খাজনা ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে দেওয়া মাংস ব্যবসায়ীদের তালিকা অনুযায়ী এই হারে খাজনা নিয়ে গরু-মহিষ ও ছাগল বিক্রি করছেন ইজারাদাররা। অবশ্য সাধারণ ক্রেতাদের জন্য খাজনা পশুর দামের শতকরা সাড়ে ৩ টাকাই আছে। ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ ও ইজারাদারদের পাল্টা অভিযোগ, এই সুযোগের অপব্যবহার করেন মাংস ব্যবসায়ীরা। তারা হাট থেকে পশু কিনে হাটের বাইরে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে খাজনার টাকা থেকে কমিশন নিচ্ছেন। এতে ক্ষতি হচ্ছে ইজারাদারদের। প্রতিবছর গাবতলীর পশুর হাটের ইজারাও কমে যাচ্ছে। গাবতলী পশুর হাটের পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, ডিএনসিসি ও মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের গত ১৮ জানুয়ারি একটি বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যবসায়ীদের নিজস্ব দোকানেই মাংস ঝুলিয়ে বিক্রি করতে হবে। অন্য কোথাও বিক্রি করা যাবে না। ডিএনসিসির ট্রেড লাইসেন্স যাদের কাছে আছে, তাদের কাছেই নির্ধারিত হারে খাজনা নেওয়া হবে। এর বাইরে যাবেন না ইজারদাররা। ডিএনসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে মাংস ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পরিদর্শক, ভেটেরিনারি সার্জনরা এলাকা যাচাই করে তালিকাটি করেছেন। যেসব বিক্রেতা নির্দিষ্ট দোকানে ঝুলিয়ে মাংস বিক্রি করেন, তাদেরই এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকা দেখে গাবতলীর পশুর হাটে ইজারাদাররা গরু-মহিষ-ছাগল বিক্রি করছেন। তবে এটিই চূড়ান্ত নয়। মাংস ব্যবসায়ী সমিতির যদি তালিকায় থাকা কোনো ব্যবসায়ীর সম্পর্কে অভিযোগ থাকে, তাহলে যাচাই করা হবে। সত্যতা মিললে ওই ব্যবসায়ীকে বাদ দেওয়া হবে। এই তালিকায় ব্যবসায়ীর সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। কিন্তু মাংস ব্যবসায়ী সমিতির কাছে তাদের সদস্যের তালিকা চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে তা দেওয়া হয়নি। তালিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, মাংস ব্যবসায়ীদের তালিকা চাইলে অবশ্যই দেওয়া হবে। তবে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে মাংস ব্যবসায়ীদের কোনো তালিকা চাওয়া হয়নি। এমনকি সরকার ও করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি মাংস ব্যবসায়ী সমিতির দাবি ও অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করেননি। রবিউল আলম বলেন, তাদের দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি হচ্ছে, ডিএসসিসিতে স্থায়ী পশুর হাট ও মানসম্মত একাধিক কসাইখানা তৈরি। ১৫ দিনের মধ্যে এসব দাবি পূরণ না হলে তারা ১ রমজান থেকে কর্মবিরতি দেবেন। পরে অন্য কর্মসূচি দেবেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ এপ্রিল ২০১৭/ইয়ামিন/রফিক