জাতীয়

শোক-শপথে ২ অঙ্গীকার আওয়ামী লীগের

নিজস্ব প্রতিবেদক : অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে সরকারের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের অবিলম্বে ফিরিয়ে এনে দণ্ডাদেশ কার্যকরের অঙ্গীকার করেছে দলটি। মঙ্গলবার জাতীয় শোক দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে এমন অঙ্গীকার ও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন দলের নেতারা। মঙ্গলবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদৎবার্ষিকী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ। সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রী এবং পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এ সময় দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। একে একে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়াও জাতীয় শোক দিবসে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জন্স মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিতে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় আংশিক কার্যকর হয়েছে। এখনো কিছু খুনি দেশের বাইরে পালিয়ে আছে। যেসব দেশে এসব খুনি পালিয়ে আছে, সে রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানাব খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর করার জন্য তাদের যেন দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। এছাড়াও মোহাম্মদ নাসিম রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার ম্যারেজ সার্টিফিকেট ও পাসপোর্টে ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন নয়। তিনি ১৫ আগস্ট ভুয়া জন্মদিন পালন করে গণতন্ত্রের ধারাকে ব্যাহত করছেন, সংলাপের পরিবেশ নষ্ট করছেন। যতদিন খালেদা জিয়া শোকাবহ ১৫ আগস্টে তার ভুয়া জন্মদিন পালন করবেন, ততদিন বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ ও সম্পর্ক উন্নয়ন হবে না। বঙ্গবন্ধুর হত্যকাণ্ডে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। এই সরকারের মেয়াদকালেই তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাসভবনে পরিবার-পরিজনসহ নৃশংসভাবে শহীদ হন। সেদিন নরপিশাচ খুনিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল, ছোট ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ ও শিশুপৌত্র সুকান্ত বাবু, ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, সেরনিয়াবাতের কন্যা বেবি সেরনিয়াবাত, আবদুর নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিলসহ কয়েক নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে হত্যা করেন। এরপর এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য জাতিকে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০১০ সালের শুরুতে ২৮ জানুয়ারি মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। আর বিদেশের মাটিতে পলাতক রয়েছেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা। বঙ্গবন্ধুর ৪২তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে দিনভর বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে গণগ্রন্থাগারের সামনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতাদের উদ্যোগে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রধান অতিথি এবং আওয়ামী লীগের বন ও পবিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে মাজহারুল ইসলাম মানিক, নাসিম আল মমিন রূপক, শারমিন সুলতানা লিলি প্রমুখ ছিলেন। আর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হয়। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের অন্তর্গত ২০ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের অবিলম্বে দেশে ফিরে এনে রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও হানিফ বলেন, ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। এখনো হচ্ছে। জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্ববাসী যখন বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন করে আশা ব্যক্ত করেছে। ঠিক তখনি জাতির জনকের কন্যার ওপর আঘাত আনার চেষ্টা ও চক্রান্ত করা হচ্ছে। এজন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপি-জামায়াতের অশুভ ষড়যন্ত্রকে স্তব্ধ করে দেওয়ার আহ্বান তিনি। আর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বই বারবার দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ আগস্ট ২০১৭/নৃপেন/মুশফিক