জাতীয়

নিহত সৈনিক মনোয়ারের বাড়িতে শোকের মাতম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল :  মালিতে শান্তি রক্ষার কাজে গিয়ে সন্ত্রাসীদের পুতে রাখা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণে নিহত সৈনিক মো. মনোয়ার হোসেনের (৩০) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অকাল মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়েছে তার স্ত্রী, দুই মেয়ে  এবং বৃদ্ধা মা। কোনো সান্ত্বনা তাদের আশ্বস্ত করতে পারছেনা।  এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে মনোয়ারের লাশটি ফেরত পাওয়ার এবং তার বিধবা স্ত্রী, দুই এতিম সন্তান এবং সন্তানহারা মায়ের দায়িত্ব সরকারকে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। রোববার দায়িত্ব পালন শেষে ক্যাম্পে ফেরার পথে ওই বিস্ফোরণে ৩ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং এক মেজরসহ আরো ৪ জন আহত হয়। বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের দুই ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন মনোয়ার হোসেন। ২০০৩ সালে সেনা বাহিনীর সৈনিক পদে চাকরি নেন । ২০০৮ সালে একই এলাকার মো. কবির হাওলাদারের মেয়ে ইভা আক্তারকে বিয়ে করেন মনোয়ার। তাদের  দুই মেয়ে নুসরাত জাহান ইলমুন (৭) এবং তাসমিন (দেড় বছর)।

 

সৈনিক মো. মনোয়ার হোসেনের মায়ের আহাজারি

ছোট ভাই রবিউল ইসলাম সদ্য পুলিশ কনস্টেবলে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। একমাত্র বোন জোহরা বেগম গৃহিনী। সৈনিক মনোয়ার সর্বশেষ যশোর ক্যান্টনমেন্টে দায়িত্ব পালন করছিলেন।তিনি বরিশাল নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর এলাকায় এক খন্ড জমি কিনে টিনের ঘর তৈরি করে সেখানে পরিবার-পরিজন রেখেছিলেন। বাবা না থাকায় বৃদ্ধা মাকেও নিজের বাসায় এনে রাখেন । এরই মধ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে যাওয়ার সুযোগ ঘটে। গত ৩০ মে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দেন মনোয়ার। সেখানে ভালই কাটছিলো তার দিন। প্রায় প্রতিদিনই স্ত্রী, সন্তান, মা সহ স্বজনদের কাছে ফোন করে খোঁজ খবর নিতেন । এক বছরের জন্য শান্তিরক্ষা মিশনে মালি যাওয়া মনোয়ারের স্বপ্ন ছিল সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করার। সর্বশেষ শনিবার বাবার সাথে ফোনে কথা বলার সময় আঙ্গুর, আপেল আর আম নিয়ে আসার বায়না ধরেছিলো বড় মেয়ে ইলমুন। কিন্তু আপেল, আঙ্গুর আর আম নিয়ে মেয়ের কাছে বাবা ফিরে আসবেন না আর । এইদিন স্ত্রীকে বলেছিলেন তিনি ভালো আছেন, সন্তানদের দেখে শুনে রাখতে। রোববার বিকেলে সেনা সদর দপ্তরের এক মুঠোফোন বার্তায় সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় সৈনিক মনোয়ারের পরিবারের। তারা জানতে পারেন মনোয়ার নিহত হওয়ার খবর । স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মনোয়ার খুবই মিশুক এবং শান্ত প্রকৃতির লোক ছিলেন। তিনি সহজেই মানুষের মন জয় করতে পারতেন। তার মৃত্যুর খবরে বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন তারাও।

   

রাইজিংবিডি/ বরিশাল/ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ জে. খান স্বপন/টিপু