জাতীয়

‘নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন কিংবা সীমান্তে সৈন্য সমাবেশকে হুমকি মনে করছেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, ‘মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন ও সীমান্তে সৈন্য সমাবেশের বিষয়টি বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করি না। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী বলুন, সেনাবাহিনী বলুন তারা অত্যন্ত দক্ষ। দেশের জন্য তারা প্রত্যেকবারেই যে অবদান রেখেছে তাতে নিরাপত্তার জন্য কোনো প্রকার হুমকি আছে বলে মনে করি না। তারপরও মিয়ানমারের হেলিকপ্টারের সীমানা পার হওয়া কিংবা সীমান্তে সেনা বাড়ানো সবকিছুই আমরা ধৈর্যের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। যুদ্ধ নয়, আলোচনার মাধ্যমে আমরা মীমাংসা করতে চাই। মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সম্প্রতি মিয়ানমার অভিযোগ করেছে যে, তাদের দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশয় দেয় না, দেবেও না। এ বিষয়ে মিয়ানমারের অভিযোগ সত্য নয়।’ বাংলাদেশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সমর্থন করে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী কিংবা সন্ত্রাসীদের সমর্থন দেই না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের দেখতে গিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী নেই। এদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য কোনো জায়গা নেই। আশ্রয়-প্রশ্রয়ও দেওয়া হয় না। মিয়ানমারে যেসব সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে তার নিন্দাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ‘এখনও বলছি, আমাদের ভূখণ্ডে বিচ্ছিন্নতাবাদী কিংবা সন্ত্রাসীর কোনো জায়গা নেই। আমরা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেই না। যারা এসেছেন তারা নির্যাতিত ও বিতাড়িত হয়ে গৃহ ও স্বজনহারা হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এসব নিযাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবে’-বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রোহিঙ্গারা দেশের জন্য হুমকি কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশও উদ্বাস্তু নিয়ে বাড়তি চাপে রয়েছে। তাদের খাওয়া দাওয়া, ফেরত পাঠানো, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এসব মেনে নিয়েই আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখছি, যারা এসেছেন তাদের রেজিস্ট্রেশন করেছি, খাওয়া-দাওয়া ব্যবস্থা করেছি। আসাদুজ্জামান খান কামাল এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছেন, ৭১ সালে যখন আমরা ভারতে উদ্বাস্তু হিসেবে গিয়েছিলাম, তখন আমরাও এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, সেই অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। ঠিক তেমনি রোহিঙ্গারাও নির্যাতনে গৃহহারা ও বিতাড়িত হয়ে আমাদের দেশে এসেছেন। আপনারা দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী অসহায় এতিম শিশুকে বুকে জড়িয়ে রেখেছেন। অসহায় মানুষদের সরকার আশ্রয়-দিয়েছে। এটা মানবিক আচরণের মধ্যে পড়ে। সরকার তাই করেছে। এজন্য সারা বিশ্ব আমাদের প্রশংসা করেছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গারা যাতে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দেশের নিরাপত্তায় আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও গোয়েন্দারা সক্রিয় রয়েছে। তারা সবসময় সতর্ক খেয়াল রাখছেন। মিয়ানমার সফর কবে যাচ্ছেন- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা সত্যি যে মিয়ানমার সরকার আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এর আগে মিয়ানমারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা এসেছিলেন। তিনি আমাদের অনুরোধ করে গিয়েছিলেন মিয়ানমার যেতে। আমরা দিনক্ষণও ঠিক করেছিলাম যে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে যাব। আমরা তাদেরকে জানিয়েও দিয়েছিলাম। কিন্তু এর আগেই ঘটনাটির (রোহিঙ্গা নির্যাতন) সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য আমরা চিন্তা করছি সফর নিয়ে কী করা যায়। প্রধানমন্ত্রী এবং পরারাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। কখন যাব, যাব কি না সেই সিদ্ধান্ত নেব।’ মিয়ানমারে গেলে আলোচনার বিষয়বস্তু কি হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন তো আলোচনা একটাই, মিয়ানমার কবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়ে যাবে। এ বিষয়ে আলোচনা হবে। তা ছাড়া আরো কিছু বিষয় আছে যেমন মাদকের বিস্তার রোধ। তিনি বলেন, মিয়ানমারে যেসব অবৈধ মাদকের কারখানা রয়েছে তা বন্ধ করার জন্য আমরা আগেই অনুরোধ করেছি, এ বিষয়েও আলোচনা হবে। মন্ত্রী বলেন, মাদক আমরা তৈরি করি না, কিন্তু মাদকের ভয়াবহতার ভুক্তভোগী আমরা। এর আগে ভারতকে আমরা অনুরোধ করেছিলাম, যেন সেদেশের অবৈধ মাদক প্রস্তুত বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারা আমাদের অনুরোধ রেখেছে, অবৈধ মাদক প্রস্তুত বন্ধ করে দিয়েছে। একইভাবে মিয়ানমারকেও সেই অনুরোধ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা হবে। আমরা আলোচনা করে এসব বিষয়ের মিমাংসা করতে চাই। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭/নঈমুদ্দীন/সাইফ