জাতীয়

‘কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই পারে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই পারে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে। মঙ্গলবার রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ও এটিএন বাংলার যৌথ আয়োজনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বিষয়ে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, মিয়ানমার সমস্যা আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। ভারতের মতো মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র। মিয়ানমার তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার বাংলাদেশে আক্রমণ করেনি, আমরাও মিয়ানমারে আক্রমণ করিনি। তারা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছে, গণহত্যা চালিয়েছে এবং অত্যাচার করেছে। যার ফলে রোহিঙ্গারা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। তিনি আরো বলেন, এখন ধৈর্য ধরে মুন্সিয়ানার সঙ্গে এ সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, যা মানবিকভাবে বিবেচনা করা জরুরি। এ নিয়ে রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এই ঘটনার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মাত্রা আছে। এর সমাধান কি সামরিক পথে সমাধান হবে নাকি রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক পথে সমাধান হবে? মন্ত্রী বলেন, এই সমস্যা তুলে ধরতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম। এই সংকটে বাংলাদেশ কোনো আন্তর্জাতিক সাহায্য না চেয়ে একাই মোকাবিলার চেষ্টা করেছে। তবে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো নানা রকম রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ সরকার মনে করে, ১৬ কোটি মানুষ খেতে পারলে, তারাও খেতে পারবে। জাতিসংঘের ভূমিকা, শেখ হাসিনার উদ্যোগ এবং কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে। কফি আনান কমিশনের রিপোর্টকে ভিত্তি করে সমাধান বের করতে হবে। মন্ত্রী আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যেককে গুণে গুণে ফেরত নিতে হবে। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। তাদের নাগরিকত্ব ফেরত দিতে হবে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের মাধ্যমেই এর স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব। ভারত, চীন, রাশিয়া রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের পক্ষে নয়। তারা বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে এ সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা করার কথা বলেছে। দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগের পাশাপাশি ত্রিপাক্ষিক উদ্যোগ দরকার এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য। অং সান সু চি যে তার ভাষণে স্বীকার করেছে, মিয়ানমারের নাগরিকরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলে এসেছে, এটিও আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতারই বিজয়। সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনকে স্বাগত জানাই। কিন্তু আমরা এর দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য অবরোধসহ এই হত্যাযজ্ঞের জন্যে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের সেনাদের বিচারের জন্যে কূটনৈতিক তৎপরতা আরো জোরালো করতে হবে। তিনি বলেন, অতি দ্রুত আমাদের সরকারকে রাশিয়া, চীন ও ভারতের সাথে সফল কূটনৈতিক তৎপরতার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী দলমত পার্থক্য ভুলে সকল অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, দেশে-বিদেশে অবস্থান করা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যায় বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে যে চাপ পড়ছে তা মোকাবিলায় এখনই একটি সুনির্দিষ্ট কৌশল নির্ধারণ করা জরুরি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে তা সারা বিশ্বের ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে। প্রতিযোগিতায় বিজেএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি প্রাইম ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকদের ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনৈতিক সম্পাদক মাঈনুল আলম, অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস ও জ্যেষ্ঠ কূটনৈতিক সাংবাদিক আঙ্গুর নাহার মন্টি। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ অক্টোবর ২০১৭/হাসিবুল/রফিক