জাতীয়

খাবার বিদ্যুৎ পানির অপচয় রোধে শপথ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিরাপদ ও সুষ্ঠু জীবনের স্বার্থে খাবার, বিদ্যুৎ, পানির অপচয় রোধের শপথ করেছেন বিশিষ্টজনেরা। রোববার বিকেলে রাজধানীর এক হোটেলে ‘টেকসই ভোগ’ শীর্ষক একটি প্রচারাভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই শপথ করেন উপস্থিতিরা। এ সময় বক্তারা মন্তব্য করেন, ‘খাবার, বিদ্যুৎ, পানির মতো সম্পদের অপচয় রোধ না করলে অচিরেই মৃত শহরে পরিণত হবে ঢাকা। কারণ বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করেই ঢাকার বাসিন্দারা মাত্রাতিরিক্ত সম্পদের অপচয় করছে। যার কারণে পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে’। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ১২-এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে খাদ্য, পানি ও বিদ্যুতের সঠিক ব্যবহার ও অপচয় রোধ করতে একশনএইড বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ এই প্রচারাভিযানের উদ্যোগ নিয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মঞ্চনাটক ও একটি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে খাবার, পানি, বিদ্যুতের মতো সম্পদের অপব্যবহার ও প্রভাব তুলে ধরেন আয়োজকরা। যেখানে বলা হয়, ১ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি জনসংখ্যার শহর ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর একটি। আর এই শহরের জনসংখ্যার অধিকাংশই খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন নয়। আবার কীভাবে পরিবেশ রক্ষা করে খাওয়া ও প্রয়োজনীয় জিনিসের টেকসই ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে মানুষের ধারণা কম। ফলে ঢাকার সীমিত সম্পদেরও অপব্যবহার হচ্ছে। যেটি পরিবেশেরও ক্ষতি করছে। প্রচারাভিযানের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রধান সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা আমাদের খাবারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট করি। যেটি পরিবেশেরও ক্ষতি করছে। পানি, বিদ্যুতের মতো সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই শহরের মানুষ খুবই অসচেতন। সম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা এখনই যদি সচেতন না হই, তবে অচিরেই ঢাকা মৃত শহরে পরিণত হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর ও টেকসই জীবন কাটাতে অবশ্যই আমাদের ভোগের আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। একটি সুন্দর ও মানসম্মত শহর তৈরিতে প্রত্যেককে খাদ্য, পানি ও বিদ্যুতের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবহারে আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১২ অর্জনের জন্য এই কাজগুলো করা দরকার।’ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশতিয়াক আহমেদ, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের জীবন-যাপনের ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে। ইতিহাস পরিবর্তনে সবসময় তরুণরাই অবদান রেখেছে। তাই এই উদ্যোগে তরুণরা এগিয়ে এলে আমরা খুব সহজেই এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। কারণ সরকারের একার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না।’ আয়োজকরা জানান, অর্থনৈতিকভাবে একটি দ্রুত বর্ধনশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে বার্ষিক ৭.৫-৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও প্রয়োজন হবে। যেখানে সম্পদের সঠিক ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ মানুষের আচরণ পরিবর্তন। একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের ভোগ ও সম্পদ ব্যবহারের ধরন পরিবর্তন না করি তবে তা আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। শহরের বাসিন্দাদের উৎপাদন ও ব্যয়ের ধরন সচেতনভাবে পরিবর্তন করতে হবে যাতে সম্পদের সঠিক ব্যবহার আমরা করতে পারি।’ এ বিষয়ে ইউএনডিপির সহকারী কান্ট্রি ডিরেক্টর খুরশীদ আলম বলেন, ‘পানি, বিদ্যুতের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহার ঢাকাসহ সারাদেশের পরিবেশগত অবনতি হ্রাসে সাহায্য করবে। আমি আশা করছি, এই প্রচারাভিযান পরিচ্ছন্ন ও সবুজ ঢাকা শহর গড়তে একটি ফলপ্রসূ উদ্যোগ হবে। দেশের ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা পূরণের জন্য এই উদ্যোগ নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের অপচয় রোধে সাহায্য করবে।’ ‘টেকসই ভোগ’ প্রচারাভিযানে প্রাথমিকভাবে ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের খাদ্য, পানি এবং বিদ্যুতের ব্যবহার বিষয়ে আচরণের ধরন পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যুবাদের মাধ্যমে প্রচারাভিযানটি করছে একশনএইড বাংলাদেশ ও ইউএনডিপি। যেখানে একশনএইড বাংলাদেশ-এর স্বেচ্ছাসেবক দল এবং  সামাজিক সংস্থা পরিবর্তন চাই প্রত্যক্ষভাবে খাদ্য খাওয়া ও সম্পদের ব্যবহারে অপচয় রোধ ও ইতিবাচক আচরণ তৈরিতে প্রচারাভিযানটির আওতায় বেশকিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। এই প্রচারাভিযান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্য ও উচ্চ আয়ের সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পদের অপচয় ও টেকসই ব্যবহারের যে ফাঁক/পার্থক্য রয়েছে তা বিশ্লেষণ করবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষদের উৎসাহিত করবে খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎসহ সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আশাদুল ইসলাম বলেন, ‘যে প্রচারাভিযানটা শুরু হলো সেটা যেন সব যুবকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এই দায়িত্ব তরুণদেরই নিতে হবে। টেকসই ভোগের লক্ষ্য অর্জনে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। তরুণদের উচিত তাদের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। কারণ তারা খুব সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে।’ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরুণরা, সরকারের প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী, গবেষক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ‘খাবার, বিদ্যুৎ, পানি- অপচয় থামান এখনই’-এর মতো নানা স্লোগান নিয়ে ৫০ জন সাইক্লিস্ট ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ নভেম্বর ২০১৭/হাসান/মুশফিক