জাতীয়

বিজয় দিবসের ব্যাপক প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এ দিনটি বাঙালি জাতির শৌর্য-বীর্য আর বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃতে ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হয়ে আসছে। এবার বিজয়ের ৪৬তম বার্ষিকী। দিবসটি পালনের জন্য প্রতিবছরের মতো এ বছরও ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। বর্ণিলভাবে সাজানো হয়েছে বিজয়ের সাজে। জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, দিবসটি উদযাপনের জন্য ধোয়া-মোছা থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামীকাল জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে সেই সব বীর সন্তানকে যারা একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্য পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, সারাদেশে আগামীকাল উড়বে বিজয়ের পতাকা। সারাদেশের মানুষ অংশ নেবে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে। রাজধানীর মতো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বঙ্গবন্ধুর বজ্রনিনাদ ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের জাগরণী গানে আকাশ-বাতাস হবে মুখরিত। বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার রাড়ীপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মেহেদি হাসান বাবু বলেন, আমরা বিজয় দিবস পালনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। শ্রদ্ধা জানানোর পর র‌্যালিতে অংশ নেব। এছাড়া আজ রাত থেকেই মাইকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ চালানো হবে। কাল সারাদিনও তা চলবে। সেই সঙ্গে বিজয়ের কবিতা ও সংগীত বাজানো হবে। দিবসটি ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরও বয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। কোথাও যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সতর্ক থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মহান বিজয় দিবসে উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন হলেও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে এবং এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে। এর মধ্যে আছে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ ডিসেম্বর ২০১৭/সাওন/মুশফিক