জাতীয়

দেশে আরো দুটি বিমান ঘাঁটি হবে : প্রধানমন্ত্রী

রাইজিংবিডি ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে একটি অত্যাধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলায় তার সরকারের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে বলেছেন, বিমানবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধিতে শিগগিরই দেশে আরো দুটি বিমান ঘাঁটি গড়ে তোলা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত দিক থেকে অচিরেই জাতির পিতার কাঙ্ক্ষিত অত্যাধুনিক, পেশাদার ও চৌকস বিমানবাহিনী হিসেবে দেশে ও বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে, ইনশাআল্লাহ্।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বরিশাল ও সিলেটে নতুন দুটি বিমানবাহিনী ঘাঁটি স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আমার বিশ্বাস, এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী আরো শক্তিশালী হবে এবং এর সক্ষমতা বাড়বে।’ রোববার দুপুরে যশোরে বিমানবাহিনী একাডেমিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ৭৪ তম বাফা কোর্স ও ডিরেক্ট এন্ট্রি ২০১৭ কোর্সের কমিশন উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০১৭ (শীতকালীন) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি বিমানবাহিনীতে সংযোজিত কে-এইট ডব্লিউ জেট ট্রেনার, ওয়াই এ কে-১৩০ কমব্যাট ট্রেনার এবং এল-৪১০ ট্রান্সপোর্ট ট্রেনার এই বাহিনীর উড্ডয়ন প্রশিক্ষণকে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, বিমানবাহিনী একাডেমির পুনর্গঠিত সাংগঠনিক কাঠামোরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বিমানবাহিনী ক্যাডেটদের দেশ ও জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিমানবাহিনী একাডেমি থেকে যে মৌলিক প্রশিক্ষণ তোমরা গ্রহণ করেছ, কর্মজীবনে তার যথাযথ অনুশীলন ও প্রয়োগের জন্য সব সময় সচেষ্ট থাকবে। সততা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, তোমরা নিজেদের এমনভাবে গড়ে তুলবে, যাতে তোমরা দেশ ও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষণ শেষ করার পর আজ থেকে শুরু হচ্ছে তোমাদের বৃহত্তর কর্মজীবন। প্রিয় মাতৃভূমি রক্ষার গুরুদায়িত্ব পালনে আজ থেকে তোমরাও অংশীদার। আমি আশা করি, দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে এবং পবিত্র সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তোমরা বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সঙ্কল্পবদ্ধ থাকবে। শেখ হাসিনা ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা অর্জনে ক্যাডেটদের সর্বদা সচেষ্ট থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, মনে রাখবে, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। তিনি বলেন, তোমরা এ দেশেরই সন্তান। নিজেদের কখনই সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন ভাববে না। তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সব সময় চেষ্টা করবে। তার সরকারের সময়ে বিমানবাহিনীর অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানবাহিনী একাডেমির জন্য আন্তর্জাতিক মানের ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এই কমপ্লেক্সের কাজ শেষ হলে বিমানবাহিনী একাডেমির কর্মপরিধি বৃদ্ধিসহ প্রশিক্ষণের মান আরো বাড়বে। তাছাড়া এই একাডেমির প্রশিক্ষণ আধুনিকায়ন ও ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটানোর জন্য নতুন স্থাপনা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তার সরকার সচেষ্ট রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, এসব উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একাডেমি শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম বয়ে আনতে সক্ষম হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মাত্র তিনটি বিমান নিয়ে যে বাহিনীর জন্ম, সে বাহিনী আজ অত্যাধুনিক বিমান, আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি বিমান রক্ষণাবেক্ষণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ। দেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- বঙ্গবন্ধু প্রণীত এই নীতির আলোকে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। আর্থ-সামাজিক খাতে আমরা দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করেছি। এই অর্জনকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। তিনি দৃঢ় সংকল্প ব্যাক্ত করে বলেন, ইনশাআল্লাহ, সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের উদ্দেশে বলেন, এই মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজে পুরুষদের পাশাপাশি নারী ক্যাডেটদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে আমি সত্যিই আনন্দিত ও গর্বিত। তাদের এই কমিশনপ্রাপ্তি বর্তমান সরকারের নারীর ক্ষমতায়নের দৃঢ় নীতিরই প্রতিফলন। আমরা বিশ্বাস করি জাতীয় অগ্রগতিতে নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এজন্য সশস্ত্র বাহিনীতেও নারীদের ব্যাপকহারে অংশগ্রহণের ব্যাপারে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন দেশের মান উপডেযাগী একটি বিমানবাহিনী গড়ে তোলায় জাতির পিতার উদ্যোগের কথা স্মরণ করে বলেন, স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি শক্তিশালী এবং প্রশিক্ষিত সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলার জন্য জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সামরিক কৌশলগত দিক বিবেচনায় রেখে তিনি একটি আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে সে সময়কার অত্যাধুনিক মিগ-২১ জঙ্গি বিমান, এমআই-৮ হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রন, এএন-২৪ পরিবহন বিমান এবং রাডার বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে সংযোজন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫-এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সশস্ত্রবাহিনীর উন্নয়নে কেউ কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা বিমানবাহিনীকে আরো  আধুনিক ও যুগোপযোগী করার কার্যক্রম হাতে নিই। আমরা ২০০০ সালে বিমানবাহিনীতে ৪র্থ প্রজন্মের অত্যাধুনিক মিগ-২৯ জঙ্গি বিমান, বড় পরিসরের সি-১৩০ পরিবহন বিমান এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার সংযোজন করি। ২০০০ সালে আমরাই সর্বপ্রথম সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের কমিশন্ড অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া শুরু করি। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সদস্যদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জাতির যে কোন প্রয়োজনে ভূমিকা রাখতে সদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ-বিদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা, উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণে আমাদের বিমানবাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর তাৎপর্যপূর্ণ অবদান বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং স্বাধীনতার পর দেশ ও জাতির কল্যাণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবছর বিমানবাহিনী স্বাধীনতা পদক পেয়েছে। বিমানবাহিনী দেশের এ সর্বোচ্চ পদক অর্জন করায় তিনি বিমানবাহিনীর সকল সদস্যের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন জানান। রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ- ২০১৭-এ ৭৪ তম বাফা কোর্সের ৬৮ জন ফ্লাইট ক্যাডেট এবং ডিরেক্ট এন্ট্রি ২০১৭ কোর্সের ১১ জনসহ মোট ৭৯ জন কমিশন লাভ করেছেন। এদের মধ্যে ১৩ জন মহিলা ক্যাডেটও কমিশন লাভ করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিমানবাহিনীর পাসিং আউট ক্যাডেটদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন। তিনি অনুষ্ঠানে ক্যাডেটদের মধ্যে ট্রফি, সার্টিফিকেট এবং ফ্লাইং ব্যাজ বিতরণ করেন। ফ্লাইট ক্যাডেট একাডেমি আন্ডার অফিসার আহম্মেদ মুসা কমান্ড্যান্ট হিসেবে প্যারেড পরিচালনা করেন। পরে বিমানবাহিনী এয়ারক্র্যাফটের মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্টও প্রত্যক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিমানবাহিনী একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার এবং বিমানবাহিনী একডেমির কমান্ড্যান্ট এয়ার কমডোর এ এস এম ফখরুল ইসলাম তাকে স্বাগত জানান। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, জাতীয় সংসদ সদস্য, সেনা ও নৌবাহিনী প্রধান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন মিশনের কূটনৈতিক, অবসরপ্রাপ্ত বিমানবাহিনী প্রধান, আমন্ত্রিত অতিথি এবং কমিশনপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের অভিভাবকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তথ্যসূত্র : বাসস রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ ডিসেম্বর ২০১৭/সাইফ