জাতীয়

রোববার পিলখানা হত্যা দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২৫ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো দিন। ২০০৯ সালের এই দিনে বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদরদপ্তর পিলখানায় মর্মান্তিক ও নৃশংস ঘটনা ঘটে। সদরদপ্তরের দরবার হলে সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে ফোর্সের কিছু বিদ্রোহ সৈনিক মহাপরিচালকের বুকে অস্ত্র তাক করেন। ওই সময় বিদ্রোহী সদস্যরা তাৎক্ষণিক কয়েকজন সেনাসদস্যকে হত্যা করেন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করেন ফেলেন। পিলখানার সবকটি প্রবেশপথ নিয়ন্ত্রণে নেন বিজিআরের বিদ্রোহী সদস্যরা। তারা চারদিকে গুলি ছুড়তে থাকেন। এতে শুধু ওই এলাকা নয়, গোটা দেশে সৃষ্টি হয় এক ভীতিকর পরিবেশ। জন্ম নেয় এক বীভৎস ঘটনার। ৩৬ ঘণ্টা পর এ বিদ্রোহের অবসান ঘটলেও ততক্ষণে বিদ্রোহী সৈনিকরা কেড়ে নেয় ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তার জীবন। পিলখানা পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তরে। ঘটনার পর পিলখানা থেকে আবিষ্কৃত হয় গণকবর। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের লাশ। মাত্র ৩৬ ঘণ্টার এই হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তা, একজন সৈনিক, দুইজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, নয়জন বিডিআর সদস্য ও পাঁচজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ফোর্সের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। পরে এটিকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু হলে নাম, পোশাক, লোগো, সাংগঠনিক কাঠামো, পদোন্নতি ইত্যাদি ব্যাপারে নতুনত্ব এনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নামে সীমান্ত রক্ষী ফোর্সের জন্ম হয়। পরিবর্তন করা হয় বিডিআর বিদ্রোহের আইন। বর্ডার গার্ড আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়। বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর লালবাগের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিশেষ আদালত ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৬৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জন ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় দেন। এ ছাড়া ২৭১ জনকে খালাস দেওয়া হয়। পরে মামলা উচ্চ আদালতে যায়। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখা হয়। আটজনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় দুইজনের মৃত্যু হয়। খালাস পান ১২ জন আসামি। নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ যে আপিল করেছিল, তার মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া, সাত বছর করে চারজনকে কারাদণ্ড এবং ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রাখা হয়। এ মামলার সাড়ে ৮০০ আসামির মধ্যে আরো ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন জজ আদালত। এর মধ্যে ১৮২ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, আটজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড, চারজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ২৯ জনকে খালাস দেন হাইকোর্ট। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সরকারিভাবে এ দিন ‘পিলখানা হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এ জন্য দুই দিনব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি পালন করবে বিজিবি। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদরদপ্তর, পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে শহীদ ব্যক্তিবর্গের স্মরণে আগামীকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি শাহাদাত বার্ষিকী পালিত হবে। দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদ ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানাসহ বিজিবির সকল রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন, বিজিবির সকল মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ ছাড়া ২৬ ফেব্রুয়ারি বাদ আসর সোয়া ৫টায় পিলখানায় বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদ ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, শহীদ ব্যক্তিবর্গের নিকটাত্মীয়গণ, পিলখানায় কর্মরত সকল অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবির সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করবেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/নূর/সাইফুল